ক্রীড়া ডেস্ক:
একাধারে একই গতি ও শক্তি ধরে রেখে বল করেন নাহিদ রানা। ২২ বছর বয়সি এই পেসার এমন চমক দেখিয়েছেন যে, ক্রিকেট বিশ্বের নজর পড়েছে তার ওপর। বিভিন্ন দেশ থেকে নাহিদের প্রশংসা নিয়মিত শোনা যাচ্ছে। বিপিএল খেলতে এসে ভিন্ন দলের বিদেশি তারকারাও প্রশংসায় ভাসাচ্ছেন এই পেসারকে। তবে সেসবে কান দিচ্ছেন না তিনি। কেবল নিজের খেলার ওপর নজর রেখেছেন।
বর্তমানে খেলার চাপ এত বেশি যে, যখন-তখন ইনজুরিতে পড়ার শঙ্কা রয়েছে। নাহিদ রানা সেটি জানেন। তার মতে, যুদ্ধে নামলে গুলি খেতেই হয়। ক্রিকেট খেললে ইনজুরিও তার চোখে স্বাভাবিক ঘটনা। তবে নিজেকে ঠিক রেখে ২২ গজের লড়াই চালিয়ে যেতে চেষ্টা করছেন।
গতকাল সিলেটে টানা পঞ্চম জয় তুলে নিয়েছে রংপুর রাইডার্স। জয়ের নায়ক নাহিদ রানা। চার ওভারে মাত্র ২১ রান দিয়ে তুলে নিয়েছেন তিন উইকেট। তাতে এক রানেতেই কুপোকাত দশা হয়েছে ঢাকা ক্যাপিটালসের। এ দিন ঢাকা টানা চার হারের লজ্জায় ডুবেছে। কোনোভাবেই তারা কাঙ্ক্ষিত জয়ের দেখা পাচ্ছে না। দলটিতে গতকাল ছয়টি পরিবর্তন এনেও কাজের কাজটি হয়নি। ম্যাচে নামার আগে দুদিন ধরে কঠোর অনুশীলন করেছেন খালেদ মাহমুদ সুজনের শিষ্যরা। কিন্তু সেটিতেও জয়খরা কাটেনি।
এমন হারের পরে ঢাকায় নতুন যুক্ত হওয়া অলরাউন্ডার মোসাদ্দেক হোসেন সৈকত বলেছেন, ‘আমরা একটি মোমেন্টামের অপেক্ষায় রয়েছি। একটি জয় পেলে পেছনের হতাশা কেটে যাবে।’ দলের ব্যাটিং ভালো হচ্ছে না, ফিল্ডিংয়েও যাচ্ছেতাই অবস্থা। পরপর হারের কারণে কিছুটা চাপও তৈরি হয়েছে ঢালিউড সুপারস্টার শাকিব খানের দলটির ওপর। এই চাপ থেকে বের হওয়ার জন্য জয়ের বিকল্প দেখছেন না সৈকত। একাদশ বিপিএলে শুরুতে দল পাননি তিনি। তিন ম্যাচ পার হওয়ার পর ঢাকা তাকে দলে ভিড়িয়েছে। শুরুতে দল না পাওয়া ও তার প্রতি আগ্রহ কমার কারণে জেদ তৈরি হয় সৈকতের মনে। সেই জেদ থেকে ভালো কিছু করে নিজেকে প্রমাণ করতে চান।
তবে মঙ্গলবারের চেষ্টায় ব্যর্থ হয়েছেন সৈকত। ব্যাট হাতে ৯ বলে মাত্র ১২ রান করেছেন, আউট হয়েছেন দলের গুরুত্বপূর্ণ সময়ে। তাদের দলও চলতি বিপিএলের সর্বনিম্ন রান পেয়েছে। উড়তে থাকা রংপুরকে তারা মাত্র ১১২ রানের চ্যালেঞ্জ দিয়েছিলেন। ১৪তম ওভার শেষ হওয়ার আগেই সেই চ্যালেঞ্জ পার করেছে নুরুল হাসান সোহানের দল। অবশ্য ঢাকার পতনের মূলে ছিল রংপুরের শক্তিশালী বোলিং লাইনআপ। যেখানে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন নাহিদ রানা।
ম্যাচ শেষে সংবাদ সম্মেলনে এসে দল ও নিজেকে নিয়ে কথা বলেছেন নাহিদ রানা। তাকে নিয়ে বিশ্ব ক্রিকেটে যে স্তুতিবাক্য চলে, তা কানে নেন না নাহিদ। কে কী বলছে, সেগুলো শোনার চেষ্টা করেন না বলে জানিয়েছেন। কেউ প্রশংসা করলে তাতে মনোনিবেশ করার প্রয়োজন মনে করেন না তিনি। কেবল নিজের খেলাটা চালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করেন। সবশেষ ফরচুন বরিশালের পাকিস্তানি পেসার শাহিন শাহ আফ্রিদির মুখে শোনা গেছে নাহিদ রানার নাম। এটি জানার পর তেমন কোনো প্রতিক্রিয়া নেই তার মধ্যে। নিজেকে তারকাও মনে করেন না নাহিদ। এসব থেকে দূরে থাকার চেষ্টা করেন বলে জানিয়েছেন তিনি।
পেসারদের মধ্যে ইনজুরি-প্রবণতা কিছুটা বেশি থাকে। তাসকিন আহমেদ, মুস্তাফিজুর রহমান এ কারণে বেশ ভুগেছেন। বাংলাদেশের অন্যান্য পেসারের মধ্যেও ইনজুরির লক্ষণ বেশি। এ কারণে নাহিদ রানাকে নিয়ে ভয়টাও বেশি। যারাই তাকে নিয়ে কথা বলেছেন, তারাই নাহিদের বিশেষ যতœ নেওয়ার প্রতি গুরুত্বারোপ করেছেন। নাহিদ অতশত ভাবতে চান না। পেসার হিসেবে তিনি ইনজুরিতে পড়তেই পারেন, বিষয়টি তার কাছে স্বাভাবিক। একজন যোদ্ধা যেমন জীবনের ঝুঁকি নিয়ে যুদ্ধে যান, নিজেকেও তেমন মনে করেন ডানহাতি এই পেসার। তবে তাকে নিয়ে ঝুঁকি নিতে চায় না রংপুর কিংবা বাংলাদেশ জাতীয় দল। ফিজিও বায়েজিদুল ইসলাম ও ইফতেখার মাহমুদ ইফতি তার খোঁজ-খবর রাখছেন। তাদের দেওয়া পরামর্শ মেনেই নাহিদ রানা খেলা ও অনুশীলন চালিয়ে যাচ্ছেন। আর নিজের শরীর যে ঠিক রয়েছে, সেটি নাহিদ নিজেই বুঝতে পারেন বলে জানিয়েছেন।