অপরিবর্তিত থাকছে নীতি সুদহার

মুদ্রানীতি ঘোষণা কাল

প্রকাশিত: ১১:৫৩ পূর্বাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ৯, ২০২৫

সেলিনা আক্তার:

নীতি সুদহার অপরিবর্তিত রেখে চলতি অর্থবছরের দ্বিতীয়ার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করতে যাচ্ছে কেন্দ্রীয় ব্যাংক। বিনিময় হার ব্যবস্থাপনায়ও বড় কোনো পরিবর্তন আসছে না। মূলত মূল্যস্ফীতি সামান্য কমে আসা এবং রিজার্ভ ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল থাকায় এমন নীতি ঘোষণা হচ্ছে।

অবশ্য এখনই সংকোচন থেকে সম্প্রসারণের নীতিতেও যাবে না কেন্দ্রীয় ব্যাংক। আগামীকাল সোমবার বাংলাদেশ ব্যাংকের গভর্নর ড. আহসান এইচ মনসুর সংবাদ সম্মেলন করে নতুন মুদ্রানীতি ঘোষণা করবেন। ওই দিন সকালে কেন্দ্রীয় ব্যাংকের পরিচালনা পর্ষদের বৈঠকে এ নিয়ে আলোচনা হবে। এটি হবে অন্তর্র্বতী সরকার আমলের এবং বর্তমান গভর্নরের প্রথম মুদ্রানীতি।

মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণ, বিনিময় হার স্থিতিশীল করা এবং রিজার্ভ বাড়ানোকে প্রধান চ্যালেঞ্জ বিবেচনায় গত বছরের ১৮ জুলাই চলতি অর্থবছরের প্রথমার্ধের মুদ্রানীতি ঘোষণা করে বাংলাদেশ ব্যাংক। নজিরবিহীনভাবে সংবাদ সম্মেলন না করে কেবল ওয়েবসাইটে মুদ্রানীতির ঘোষণাপত্র দেওয়া হয়। ব্যাংক খাতের বিভিন্ন জালিয়াতির তথ্য আড়াল করতে তৎকালীন গভর্নর আব্দুর রউফ তালুকদার কেন্দ্রীয় ব্যাংকে সাংবাদিক প্রবেশে নিষেধাজ্ঞার ধারাবাহিকতায় এমন পদক্ষেপ নেন। ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থান-পরবর্তী পলাতক অবস্থায় গত ৯ আগস্ট অজ্ঞাত স্থান থেকে ই-মেইলে পদত্যাগ করে আত্মগোপনে আছেন সাবেক এ আমলা। এরপর বিশিষ্ট অর্থনীতিবিদ ড. আহসান এইচ মনসুর গভর্নরের দায়িত্ব পান।

নতুন গভর্নর দায়িত্ব নেওয়ার সময় কেন্দ্রীয় ব্যাংক থেকে ব্যাংকগুলোর স্বল্পমেয়াদি ধারে ব্যবহৃত রোপোর সুদহার ছিল ৮ দশমিক ৫০ শতাংশ। তিন দফায় ৫০ বেসিস পয়েন্ট করে তা বাড়িয়ে ১০ শতাংশ করা হয়েছে। এতে করে গ্রাহক পর্যায়ে সুদহার বেড়ে এখন ১৫ শতাংশ ছাড়িয়েছে। এরপরও মূল্যস্ফীতি না কমায় আরেক দফা নীতি সুদহার বাড়ানোর আলোচনা ছিল। তবে সর্বশেষ হিসাবে মূল্যস্ফীতি কিছুটা কমেছে। এ কারণে আপাতত নীতি সুদহার বাড়ানো হবে না। অবশ্য বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থান বিবেচনায় সুদহার না বাড়িয়ে বরং কমানোর দাবি জানিয়ে আসছেন ব্যবসায়ীরা।

