অয়ন্তের স্বপ্নপূরণ: দিনমজুরের সন্তান জাতীয় নারী ফুটবল দলে

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, ফেব্রুয়ারি ২৩, ২০২৫

সিরাজগঞ্জ প্রতিনিধি:

 

বাবা অন্যের জমিতে করেন কৃষি কাজ। সংসারের অবস্থাও ভালো না। এমন পরিবারে অনেকেই হয়তো বড় স্বপ্ন দেখেন না। কিন্তু কথায় আছে মানুষ তার স্বপ্নের সমান বড়। আর সেটাই যেন প্রমাণ করেছেন সিরাজগঞ্জের প্রত্যন্ত গ্রামের এক মেয়ে অয়ন্ত বালা মাহাতো।

নিজের মেধাকে কাজে লাগিয়ে দরিদ্রতার সমস্ত বাধা পেরিয়ে জায়গা করে নিয়েছেন বাংলাদেশ জাতীয় নারী ফুটবল দলে। আগামী ২৬ ফেব্রুয়ারি ও ২ মার্চ সংযুক্ত আরব আমিরাতে দুটি প্রীতি ফুটবল ম্যাচ খেলবে বাংলাদেশ নারী ফুটবল দল। এই দুই প্রীতি ম্যাচকে সামনে রেখে বাফুফের ঘোষিত দলে জায়গা করে নিয়েছেন অয়ন্ত।

রোববার (২৩ ফেব্রুয়ারি) রায়গঞ্জ উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মো. হুমায়ুন কবির এই তথ্যটি নিশ্চিত করেন। এ সময় তিনি জানান, অয়ন্ত বালা মাহাতো জাতীয় নারী ফুটবল দলে সুযোগ পাওয়ায় উপজেলাবাসী গর্বিত। তার এমন অর্জন সত্যিই অসাধারণ। তবে অয়ন্তর ব্যক্তি জীবন কেটেছে বেশ কষ্টের।

সিরাজগঞ্জের রায়গঞ্জ উপজেলার সোনাখাড়া ইউনিয়নের নিভৃত পল্লীগ্রাম গোতিথা। এই গ্রামের ক্ষুদ্র নৃ-গোষ্ঠী সম্প্রদায়ের মনিলাল মাহাতো ওরফে বারিশা মাহাতো ও শেফালি রানি মাহাতো দম্পতির মেয়ে তিনি। একটা ছোট কুঁড়ে ঘর ছাড়া আর তেমন কিছুই নেই তার পরিবারের। অন্যের জমিতে মজুর খেটেই তাদের সংসার চলে। তার বাবা-মা দুজনে মিলে মাঠে কাজ করে দৈনিক ৩০০ থেকে ৩৫০ টাকা আয় করে। সেটি দিয়েই কোনো রকম দিন পার করেন তারা। এমন দারিদ্র পরিবারের মেয়ে অয়ন্ত। টিনের ছাউনি দেওয়া মাটির দেওয়ালের ঘরে বসবাস করেন তারা।

অয়ন্ত বালা মাহাতোর মা শেফালি রানী মাহাতো ও বাবা মনিলাল মাহাতো।

তিন ভাই-বোনের মধ্যে সবার ছোট অয়ন্ত। বড় বোন রিনা রানি মাহাতো স্নাতকোত্তর শ্রেণির শিক্ষার্থী। একমাত্র ভাই জয় কুমার মাহাতো স্থানীয় নিমগাছী ডিগ্রি কলেজের একাদশ শ্রেণির শিক্ষার্থী। পড়াশোনার পাশাপাশি চান্দাইকোনা বাজারের একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে চাকরিও করেন জয়।

অয়ন্তর কাকা সুশীল কুমার মাহাতো, ঠাকুমা শান্তি রানি মাহাতোসহ পরিবারের লোকজন উচ্ছ্বাস প্রকাশ করে বলেন, আমরা অনেক গর্বিত। জাতীয় দলে খেলবে ভাবতেই ভালো লাগছে। স্বজন ও স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গোতিথা সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের মাঠেই ফুটবল খেলার হাতেখড়ি হয় অয়ন্তের। ফুটবল খেলার প্রতি প্রচণ্ড আগ্রহ দেখে তাকে নিমগাছী প্রমিলা ফুটবল একাডেমিতে ভর্তি করে দেওয়া হয়। প্রাথমিক পড়াশোনা শেষে বিষমডাঙ্গা গার্লস স্কুলের ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে ভর্তি হয়। ৬ষ্ঠ শ্রেণিতে থাকতেই বাংলাদেশ ক্রীড়া শিক্ষা প্রতিষ্ঠান বিকেএসপিতে সুযোগ পায়। অয়ন্ত বর্তমানে নবম শ্রেণির ছাত্রী।

অয়ন্ত জাতীয় দলে সুযোগ পাওয়ায় বেশ খুশি প্রমীলা ফুটবল একাডেমির প্রশিক্ষক নিহার রঞ্জন মাহাতো। তিনি বলেন, বৃহস্পতিবার রাতেই খবরটি জানতে পেয়েছি। আমাদের প্রতিষ্ঠানের ছাত্রী জাতীয় নারী ফুটবল দলে অন্তর্ভুক্ত হয়েছে। এটি আমাদের প্রতিষ্ঠান তথা সিরাজগঞ্জ জেলাবাসীর জন্য গৌরবের বিষয়।

এছাড়া, নিমগাছী সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মো. সুলতান মাহমুদ বলেন, অয়ন্ত জাতীয় নারী ফুটবল দলে সুযোগ পেয়ে আমাদের গর্বিত করেছে। আমরা চাই সে যেন ভালোভাবে ফুটবল খেলে আরও সুনাম বয়ে নিয়ে আনে।