
ডেস্ক রিপোর্ট:
গত জুলাই-আগস্টের বিপ্লবে সাবেক প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পতনের পর বাংলাদেশকে এখন ভিন্ন আরেকটি বাংলাদেশ হিসেবে দেখছেন ইউরোপে বসবাসকারী প্রবাসী সাংবাদিক, লেখক, মানবাধিকার কর্মীসহ চাকরিজীবী প্রবাসী বাংলাদেশিরা। একইসঙ্গে বাংলাদেশ নিয়ে আছে হতাশাও।তাদের অভিযোগ, দেশে আগে কোনো আইনের সুশাসন ছিল না। প্রশাসন দলীয়করণ করায় সাধারণ জনগণের জীবন চলার পথে এক প্রকার অস্বস্তিতে ছিল।
বৈষম্যবিরোধী ছাত্র-জনতার অভ্যুত্থানের পর আওয়ামী লীগের রাজনীতি থেকে অনেকেই দূরে আছেন। তবে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে তাদের বিচরণ দৃশ্যমান বলে মনে করছেন প্রবাসীরা।
এদিকে আইনশৃঙ্খলার চরম অবনতিতে ভয়-আতঙ্কে উদ্বিগ্ন সবাই। এ নিয়ে অন্তর্র্বতী সরকারের ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে যোগাযোগ মাধ্যমগুলোতে। এ ব্যাপারে অনেকের দাবি, সাবেক সরকারের আমলে সমালোচনা করলেই সেটাকে অপরাধ হিসেবে গণ্য করা হতো। এজন্য দিতে হতো চড়া মাশুল। সেদিক বিবেচনায় অন্তর্র্বতী সরকার ভালো বলেই সবাই উন্মুক্ত সমালোচনা করতে পারছেন। তবে তারা মনে করেন, এখনো কঠোর জবাবদিহিতা নেই বললেই চলে।
সুইডেন প্রবাসী লেখক ও মানবাধিকার কর্মী রহমান মৃধা বলেন, আমরা এমন এক বাংলাদেশ গড়ার স্বপ্ন দেখি যেখানে দুর্নীতি, স্বৈরশাসন এবং অগণতান্ত্রিক শাসন থাকবে না। এ স্বপ্ন কেবল তখনই পূর্ণতা পাবে, যখন দেশের প্রতিটি নাগরিক তাদের অধিকার নিয়ে শান্তিপূর্ণভাবে এবং সমানভাবে বাঁচতে পারবে। সাধারণ মানুষের দেশ চাই, চাই মুক্ত মানুষের দেশ।
যুক্তরাজ্য প্রবাসী কলাম লেখক ও গবেষক ড. আজিজুল আম্বিয়া বলেন, একটা দেশের যদি গৌরবময় ইতিহাস না থাকে তবে সে জাতি অস্তিত্ব সংকটে ভোগে। দেশে এখন অনেকেই বৈষম্যবিরোধী বলে ইতিহাসসহ অনেক কিছুতেই বৈষম্য তৈরি করছেন। তাছাড়া এ দেশ কখনো ধর্ম ও সংস্কৃতির অবাধ স্বাধীনতা দিতে পারেনি। একটি গণতান্ত্রিক দেশে কোনো দিন সাংবাদিকরা বিনা বিচারে মাসের পর মাস জেলে থাকতে পারে না। পৃথিবীর মানুষ জানে সাংবাদিকরা মানুষ হত্যা করার মতো খারাপ কাজে লিপ্ত থাকতে পারে না। তাই সাংবাদিকদের মিথ্যা মামলা থেকে জামিন বা খালাস করে দেবে সরকার, এটা আশা করছি।
তিনি আরও বলেন, বাংলাদেশে সংখ্যালঘু শব্দটি আর শুনতে চাই না। আর দেশের সম্পদ ও ইতিহাস বুলডোজার দিয়ে ধ্বংস করার ষড়যন্ত্র যেন আর না করা হয়। অচিরেই দেশের সব দল এবং মানুষের মতামত নিয়ে নির্বাচন করার সুষ্ঠু পরিবেশ করে দেবে সরকার। জেল ও জুলুমমুক্ত করবেন রাজনৈতিক নেতাদের, যারা নির্বাচন করবেন। জাতিকে সুন্দর নির্বাচন উপহার দেবেন ড. ইউনূস, এ প্রত্যাশা করছি।
