পাঁচ মাসেও পুরোপুরি চালু হয়নি গোড়াই হাইওয়ে থানা

প্রকাশিত: ৪:২০ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ১৪, ২০২৫

 

টাঙ্গাইল প্রতিনিধি:

কোটা সংস্কার বৈষম্যবিরোধী এক দফা আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট দুর্বৃত্তদের হামলা, ভাংচুর ও লুটপাটের পর আগুনে পুড়িয়ে দেওয়ার পর টাঙ্গাইলের মির্জাপুরে গোড়াই হাইওয়ে থানা এখন ধ্বংসস্তূপে দাড়িয়ে আছে।

গত পাঁচ মাস পেরিয়ে গেলেও এই থানার সেবা কার্যক্রম পুরোপুরি চালু করা সম্ভব হয়নি। হাইওয়ে থানার চার পাশে বাউন্ডারী ওয়াল না থাকা এবং যানবাহন সরবরাহ না থাকায় চরম নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছেন এই থানায় কর্মরত হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা।

মঙ্গলবার (১৪ জানুয়ারি) ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক সংলগ্ন সোহাপাড়া এলাকায় গোড়াই হাইওয়ে থানা চত্বর ঘুরে দেখা গেছে পুরো থানা প্রাঙ্গণ এক অন্য রকম পরিবেশ। চার পাশে শুনশান নীরবতা। নিরাপত্তাহীনতার মধ্যেও গোড়াই হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা তাদের দায়িত্ব পালনের চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন। তাদের মধ্যে নেই কোন প্রাণ চাঞ্চল্য।

গোড়াই হাইওয়ে থানার কয়েকজন পুলিশ সদস্য জানান, কোটা সংস্কার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় গত ৪ আগস্ট অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীদের সঙ্গে ধাওয়া পাল্টা ধাওয়া হলে ওসির কক্ষ, পুলিশ ব্যারাক, নারী পুলিশ ব্যারাক, অফিস কক্ষসহ একতলা থেকে তিন তলা পর্যন্ত প্রতিটি কক্ষ গানপাউডার দিয়ে পুড়িয়ে দেওয়া হয়েছে। ঐ দিনের ঘটনার প্রত্যক্ষদর্শীদের মধ্যে গোড়াই সোহাগপাড়া এলাকার বাবুল সিকদার, আশরাফ সিকদারসহ অন্তত ১০ জন ব্যক্তি জানায়, এমন দৃশ্য জীবনে কখনো তারা দেখেননি।

গত ৪ আগস্ট দুপুরের পর থেকে গভীর রাত পর্যন্ত অস্ত্রধারী সন্ত্রাসীরা থানায় নাটকীয় ভাবে হামলা, লুটপাট ও অগ্নিসংযোগ করে গোড়াই হাইওয়ে থানায়। ৫০০/৬০০শ জনের একটি সন্ত্রাসী বাহিনী হাতে দেশীয় অস্ত্র ও লাঠিসোটা নিয়ে গোড়াই হাইওয়ে থানায় হামলা ও অগ্নিসংযোগ করে। এ সময় পুলিশ সদস্যরা আত্মরক্ষার জন্য সাউন্ড গ্রেনেড, টিয়ার সেল, কাঁদানে গ্যাস ও ফাঁকা গুলি ছুড়ে। হামলাকারীরা পুলিশকে লক্ষ্য করে ইট পাটকেল, পাল্টা গুলি, ককটেল বিস্ফোরণ করে আতংক সৃষ্টি করে। থানায় আগুন দিয়ে পুলিশের ৪ টি গাড়িসহ বিভিন্ন দুর্ঘটনায় জব্দকৃত অন্ততপক্ষে ৩০-৪০ টি যানবাহন পুড়িয়ে দেয়। হামলায় সাবেক ওসি আদিল মাহমুদ, এসআই আনিসুজ্জামান, এএসআই জাহাঙ্গীরসহ ১০ জন পুলিশ সদস্য আহত হয়েছিলেন।

এ ব্যাপারে মির্জাপুর থানার বর্তমান ওসি (তদন্ত) ও ঐ সময়ের ভারপ্রাপ্ত অফিসার ইনচার্জ মো. সালাউদ্দিন মিয়া এবং উপপরিদর্শক মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, গোড়াই হাইওয়ে থানায় দুর্বৃত্তরা হামলা, ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগের পর ব্যাপক লুটপাট চালায়। আত্মরক্ষার জন্য হাইওয়ে থানার পুলিশ সদস্যরা মির্জাপুর থানায় আশ্রয় নিয়েছিলেন। তার পর হামলাকারী দুর্বৃত্তরা মির্জাপুর থানায় হামলার চেষ্টা করেছিলো। গোড়াই হাইওয়ে থানায় ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। থানা ও যানবাহন পুড়িয়ে ফেলায় এখনও ঘুরে দাড়াতে পারেনি গোড়াই হাইওয়ে থানার সেবা কার্যক্রম। এলাকাবাসীর সার্বিক সহযোগিতায় হামলা হতে পারেনি মির্জাপুর থানায়। তবে সবচেয়ে বেশী সহযোগিতা করেছিলেন স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মীরাও। ঘটনার পর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী জিওসিসহ ঊর্ধ্বতন সেনাকর্মকর্তা, ঢাকা রেঞ্জের হাইওয়ে থানার ও পুলিশের ডিআইজি, টাঙ্গাইলের পুলিশ সুপারসহ ঊর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তাগণ গোড়াই হাইওয়ে থানা এবং মির্জাপুর থানা পরিদর্শন করেন।

এ ব্যাপারে গোড়াই হাইওয়ে থানার ওসি মাসুদ খান বলেন, কোটা সংস্কার বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনের সময় হামলাকারীরা পুরো গোড়াই হাইওয়ে থানা পুড়িয়ে দিয়ে লুটপাট করেছে। ২৯ জন পুলিশ সদস্য নিয়ে টাঙ্গাইল পুলিশ সুপারের কার্যালয়, মির্জাপুর থানা ও পুলিশ লাইনে আশ্রয় নিয়েছিলেন। পুড়িয়ে ফেলেছে পুলিশের চারটি পিকআপ ভ্যান, ব্যবহৃত মোটর সাইকেল ও বিভিন্ন মামলায় জব্দকৃত গাড়িসহ ৩০-৪০ যানবাহন। মামলার সমস্ত আলামত পুড়িয়ে নষ্ট করে দেওয়া হয়েছে। কোটি কোটি টাকার ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। থানায় থাকার মত এখন পর্যন্ত পরিবেশ নেই। পুন-সংস্কার, চার পাশে বাউন্ডারি ওয়াল নির্মাণ ও থানসহ ঢাকা-টাঙ্গাইল মহাসড়ক দেখাশোনার জন্য যানবাহন সরবরাহ করা না হলে গোড়াই হাইওয়ে থানায় কার্যক্রম পরিচালনা করা সম্ভব হবে না। তাদের খুব কষ্ট হচ্ছে। বিষয়টির দিকে দ্রুত ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য প্রধান উপদেষ্টাসহ ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষের নিকট জোর দাবী জানিয়েছেন এই পুলিশ কর্মকর্তা।