মালয়েশিয়ায় অবৈধ অভিবাসীদের দেশে ফেরার মেয়াদ ৩১ ডিসেম্বর
টিকিটের মেয়াদ ফুরালেও হাতে আসেনি এসপি!
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মালয়েশিয়াতে অবস্থানরত বিভিন্ন দেশের অবৈধ অভিবাসীদের নিজ নিজ দেশে ফেরার জন্য সরকার ঘোষিত সাধারণ ক্ষমা ‘ব্যাক ফর গুড” কর্মসূচির মেয়াদ শেষ হচ্ছে আগামী ৩১ ডিসেম্বর।
ইমিগ্রেশন গুলোতে প্রচুর লোকের ভিড় থাকলেও ইমিগ্রেশন অফিসের তথ্য মতে জানা যায়, বিদেশি অবৈধ নাগরিকদের সেবা দিতে সকাল থেকে মধ্যরাত পর্যন্ত কাজ করা হচ্ছে। সব মিলিয়ে প্রতিদিন ৪০০ জনকে এসপি (স্পেশাল পাস) দিতে পারছে। তাও যারা গত তিন থেকে চারদিন আগে লাইনে দাঁড়িয়েছিলেন তাদের হাতেই যাচ্ছে এ এসপি।
এমন চিত্র কমবেশি প্রায় সবকটি ইমিগ্রেশন অফিসের। বাকি থেকে যাচ্ছে অনেকেই । অনেকেরই আবার টিকিটের মেয়াদ শেষ হতে যাচ্ছে আজ অথবা কাল । আজ এবং কালের মধ্যে এরা এবং অন্য বাকিরা আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে স্পেশাল পাস না পেলে কী হবে? এমন প্রশ্ন করছেন অনেকেই। কেউ বলছেন মেয়াদ বেড়েছে, কেউ বলছেন মেয়াদ বাড়বে। এমন দ্বিধাদ্বন্দ্বের মাঝে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের মহাপরিচালক দাতো ইনদিরা খায়রুল জাইমি স্পষ্ট বলেছেন, এখন পর্যন্ত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচি মেয়াদ বৃদ্ধির কোনো সিদ্ধান্ত সরকারের তরফ থেকে হয়নি।
এদিকে, বাংলাদেশ হাইকমিশন মালয়েশিয়া সরকারের প্রবর্তিত ‘ব্যাক ফর গুড’ কর্মসূচির আওতায় অনিয়মিত কর্মীদের দেশে প্রত্যাবর্তনে গড়ে প্রতিদিন গড়ে ২ থেকে ৩০০ ট্রাভেল পাস ইস্যু করা হচ্ছে।
এতো ট্রাভেল পাস এবং পাসপোর্টধারী অবৈধদের ঠিক কতজন সুবিধা নিচ্ছে এমন তথ্য প্রকাশ করেছে মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশন। আগস্ট থেকে শুরু হওয়া সাধারণ ক্ষমার সুযোগ নিয়ে গত ১২ ডিসেম্বর পর্যন্ত নিজ নিজ দেশে ফিরেছেন ৩৯ হাজার বাংলাদেশিসহ ১ লাখ ৩৮ হাজার ৯০১ জন। এর মধ্যে সর্বোচ্চ ইন্দোনেশিয়ার ৫৩ হাজার ৩২৮ জন। ভারতের ২২ হাজার ৯৬৪ ও মিয়ানমারের ৬ হাজার ৯২৩ জন। বাকিরা বিভিন্ন দেশের নাগরিক।
এ পরিসংখ্যান উল্লেখ করে ইমিগ্রেশন মহাপরিচালক জানিয়েছেন যে, আগামী ৩১ ডিসেম্বরের মধ্যে অবৈধ অভিবাসীকে ‘বি-ফোর-জি’ পদ্ধতি অনুসরণ করে নিজ নিজ দেশে ফিরে না গেলে তাদের বিরুদ্ধে অভিবাসন আইনের ১৫(১) ২৯৫৯/৬৩ ধারায় ২ লাখ টাকা জরিমানা ও ৫ বছরের জেল অথবা উভয় দণ্ডে দণ্ডিত হতে পারে এবং বেত্রাঘাত শাস্তি দেওয়া হবে।