সংশ্লিষ্টরা জানান, অন্তর্র্বতীকালীন সরকারের প্রথম ছয় মাসে অর্থনীতিতে বড় কোনো স্বস্তি ফেরানো গেছে, তেমন নয়। তবে বিভিন্ন ক্ষেত্রে ধারাবাহিক যে অবনতি হচ্ছিল, তা ঠেকানো গেছে। বিশেষ করে অর্থ পাচারের বিরুদ্ধে কঠোর নীতির কারণে আগের মতো আর বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ কমছে না। বরং দীর্ঘদিন ধরে তা ২০ বিলিয়ন ডলারে স্থিতিশীল আছে। গত বুধবার রিজার্ভ দাঁড়িয়েছে ২০ দশমিক ২০ বিলিয়ন ডলারে। বর্তমান সরকার দায়িত্বে আসার আগে গত জুলাই শেষে যা ২০ দশমিক ৩৯ বিলিয়ন ডলার ছিল; ৪৮ বিলিয়ন ডলার থেকে কমে যা ওই পর্যায়ে নেমেছিল। এর মধ্যে ৩৩০ কোটি ডলারের আগের বকেয়া পরিশোধের পরও রিজার্ভ একই জায়গায় থাকাকে আপাতত স্বস্তি বিবেচনা করা হচ্ছে। আবার ডলারের দর ১২২ থেকে ১২৪ টাকায় স্থিতিশীল আছে। এর মধ্যে বছরের প্রথম মাস গত জানুয়ারিতে মূল্যস্ফীতি কমে ৯ দশমিক ৯৪ শতাংশে নেমেছে। আগের মাস শেষে যা ছিল ১০ দশমিক ৮৯ শতাংশ।

বাংলাদেশ ব্যাংকের একজন ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা সমকালকে বলেন, সুদহার বাড়লে বিনিয়োগ ও কর্মসংস্থানে আশানুরূপ উন্নতি হয় না, এটাই বাস্তবতা। তবে বাংলাদেশের এখন মূল্যস্ফীতি ও অর্থ পাচার নিয়ন্ত্রণ প্রধান অগ্রাধিকার হওয়া উচিত। কেননা উচ্চ মূল্যস্ফীতির কারণে সঞ্চয়ের ক্ষমতা কমছে। আরেকটি বিষয় হলো সুদহার বেড়ে যাওয়ায় আমানত পরিস্থিতির উন্নতি হচ্ছে।

সংশ্লিষ্টরা জানান, দীর্ঘদিন ধরে ডলার সংকট চলছিল। এর মধ্যে সংকোচনমূলক মুদ্রানীতির কারণে বেসরকারি খাতের ঋণ প্রবৃদ্ধি ব্যাপক কমে গত ডিসেম্বরে ৭ দশমিক ২৮ শতাংশে নেমেছে। আগের মুদ্রানীতিতে গত ডিসেম্বর ও আগামী জুন বেসরকারি খাতে ঋণ প্রবৃদ্ধির প্রাক্কলন করা হয় ৯ দশমিক ৮০ শতাংশ। গত ডিসেম্বরে এ প্রবৃদ্ধি ছিল সাম্প্রতিক বছরগুলোর মধ্যে সর্বনিম্ন। আগের মাস নভেম্বর শেষে যা ছিল ৭ দশমিক ৬৬ শতাংশ। আর ২০২৩ সালের ডিসেম্বর শেষে ছিল ১০ দশমিক ১৩ শতাংশ।
করোনা-পরবর্তী বৈশ্বিক চাহিদা এবং রাশিয়া-ইউক্রেন যুদ্ধের কারণে বিশ্ববাজারে পণ্যমূল্য বেড়ে যায়। পরিস্থিতি সামলাতে বিশ্বের অন্য দেশগুলো বেশ আগেই সুদহার বাড়ালেও উল্টো ২০২৩ সালের জুন পর্যন্ত বাংলাদেশে সুদহারের সর্বোচ্চ ৯ শতাংশ সীমা দিয়ে রাখা হয়।