নিজেস্ব প্রতিবেদক:
মৃত্যুর মাধ্যমে মানুষের পার্থিব জীবন শেষ হয় এবং শুরু হয় নতুন এক অধ্যায়—কবরের জীবন। কোরআন ও হাদিসে এই জগতকে ‘বারযাখ’ নামে উল্লেখ করা হয়েছে।
‘বারযাখ’ একটি আরবি শব্দ, যার অর্থ হলো পর্দা, আবরণ বা ব্যবধান। মৃত্যুর পর থেকে কিয়ামত পর্যন্ত সময়কে বারযাখের জীবন বলা হয়। এটি এমন এক অদৃশ্য জগত, যা পার্থিব জগত থেকে আলাদা এবং মানুষের উপলব্ধির বাইরে। দেহের অংশসমূহ যেখানে অবস্থান করে, সেটিই ব্যক্তির জন্য বারযাখ বা কবর হিসেবে বিবেচিত হয়।
বারযাখে কেউ শান্তিময় জীবনের স্বাদ পায়, আবার কেউ ভোগ করে কঠিন শাস্তি। মুমিন বান্দাদের জন্য এটি হবে জান্নাতের এক টুকরো বাগান, আর গুনাহগারদের জন্য হবে জাহান্নামের গহ্বর।
হাদিসে এসেছে, কবরের শাস্তির মধ্যে রয়েছে দুই পাশের মাটির চাপ, সাপ-বিচ্ছুর দংশন, ফেরেশতাদের প্রহার এবং জ্বলন্ত আগুনের আযাব। (তিরমিজি, হাদিস : ২৪৬০)
অন্যদিকে, একজন মুমিন বান্দার জন্য কবর হবে প্রশান্তির বিছানা, যেখানে সে জান্নাতের নেয়ামত ভোগ করবে। (মুসনাদ আহমদ, হাদিস : ১৮৫৩৪)
মৃত্যুর পর কবরের জীবনে প্রত্যেককে তিনটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে। এই প্রশ্নগুলোর সঠিক উত্তর দিতে পারলেই জান্নাতের নেয়ামত লাভ করা যাবে। অন্যথায়, কঠোর শাস্তির মুখোমুখি হতে হবে।
১. তোমার রব কে?
দুনিয়ায় যারা আল্লাহর একত্ববাদে বিশ্বাস স্থাপন করেনি, তারা এই প্রশ্নের উত্তর দিতে ব্যর্থ হবে। সুতরাং, পরকালের জন্য প্রস্তুতি হিসেবে একমাত্র আল্লাহকে রব হিসেবে স্বীকার করা জরুরি।
২. তোমার জীবনব্যবস্থা কী?
যারা ইসলামকে পরিপূর্ণ জীবনব্যবস্থা হিসেবে গ্রহণ করেছে, তারা কেবল এ প্রশ্নের সঠিক উত্তর দিতে পারবে। আল্লাহ বলেন, ‘যে ব্যক্তি ইসলাম ছাড়া অন্য জীবনব্যবস্থা অনুসরণ করবে, তা কখনও গ্রহণযোগ্য হবে না।’ (সুরা আলে ইমরান: ৮৫)
৩. তোমাদের কাছে যাহাকে পাঠানো হয়েছেন তিনি কে?
এই প্রশ্নে নবিজি (সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়াসাল্লাম) সম্পর্কে জানতে চাওয়া হবে। যারা তার সুন্নাহ অনুসরণ করেছে, তারা সহজেই উত্তর দিতে পারবে। আর যারা অন্যদের আদর্শ গ্রহণ করেছে, তারা বলবে—‘আমি জানি না।’
কবরের এই তিনটি প্রশ্নই পরকালীন জীবনের সফলতা ও ব্যর্থতার মাপকাঠি। তাই দুনিয়াতে থেকেই সঠিক বিশ্বাস ও আমল করার মাধ্যমে এসব প্রশ্নের প্রস্তুতি গ্রহণ করা আবশ্যক।