নজরুল বিশ্ববিদ্যালয়ে ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীর সনদ বাতিল, বহিষ্কার

প্রকাশিত: ১:০৩ অপরাহ্ণ, জানুয়ারি ২২, ২০২৫

ময়মনসিংহ প্রতিনিধি:

 

ময়মনসিংহের ত্রিশালে অবস্থিত জাতীয় কবি কাজী নজরুল ইসলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে দুই পক্ষের সংঘর্ষে সাংবাদিক মারধরের ঘটনায় নিষিদ্ধ ছাত্রলীগের ১৬ নেতাকর্মীর সনদ বাতিল, স্থায়ী বহিষ্কার, সনদ স্থগিত ও বহিষ্কার করা হয়েছে।

মঙ্গলবার দুপুরে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার প্রফেসর মিজানুর রহমান স্বাক্ষরিত এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে এই তথ্য নিশ্চিত করা হয়। এর আগে তদন্ত কমিটির সুপারিশের পরিপ্রেক্ষিতে গত ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় এই সিদ্ধান্ত গৃহীত হয়।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় থেকে শাস্তিমূলক ব্যবস্থার চিঠি জারি করা হয়। এতে চারজনের সনদ বাতিল, একজনকে স্থায়ী বহিষ্কার, দুজনের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত, নয়জনকে বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার করা হয়েছে।

বিশ্ববিদ্যালয়ের রেজিস্ট্রার কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, গত বছরের ৫ ফেব্রুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের অগ্নিবীণা হলে আসন বরাদ্দকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগের দুই পক্ষে সংঘর্ষ হয়। শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাঈম আবদুল্লাহর (যাযাবর নাঈম) অনুসারীদের সঙ্গে মাহফুজুর রাজ্জাকের (অনিক) অনুসারীদের সংঘর্ষ হয়। সংঘর্ষের তথ্য সংগ্রহে গিয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে কর্মরত দুজন সাংবাদিক আহত হয়েছিলেন। এ ঘটনায় বঙ্গবন্ধু হলের প্রাধ্যক্ষ মাসুম হাওলাদারকে আহ্বায়ক, ছাত্র পরামর্শ ও নির্দেশনা দপ্তরের পরিচালক মোহাম্মদ মেহেদী উল্ল্যাহকে সদস্য এবং প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যের তদন্ত কমিটি করেছিল প্রশাসন। কমিটির প্রতিবেদনে ভিত্তিতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর শৃঙ্খলা কমিটির সুপারিশ ও ১৬ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৮৭তম সিন্ডিকেট সভায় অভিযুক্ত শিক্ষার্থীদের বিরুদ্ধে বিভিন্ন শাস্তিমূলক ব্যবস্থা নেওয়া হয়।

শাস্তি পাওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে ফোকলোর বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক সহসভাপতি নাঈম আবদুল্লাহকে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার করা হয়েছে। আইন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সাবেক উপকর্মসংস্থানবিষয়ক সম্পাদক জয় মোড়লের স্নাতকের সনদ বাতিল, ইংরেজি বিভাগের ২০১৫-১৬ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের সাবেক উপদপ্তর সম্পাদক লোবন মোখলেছুরের স্নাতকোত্তর সনদ বাতিল, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী তানভীর আহমেদের স্নাতকের সনদ বাতিল এবং অর্থনীতি বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী মোস্তফা ফাহিম সিরাজির স্নাতকোত্তরের সনদ বাতিল করা হয়েছে।

সনদ স্থগিত হওয়া শিক্ষার্থীদের মধ্যে আইন বিভাগের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী হাবিবুল্লাহর স্নাতকোত্তর সনদ এবং পরিবেশবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও ছাত্রলীগের কর্মী নয়ন হাসানের স্নাতকের সনদ এক বছরের জন্য স্থগিত করা হয়েছে।

বিভিন্ন মেয়াদে বহিষ্কার হওয়া শিক্ষার্থীরা হলেন থিয়েটার বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী ও শাখা ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক সামিউল হককে এক বছর, নৃবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী ও সাবেক উপশিক্ষা ও পাঠচক্রবিষয়ক সম্পাদক মাছুম বিল্লাহকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। এ ছাড়া ইলেকট্রিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী রেজওয়ানুল কবীরকে তিন বছর, লোকপ্রশাসন বিভাগের ২০২০-২১ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবু রায়হানকে তিন বছর, ইংরেজি বিভাগের ২০১৮-১৯ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী গালিব ফয়সালকে দুই বছর, চারুকলা বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী সৌমিক জাহানকে তিন বছর, আইন বিভাগের ২০২২-২৩ শিক্ষাবর্ষের স্নাতকোত্তরের শিক্ষার্থী নাঈমুল ইসলামকে এক বছর, পপুলেশন সায়েন্সের ২০২১-২২ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী পবিত্র মণ্ডলকে এক বছর এবং চারুকলা বিভাগের ২০১৭-১৮ শিক্ষাবর্ষের শিক্ষার্থী আবদুল্লাহ আল শাহরিয়ারকে এক বছরের জন্য বহিষ্কার করা হয়েছে। তাঁরা সবাই ছাত্রলীগের কর্মী।

প্রসঙ্গত, ২০২৪ সালের ৫ ফেব্রুয়ারি হলের সিট দখলকে কেন্দ্র করে ছাত্রলীগ নেতা আবু নাঈম আব্দুল্লাহ এবং ছাত্রলীগ নেতা মাহফুজুর রাজ্জাক অনিকের অনুসারীদের মধ্যে সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ ঘটনায় সংবাদ সংগ্রহ করতে গেলে আজকের পত্রিকার বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি ফাহাদ বিন সাঈদ ও যায়যায়দিনের বিশ্ববিদ্যালয় প্রতিনিধি আহসান হাবীবের ওপর অতর্কিত হামলা চালিয়ে কয়েক দফায় মারধর করেন আবু নাঈম আব্দুল্লাহর অনুসারীরা। এ ঘটনায় ওইদিনই তত্কালীন বিশ্ববিদ্যালয়ের শেখ মুজিবুর রহমান হলের প্রভোস্ট মাসুম হাওলাদারকে সভাপতি ও তত্কালীন প্রক্টর সঞ্জয় কুমার মুখার্জিকে সদস্যসচিব করে তিন সদস্যবিশিষ্ট তদন্ত কমিটি গঠন করে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।