বাইডেন-মোদি বৈঠক: দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা

প্রকাশিত: ১:১১ অপরাহ্ণ, জুন ২৪, ২০২৩

আন্তর্জাতিক ডেস্ক :

যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির দ্বিপক্ষীয় বৈঠকে দক্ষিণ এশিয়ার তিন দেশ মিয়ানমার, পাকিস্তান ও আফগানিস্তান পরিস্থিতি নিয়ে দীর্ঘ আলোচনা হয়েছে। তবে বাংলাদেশ নিয়ে কোনো কথা ওঠেনি। কোনো কোনো মহল মনে করেছিল বাংলাদেশের আগামী নির্বাচন নিয়ে মোদি কথা বলতে পারেন। তবে বাস্তবে তা হয়নি।

বৃহস্পতিবার দুই নেতার বৈঠকের পর হোয়াইট হাউস যে যৌথ বিবৃতি প্রকাশ করেছে, তাতে এ চিত্র পাওয়া গেছে। প্রায় ৬ হাজার ৫০০ শব্দের ৫৮ দফার এ বিবৃতিতে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ ও মানবাধিকারের ওপর জোর দেওয়া হয়েছে।

২ ঘণ্টা একান্তে বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বাইডেন বলেন, বৈঠকে গণতান্ত্রিক মূল্যবোধ নিয়ে আলোচনা হয়েছে। তিনি বলেন, আমেরিকা ও ভারতের ‘ডিএনএ’র মধ্যে গণতন্ত্র রয়েছে। তিনি ভারতের গণতান্ত্রিক মূল্যবোধেরও প্রশংসা করেন।

বিবৃতিতে অবনতিশীল মিয়ানমার পরিস্থিতি নিয়ে গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন দুই নেতা। দেশটিতে নির্বিচারে আটক ব্যক্তিদের মুক্তি দিয়ে গঠনমূলক আলোচনার মাধ্যমে একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক গণতান্ত্রিক ব্যবস্থা এগিয়ে নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।

পাকিস্তান ও আফগানিস্তানকে জঙ্গি হামলার ক্ষেত্র হিসেবে যেন ব্যবহার না করা হয়, সে বিষয়ে জোর দেওয়া হয়েছে বিবৃতিতে। পাকিস্তান প্রসঙ্গে আলোচনায় আলকায়দা, আইএস, লস্কর-এ-তৈয়েবার মতো জাতিসংঘের তালিকাভুক্ত জঙ্গি সংগঠনের বিরুদ্ধে পদক্ষেপের আহ্বান জানানো হয়েছে। দুই নেতা আন্তঃসীমান্ত সন্ত্রাসবাদ, সন্ত্রাসী প্রক্সি ব্যবহার করার তীব্র নিন্দা করেছেন এবং পাকিস্তানকে অবিলম্বে এ বিষয়ে পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন। তাঁরা মুম্বাই ও পাঠানকোট হামলার অপরাধীদের বিচারের আওতায় আনার আহ্বান জানিয়েছেন।

তাঁরা শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্থিতিশীল আফগানিস্তানের জন্য দৃঢ় সমর্থন পুনর্ব্যক্ত করেছেন। তাঁরা বর্তমান মানবিক পরিস্থিতি নিয়ে আলোচনা করেছেন এবং আফগানিস্তানের জনগণকে অবিলম্বে মানবিক সহায়তা প্রদান অব্যাহত রাখার প্রয়োজনীয়তার বিষয়ে একমত হয়েছেন।

বিবৃতিতে বলা হয়, আফগান ভূখণ্ড কখনই কোনো দেশকে হুমকি বা আক্রমণ, সন্ত্রাসীদের আশ্রয় বা প্রশিক্ষণ, বা সন্ত্রাসী হামলার পরিকল্পনা বা অর্থায়নের জন্য ব্যবহার করা উচিত নয়। আফগানিস্তানের পরিস্থিতির ওপর ঘনিষ্ঠ আলোচনা চালিয়ে যাওয়ার প্রতিশ্রুতি দিয়ে তাঁরা একটি অন্তর্ভুক্তিমূলক রাজনৈতিক কাঠামো গঠনে জোর দেন। তাঁরা তালেবানকে নারী, মেয়েসহ সব আফগানের মানবাধিকার এবং চলাফেরার স্বাধীনতাকে সম্মান করার আহ্বান জানিয়েছেন।

আফগানিস্তানকে শান্তিপূর্ণ, নিরাপদ ও স্থিতিশীল করার ব্যাপারে সমর্থন জানিয়েছেন বাইডেন ও মোদি।

বিবৃতিতে মানবাধিকার, গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনভিত্তিক নীতির মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব গড়ে তোলার আকাঙ্ক্ষা ব্যক্ত করা হয়।

বলা হয়, ‘একত্রে আমরা একটি আরও শক্তিশালী, বৈচিত্র্যময় মার্কিন-ভারত অংশীদারিত্ব গড়ে তুলব; যা মানবাধিকার এবং গণতন্ত্র, স্বাধীনতা এবং আইনের শাসনের নীতির ওপর ভিত্তি করে একটি উজ্জ্বল এবং সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের জন্য আমাদের জনগণের আকাঙ্ক্ষাকে এগিয়ে নিয়ে যাবে।’

দুই নেতার বৈঠকের পর যৌথ সংবাদ সম্মেলনে মোদি প্রথমবারের মতো সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দিয়েছেন। তিনি তাঁর ৯ বছরের শাসনামলে কখনও এ ধরনের সংবাদ সম্মেলনে অংশ নেননি।

সংবাদ সম্মেলনে একজন ভারতীয় এবং একজন আমেরিকান সাংবাদিক তাঁকে প্রশ্ন করেন। সিএনএন জানিয়েছে, যৌথ সংবাদ সম্মেলনে অংশ নিয়ে সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাব দেয়ার বিষয়টি নিয়ে ভারতের কর্মকর্তাদের জোর আপত্তি ছিল। যুক্তরাষ্ট্রের চাপে ভারত শেষ পর্যন্ত রাজি হয়েছে।

মোদি সরকারের আমলে ভারতে ভিন্ন মতাবলম্বী ও ধর্মীয় সংখ্যালঘু মুসলিমদের ওপর দমন-পীড়ন বিষয়ে মানবাধিকার সংস্থাগুলো যেসব অভিযোগ তুলেছে, সেটি নিয়ে সংবাদ সম্মেলনে প্রশ্ন করা হয়। মোদি অবশ্য অভিযোগ অস্বীকার করেছেন এবং দাবি করেছেন, ভারতে জাতপাত বিচারে কোনো বৈষম্য হয় না। সবাই সমান।