খাগড়াছড়ির একমাত্র শহিদ মজিদের পরিবারের দিন কাটে দু:খ-কষ্টে
জুলাই-আগস্ট গণঅভ্যুত্থান
খাগড়াছড়ি প্রতিনিধি:
খাগড়াছড়ির রামগড়ের পাতাছড়ার প্রত্যন্ত গ্রাম রসুলপুরের বাসিন্দা মো. মজিদ হোসেন (১৬)। পিতা মতিন মিয়া অসুস্থতায় শারীরিকভাবে অক্ষম। মজিদ পিতার মেজো ছেলে। বড় ভাই মহিন পরিবহন শ্রমিক। তার স্বল্প আয়ে দরিদ্র পরিবারের ঠিকমত আহার জুটতো না। এ অবস্থায় কিশোর মজিদ লেখাপড়া ছেড়ে ২০২৪’র মে মাসে চট্টগ্রামে গিয়ে ট্রাকের হেলপার হিসেবে চাকরি নেয়। দুই ভাইয়ের আয়ে বাবা, মা ও ছোট ভাইকে নিয়ে কোন রকমে চলতো পরিবারটি।
এরিমধ্যে শুরু হয় বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার আন্দোলন। ১৯ জুলাই চট্টগ্রাম থেকে ভাড়ায় মালামাল নিয়ে ট্রাকে করে মজিদ চলে যায় চাঁদপুরের হাজীগঞ্জে। ঐদিনই মালামাল আনলোড করে খালি ট্রাক নিয়ে চট্টগ্রামের উদ্দেশ্যে রওনা দেয় তারা। হাজীগঞ্জ রেললাইন পার হতেই আটকা পড়ে তাদের গাড়ি। এ সময় অগ্নি সংযোগ করা হয় ট্রাকে। কিছু বুঝে উঠার আগেই দাউ-দাউ করে আগুনে ভস্মীভূত হয় ট্রাকটি। গাড়িতেই অগ্নিদগ্ধ হয় কিশোর মজিদ। স্থানীয়রা তাকে উদ্ধার করে প্রথমে ভর্তি করায় হাজীগঞ্জ হাসপাতালে। আশংকাজনক অবস্থায় ২০ জুলাই তাকে পাঠানো হয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। ২৫ জুলাই চট্টগ্রাম মেডিকেলে মারা যায় মজিদ। চিকিৎসকরা জানায় আগুনে তার শরীরের ৮০ ভাগই দগ্ধ হয়েছিল।
২৬ জুলাই তার মরদেহ দাফন করা হয় গ্রামের কবরস্থানে। ২০২৪ এর জুলাইয়ে গণ অভ্যুত্থানে খাগড়াছড়ি জেলার একমাত্র শহিদ কিশোর মজিদ হোসেন। দরিদ্র পরিবারের হালধরা কিশোর মজিদের মৃত্যুতে দিশেহারা হয়ে পড়েন তার অসুস্থ বাবা, মা। এ অবস্থায় মজিদের বড় ভাই মহিনও চাকুরী হারায় পরিবহন থেকে। সে জানায়, একটি কোম্পানির কাভার্ডভ্যানের ড্রাইভার পদে চাকুরী করতেন তিনি। ড্রাইভিং লাইসেন্স নবায়ন করতে না পরায় তিনি চাকুরী হারান। এখন গ্রামের বাড়িতে দিনমজুরের কাজ করে অসুস্থ বাবা, মা ও ছোট ভাই নিয়ে অতিকষ্টে দিন কাটাচ্ছেন।
তিনি জানান, মজিদের মৃত্যুর পর সরকারিভাবে যে টাকা পেয়েছেন সেগুলো দিয়ে একটু জায়গা কিনেছেন। কারণ আগে অন্যের জায়গায় থাকতে হতো তাদের।
মহিন বলেন, ‘ড্রাইভার পদে একটা চাকুরি পেলে বাবা, মা, ভাইকে নিয়ে একটু ভালভাবে চলতে পারতাম। ছোট ভাইকে লেখাপড়া করাতে পারতাম।’
এদিকে, খাগড়াছড়ির নবাগত জেলা প্রশাসক এবিএম ইফতেখারুল ইসলাম খন্দকার সোমবার(২০ জানুয়ারি) রামগড়ের প্রত্যন্ত পাতাছড়া ইউনিয়নের রসুলপুর গ্রামে শহিদ মো: মজিদ হোসেনের পৈতৃকবাড়িতে গিয়ে দরিদ্র পরিবারটির জন্য সম্ভব সব ধরণের সহযোগিতার প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন। খাগড়াছড়িতে গত বুধবার যোগদান করার পর তিনি সোমবার শহিদের শোকাহত বাবা, মাসহ পরিবারের প্রতি সমবেদনা জানাতে প্রত্যন্ত এলাকায় তার গ্রামের বাড়িতে ছুটে যান। জেলা প্রশাসককে কাছে পেয়ে শহিদ মজিদের দরিদ্র পিতা আমিন মিয়া ও মা মনোয়ারা বেগম কান্নায় ভেঙ্গে পড়েন। জেলা প্রশাসক দরিদ্র পরিবারটিকে সাবলম্বি করতে সম্ভব সব ধরণের সহযোগিতা দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেন। এছাড়া শহিদ মজিদের বাড়িতে যাওয়ার রাস্তার উন্নয়ন ও তাঁর কবর সংরক্ষণের উদ্যোগ নেওয়ার কথা জানান। শহিদের বাবা, মা’র হাতে নগদ আর্থিক সহায়তাও করেন। পরে স্থানীয় কবরস্থানে শহিদ মো: মজিদ হোসেনের কবর জিয়ারত ও দোয়া করেন জেলা প্রশাসক। এসময় রামগড় উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মমতা আফরিন ও ছাত্র প্রতিনিধি মো: ইকবাল হোসেন ও মিজানুর রহমান মামুনসহ অন্যান্যরা উপস্থিত ছিলেন।