পর্তুগাল প্রবাসী সাংবাদিক ও ইউরোপ বাংলাদেশ প্রেস ক্লাবের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক ফরিদ আহমেদ পাটোয়ারী বলেন, দুর্নীতি ও দারিদ্রতাই হচ্ছে আমাদের সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ। দরিদ্রতা দূরীকরণের জন্য দুর্নীতি অন্যতম বড় বাধা। অর্থাৎ যদি দুর্নীতি দূর করা যায় তাহলে আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত বাংলাদেশ পাব। তাছাড়া দুর্নীতি রোধ করা গেলে আমরা খুব সহজেই আইনের শাসন প্রতিষ্ঠা করতে পারব। দুর্নীতি পরায়ণতা আমাদের রাষ্ট্রযন্ত্রকে ভঙ্গুর করে রেখেছে। বিশ্বের দিকে তাকালে আমরা দেখতে পাই যেই দেশ যতটা দুর্নীতিমুক্ত সেই দেশ ততটা উন্নত। সুতরাং দুর্নীতি রোধ করতে পারলেই আমরা একটি দারিদ্র্যমুক্ত এবং উন্নত অর্থনীতির একটি সমৃদ্ধ বাংলাদেশ পাব।
ইতালি প্রবাসী মানবাধিকার কর্মী ও শতরূপা মানবিক উন্নয়ন ফাউন্ডেশনের মহাসচিব মোজাম্মেল হক মোল্লা বলেন, আইনের সুশাসন প্রতিষ্ঠা করতে তরুণ নেতৃত্বে বাংলাদেশ গড়তে চাই।
এস্তোনিয়া প্রবাসী সিরাজুল মোস্তাকিম পিয়াল কয়েকটি তথ্য তুলে ধরে বলেন, ১. স্বাস্থ্যসেবা : কৃষক, জেলে ও গার্মেন্টস কর্মীদের জন্য বিনামূল্যে সাধারণ চিকিৎসা নিশ্চিত করতে হবে। ২. নিত্যপ্রয়োজনীয় খাদ্যের দাম : সরকার ভাত, ডাল, ডিম, তেলসহ সাধারণ খাবারের মূল্য এমনভাবে নির্ধারণ করবেন যেন সব শ্রেণির মানুষ তা সহজে পেতে পারে। ৩. বিলাসবহুল পণ্যে কর : জনসাধারণের প্রয়োজন নয় এমন বিলাসবহুল পণ্যের ওপর উচ্চ হারে কর বসাতে হবে। ৪. শিক্ষা ব্যবস্থা : সরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ে সব ভর্তুকি বাতিল, তবে ছাত্রদের জন্য স্কলারশিপ ও গবেষণা তহবিল বাড়াতে হবে। ৫. দক্ষতা উন্নয়ন : মাধ্যমিক পর্যায়ে শিক্ষার্থীদের জন্য একটি স্কিল বা ব্যবহারিক জ্ঞানের বিষয় সংযোজন বাধ্যতামূলক করতে হবে। ৬. কর্মসংস্থান : মাধ্যমিক পরীক্ষার পর সরকারি ব্যবস্থাপনায় বিদেশে চাকরির সুযোগ তৈরি করতে হবে। যারা ব্যবহারিক দক্ষতায় ভালো করবে, তারা বিশেষ ছাড় পাবে। ৭. সবার নিরাপত্তা : মা, বোন, পিতা, ভাই, বন্ধু, প্রেমিক, প্রেমিকা, কবি, পাগল, মুসলিম, হিন্দু, পাহাড়ি, সমতলের সব নাগরিকের জীবনের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে। ৮. সরকারি পদে প্রবাসীদের নিষেধাজ্ঞা : যারা বিদেশি পিআর বা পাসপোর্টধারী তারা সরকারি আমলা, চাকরি বা রাজনৈতিক পদে অযোগ্য বলে গণ্য হবে। ৯. আইনের কঠোর প্রয়োগ : আইনের শাসন নিশ্চিত করতে প্রত্যেক নাগরিকের জন্য সমান আইন এবং আইন প্রয়োগকারী বাহিনীর শৃঙ্খলা কঠোরভাবে নিশ্চিত করতে হবে। ১০. অর্থ পাচার রোধ : দেশ থেকে বিদেশে টাকা পাচার রোধে কঠোর ব্যবস্থা নিতে হবে এবং এ অপরাধে দৃষ্টান্তমূলক শাস্তির ব্যবস্থা করতে হবে। ১১. সকল প্রকার ছাত্ররাজনীতি বন্ধ, তার বদলে ছাত্র সংগঠন ও সার্ককে পুনর্গঠন এবং এর আওতায় তরুণদের ইরাসমাসের মতো সুবিধা দেওয়া।