মুক্তি পেয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে ঘর চাইলেন জল্লাদ শাহজাহান

প্রকাশিত: ৫:১০ অপরাহ্ণ, জুন ১৮, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদকঃ

কারাগারে ২৬ জনকে ফাঁসির দড়িতে ঝোলানো জল্লাদ শাহজাহান ভূঁইয়া ৩২ বছর সাজা ভোগের পর মুক্তি পেয়েছেন। রোববার (১৮ জুন) কেরানীগঞ্জের ঢাকা কেন্দ্রীয় কারাগার থেকে মুক্তি পান তিনি। কারাগার থেকে বের হয়ে প্রধানমন্ত্রীর কাছে কর্মসংস্থান ও মাথার গোঁজার ঠাঁই হিসেবে একটি ঘর চেয়েছেন তিনি।

সাংবাদিকদের তিনি বলেন, আমি অপরাধ করেছিলাম তাই জেলে গিয়েছি; সাজা ভোগ করেছি। এখন যেন নতুন করে মায়ের গর্ভ থেকে ভূমিষ্ঠ হয়েছি! অতীতের সব কিছু ভুলে গেছি। এখন কীভাবে ভালোভাবে চলতে পারবো, কীভাবে থাকতে পারবো, সে বিষয়ে প্রধানমন্ত্রী সহায়তা করবেন বলে আশা করছি।
জেল থেকে বের হয়ে কোথায় যাবেন এমন প্রশ্নের জবাবে কান্নাজড়িত কণ্ঠে জাহজাহান বলেন, এত বছর জেল খাটার পর আমার কিছুই নেই। বাড়িও নেই, ঘরও নেই। জেল থেকে বের হয়ে আমি এখন নিজের বাড়িতে যাচ্ছি না। আমি অন্যের বাড়িতে গিয়ে উঠছি।
তিনি আরও বলেন, আমার বয়স এখন ৭৪ বছর হতে চলেছে। তাহলে আমি কী করে খাবো, কোথায় যাবো, কী করবো? তাই প্রধানমন্ত্রীর কাছে একটাই আবেদন, আমার যেন কোনো কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেন, একটা বাড়ি দিয়ে থাকার জায়গা করে দেন।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান হত্যা মামলায় মৃত্যুদণ্ডপ্রাপ্ত বজলুল হুদা, আর্টিলারি মুহিউদ্দিন, সৈয়দ ফারুক রহমান, সুলতান শাহরিয়ার রশিদ খান, ল্যান্সার মহিউদ্দিন আহমেদ, ক্যাপ্টেন আবদুল মাজেদ, যুদ্ধাপরাধী কাদের মোল্লা, মুহাম্মদ কামারুজ্জামান, আলী আহসান মোহাম্মদ মুজাহিদ, সালাহ উদ্দিন কাদের (সাকা) চৌধুরী, মতিউর রহমান নিজামী, মীর কাসেম আলী, কুখ্যাত সন্ত্রাসী এরশাদ শিকদার, জঙ্গি নেতা বাংলাভাই, আতাউর রহমান সানী, শারমীন রীমা হত্যার আসামি মনির, ডেইজি হত্যা মামলার আসামি হাসানসহ বাংলাদেশের আলোচিত ২৬ জনের ফাঁসি কার্যকর করেছেন শাহজাহান।

আলোচিত এই ফাঁসিগুলো দেয়ার পর নিরাপত্তা বোধ করছেন কি না- এমন প্রশ্নে তিনি তিনি বলেন, এখানে তো আমার কোনো ক্ষমতা নেই। আমার কিছু করারও নেই। আদালত এই আদেশ দিয়েছেন। বরং এসব অপরাধীদেরকে ফাঁসি দিতে পেরে অনুভূতি ভালোই লেগেছে। কারণ আমি যখন জেলের বাইরে ছিলাম, তখন স্বাধীনতা সংগ্রামটা দেখেছি। তারা যদি অন্যায় করে থাকেন, তবে তো আমার খারাপ লাগার কথা না।
‘আমি সাহসী ছিলাম বিধায় আমাকে জল্লাদের কাজটা দেয়া হয়েছিল। কয়েদি আমি না থাকলে অন্যজন সেই কাজটা করতেন। আমার পরিবর্তে যে এসেছেন বা ইতোপূর্বে যে ছিলেন, তারাও সেই কাজটা করে গেছেন’, যোগ করেন শাহজাহান।
জানা গেছে, ১৯৯১ সালে মানিকগঞ্জের একটি মামলায় শাহজাহানকে গ্রেফতার করে মানিকগঞ্জ জেলা কারাগারে রাখা হয়। এরপর দেশের বিভিন্ন জেলে রাখা হয় তাকে। তার মোট ৪২ বছর সাজা হয়েছিল। এর মধ্যে ফাঁসি কার্যকর করে তিনি ১০ বছর ৫ মাস ২৮ দিনের সাজা রেয়াত পেয়েছেন। প্রায় ৩২ বছরের সাজা শেষে রোববার তিনি মুক্তি পেলেন।