যারা ইতোমধ্যে প্রস্তুতি নিয়ে ইমিগ্রেশনে গিয়ে নির্দিষ্ট সময়ে স্পেশাল পাস পাচ্ছেন না তাদের কী হবে? এমন প্রশ্নের জবাবে বাংলাদেশ হাইকমিশনের শ্রম কাউন্সিলর মো. জহিরুল ইসলাম বলেন, ‘হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলামের নির্দেশে ট্রাভেল পারমিট যেদিন আবেদন করছেন সেদিন বিকেলেই দিচ্ছি, সামাজিকে যোগাযোগ মাধ্যমে প্রচার করছি। বিভিন্নভাবে প্রচার করে লোকদেরকে উদ্বুদ্ধ করছি যেন সরাসরি দূতাবাস ও ইমিগ্রেশন থেকে সেবা নেয়। মালয়েশিয়া ইমিগ্রেশনের সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রেখে যাচ্ছি। অনেকে আমাদের কাছে জানাচ্ছে, আমরা ইমিগ্রেশনকে জানাচ্ছি, ইমিগ্রেশন ব্যবস্থা নিচ্ছে।
তিনি আরও বলেন, ‘অপরদিকে বিমানবন্দরে গিয়েও অনেকের ট্রাভেল পারমিট সম্পর্কে এয়ারলাইন্সগুলো সন্দিহান হলে সেগুলোও ক্লিয়ার (পরিষ্কার) করে দিচ্ছি। কারণ ইতোমধ্যে বেশ কয়েকজন অন্য দেশের নাগরিক ছবি বদল করে অন্যের ট্রাভেল পারমিট নিয়ে ইমিগ্রেশনে বা বিমানবন্দরে গিয়ে বাংলাদেশে যাওয়ার চেষ্টা করেছিল। কিন্তু আমাদের কাছে রেকর্ড থাকায় তাৎক্ষণিক যাচাই করে এদের থামিয়ে দেয়া হয়েছে। অনেকে গ্রেফতার হয়েছে। অনেকে পালিয়ে গেছে। এভাবে হাইকমিশন থেকে ইস্যু করা ট্রাভেল পারমিটে ছবি বা তথ্য পরিবর্তন করে ব্যবহার করার কোনো সুযোগ নেই।’
জহিরুল ইসলাম বলেন, আমাদের দেশের বিপদগ্রস্ত নাগরিক যাতে সেবা পায় সেজন্য হাইকমিশনার মহ. শহীদুল ইসলাম একটি টিম করে দিয়েছেন।
মালয়েশিয়ার বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্সের তথ্য মতে, গত ১৪ ডিসেম্বর থেকে বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইন্স অতিরিক্ত ১৬টি ফ্লাইট চালু করেছে। এই ১৬টি ফ্লাইটে ‘ব্যাক ফর গুড’ এর টিকিটধারী যাত্রীরা শুধু এই ১২ হাজার টাকা ভর্তুকি পাচ্ছেন। তবে অধিকাংশ যাত্রী-ক্রেতা জানাচ্ছেন, বিমান অফিসে গেলেও ভর্তুকি মূল্যের টিকিট পাওয়া যাচ্ছে না।
অন্যদিকে, এ কর্মসূচির আওতায় বাংলাদেশ বিমান ছাড়া অন্য এয়ারলাইন্সে ব্যাক ফর গুডের যাত্রীরা এ সুবিধা পাচ্ছেন না। এ নিয়ে দেশে ফিরে যেতে যারা অন্য এয়ারলাইন্সে টিকিট করেছে বা যাবে তাদের মধ্যে হতাশা বিরাজ করছে।
এ বিষয়ে প্রবাসীদের অধিকার ও কল্যাণ নিয়ে সোচ্চার সংগঠনগুলো বলছে, ব্যাক ফর গুডের আওতায় দেশে ফেরত আসছেন এমন সবাইকে এই ভর্তুকির আওতায় আনা হলে কোনো বৈষম্য হবে না। রাষ্ট্র তার নাগরিকদের মধ্যে বৈষম্য করতে পারে না। বৈষম্য করলে তা স্পষ্ট সংবিধানের লঙ্ঘন হবে।
তারা বলছেন, শেষের দিকে যেভাবে বাংলাদেশসহ অন্য ১৬টি দেশের অবৈধ নাগরিকদের ভিড় লক্ষ্য করা যাচ্ছে, তাতে এ কর্মসূচির মেয়াদ বৃদ্ধি করলে মালয়েশিয়া সরকারের উদ্দেশ্য সফল হবে।
এদিকে, এ কর্মসূচির শুরুতে সিণ্ডিকেটের কারসাজীতে বিমান টিকেটের দাম কয়েক গুন বেড়ে যায়। টিকিটের মূল্য কমের আশায় সেসময় অনেকে পিছু হতে যায়। তবে কর্মসূচীর শেষ পর্যায়ে এসে ইমিগ্রেশন গুলোতে এখন উপছে পড়া ভিড় লেগে আছে।