নিজেস্ব প্রতিবেদক:
ছাত্র অভ্যুত্থানে সরকার পতনের পর, সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দেশ ছেড়ে পালিয়ে ভারতে আশ্রয় নেন। এই ঘটনা দেশের রাজনৈতিক প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ মোড় নিয়ে আসে। রাজনৈতিক অনিশ্চয়তা এবং সম্ভাব্য গ্রেপ্তারের আশঙ্কায়, আওয়ামী লীগের শীর্ষস্থানীয় অনেক নেতা, মন্ত্রী ও সংসদ সদস্য দেশত্যাগ করেন। সাবেক সংসদ সদস্য এবং শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই শেখ হেলাল উদ্দিন ও তার ছেলে শেখ তন্ময় কলকাতায় লুকিয়ে আছেন বলে জানা গেছে।
সূত্র জানায়, শেখ হেলাল ও শেখ তন্ময় কলকাতায় আওয়ামী সমর্থকদের সহায়তায় নিরাপদে অবস্থান করছেন। তাদের থাকা-খাওয়া ও অন্যান্য খরচ সমর্থকরাই বহন করছেন।
জানা গেছে, শেখ হেলালের একমাত্র ছেলে এসকে তন্ময় একজন মাদকাসক্ত। তিনি তার তরুণ জীবনের বেশিরভাগ সময় ভারতের বিভিন্ন পুনর্বাসন কেন্দ্রে কাটিয়েছেন। ঢাকার অনেকে জানেন যে শেখ হেলাল নিয়মিত গুলশান, বনানী, বারিধারায় মাদক ও মদের আসরগুলোর বিরুদ্ধে পুলিশি অভিযান চালাতেন, যাতে তার ছেলে ও তার বন্ধুরা এসবের সাথে জড়িয়ে না পড়ে। প্রতিবার পুলিশের অভিযানে অন্যান্যরা গ্রেপ্তার হলেও, তন্ময়কে নিরাপদে বাড়িতে পৌঁছে দেওয়া হতো।
তন্ময় এক বাংলাদেশি-জার্মান নারীকে বিয়ে করেছিলেন। তবে তিনি স্ত্রীর ওপর এত বেশি শারীরিক ও মানসিক নির্যাতন করতেন যে একসময় স্ত্রী জার্মানিতে পরিবারের কাছে পালিয়ে যান এবং আর কখনও ফিরে আসেননি বলে সূত্রে জানা গেছে। আরও জানা যায়, বৈবাহিক জীবনের পুরো সময় তন্ময় খুব কমই ঘরের বাইরে যেতেন, দিনের বেশিরভাগ সময় ঘুমিয়ে কাটাতেন এবং রাতে ক্যাসিনোতে সময় ব্যয় করতেন। তখন তারা সিঙ্গাপুরে বসবাস করছিলেন।
অভিযোগ রয়েছে, তন্ময় দ্রুত গাড়ি চালিয়ে ও বন্দুক দেখিয়ে তার স্ত্রীকে ভয় দেখাতেন। গাড়িতে বসে তিনি প্রায়ই স্ত্রীকে হুমকি দিতেন যে তিনি গাড়ি দুর্ঘটনার মাধ্যমে তাকে হত্যা করবেন।
জনশ্রুতি রয়েছে, শেখ হেলাল তার ছেলেকে মাদকাসক্তি থেকে ফিরিয়ে আনতে আপ্রাণ চেষ্টা করেছিলেন। তিনি শেখ হাসিনাকে অনুরোধ করেন তার ছেলেকে বাগেরহাট থেকে সংসদ সদস্য (এমপি) করার জন্য। এমপি হওয়ার পর, তন্ময় মাদক নয়, বরং অর্থ ও ক্ষমতার নেশায় মেতে ওঠেন। হেলাল মনে করেছিলেন সংসদ সদস্যের দায়িত্ব তার ছেলেকে সুপথে ফিরিয়ে আনবে, কিন্তু বাস্তবে তন্ময় তার বাবার ‘ক্যাশিয়ার’ হয়ে ওঠেন এবং হেলালের হয়ে ঘুষ সংগ্রহ শুরু করেন।
অভিযোগ রয়েছে, শেখ পরিবারের দুর্নীতিগ্রস্ত সদস্যদের মধ্যে সবচেয়ে বেশি সমালোচিত খুলনার ‘গডফাদার’ শেখ হেলাল। দীর্ঘ রাজনৈতিক ক্যারিয়ারে তার বিরুদ্ধে নানা সময় ক্ষমতার অপব্যবহার, অর্থ আত্মসাৎ এবং রাজনৈতিক সুবিধা আদায় করে অবৈধ সম্পদের পাহাড় গড়েছেন।
বিশ্বস্ত সূত্রে জানা গেছে, শেখ হেলালের সমস্ত অর্থ যুক্তরাষ্ট্রে তার স্ত্রী শেখ রুপার ভাইয়ের নামে রাখা হয়েছে। তিনিই হেলালের সমস্ত দুর্নীতির অর্থ আমেরিকায় নিরাপদে সংরক্ষণ করছেন।
২০২৪ সালের ১৯ আগস্ট, বাংলাদেশ ফাইন্যান্সিয়াল ইন্টেলিজেন্স ইউনিট (বিএফআইইউ) শেখ হেলাল উদ্দিন, তার স্ত্রী রুপা চৌধুরী, ছেলে শেখ সারহান নাসের তন্ময় এবং তাদের পরিবারের সকল ব্যাংক হিসাবের লেনদেন স্থগিত করে।
উল্লেখ্য, শেখ পরিবারের অন্যতম সদস্য হলেন শেখ হেলাল। পারিবারিক সূত্রে তিনি শেখ হাসিনার চাচাতো ভাই। তিনি বাগেরহাট-১ আসন থেকে ১৯৯৬, ২০০১, ২০০৮, ২০১৪, ২০১৮ ও ২০২৪ সালে সংসদ সদস্য নির্বাচিত হয়েছিলেন। আর তার ছেলে শেখ তন্ময় বাগেরহাট-২ আসনের সাবেক সংসদ সদস্য।