
মাদারীপুরে প্রতিনিধি:
মাদারীপুরে দুর্নীতির অভিযোগে এক কোটিপতি কেরানির বিরুদ্ধে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেছে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক)। মামলার তদন্তকারী কর্মকর্তা ও দুদকের মাদারীপুর সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের সহকারী পরিচালক আখতারুজ্জামান সোমবার (২৪ ফেব্রুয়ারি) বিকালে বিজ্ঞ সিনিয়র স্পেশাল জজ আদালতে (জেলা ও দায়রা জজ আদালত) এই চার্জশিট দাখিল করেন। দুদকের সহকারী পরিচালক এ বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
অভিযুক্ত মো. মিজানুর রহমান ফকির (৫৩) রাজৈর উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তার কার্যালয়ের অফিস সহকারী কাম মুদ্রাক্ষরিক হিসেবে কর্মরত ছিলেন। বর্তমানে তিনি মাদারীপুর জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ে কর্মরত আছেন। তিনি মাদারীপুর পৌরসভার ১ নম্বর ওয়ার্ডের পাঠককান্দী এলাকার মো. কিনাই ফকিরের ছেলে।
চার্জশিট সূত্রে জানা গেছে, মো. মিজানুর রহমান ফকির ৫৩ লাখ ২০ হাজার ৭৪৭.৫২ টাকা মূল্যের জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জন ও ভোগদখল করেছেন, যা শাস্তিযোগ্য অপরাধ হিসেবে তদন্তে প্রমাণিত হয়েছে। এছাড়া তিনি ৫৬ লাখ ৮০ হাজার ৯৭০.০৭ টাকার সম্পদের তথ্য গোপন রেখে মিথ্যা তথ্য প্রদান করেছেন। দুদকের তদন্তে আরও উঠে এসেছে, মিজানুর রহমান দুর্নীতি ও ঘুষের মাধ্যমে তার আয়ের সঙ্গে অসংগতিপূর্ণ সম্পদের মালিক হয়েছেন, যা দুর্নীতি দমন কমিশন আইন, ২০০৪-এর ২৬(২) ধারায় শাস্তিযোগ্য অপরাধ।
চার্জশিটে উল্লেখ করা হয়েছে, মিজানুর রহমান গাড়ি ক্রয়-বিক্রয় ব্যবসার সঙ্গে জড়িত ছিলেন। তিনি নিজেও লিখিতভাবে জানিয়েছেন যে, গাড়ি ব্যবসা থেকে ১২ লাখ ৫০ হাজার টাকা আয় করেছেন। তবে, সরকারি কর্মচারী হিসেবে ব্যবসা পরিচালনার জন্য অনুমতি নেওয়া বাধ্যতামূলক হলেও তিনি তা গ্রহণ করেননি। গণকর্মচারী (আচরণ) বিধিমালা, ১৯৭৯-এর বিধি ১৭ অনুযায়ী, কোনো সরকারি কর্মচারী সরকারের পূর্বানুমোদন ছাড়া অন্য কোনো ব্যবসায়ে জড়িত হতে পারবেন না।
এছাড়া, বিধি ১১ অনুসারে, ২ লাখ ৫০ হাজার টাকার অধিক মূল্যের স্থাবর বা অস্থাবর সম্পদ ক্রয়-বিক্রয়ের ক্ষেত্রে সংশ্লিষ্ট কর্মচারীকে বিভাগীয় প্রধান বা সরকারের অনুমোদন গ্রহণ করতে হয়, যা তিনি করেননি। বিধি ১২ অনুসারে, সরকারি অনুমোদন ছাড়া কোনো সরকারি কর্মচারী ব্যক্তিগত বা ব্যবসায়িক স্বার্থে ভবন, অ্যাপার্টমেন্ট বা ফ্ল্যাট নির্মাণ বা ক্রয় করতে পারবেন না, কিন্তু তিনিও তা লঙ্ঘন করেছেন।
অবৈধভাবে ভিপি সম্পত্তি দখলের অভিযোগ তদন্তে আরও বেরিয়ে এসেছে, মিজানুর রহমান বেআইনিভাবে ০.১৪০০ একর সরকারি (ভিপি) সম্পত্তি লীজ নিয়ে ভোগদখল করছেন। ভিপি বা অর্পিত সম্পত্তি আইনের বিধান অনুযায়ী, যাদের নিজস্ব বাড়ি বা জায়গা রয়েছে, তারা এই ধরনের সম্পত্তির লীজ নিতে পারেন না। কিন্তু মিজানুর রহমান আইন অমান্য করে ওই সম্পত্তি লীজ নিয়ে সেখানে বাউন্ডারি, দরজা ও ঘর নির্মাণ করেছেন।
দুদকের অনুসন্ধানে এসব অভিযোগ প্রমাণিত হওয়ায়, কমিশনের স্মারক নং-৩১০৯৪ (২৪/০৮/২০২৩) এবং জেলা প্রশাসক, মাদারীপুরের স্মারক নং-১৭১ (১৩/০৮/২০২৪) অনুসারে তার লীজ বাতিল করে দুদককে অবহিত করা হয়েছে।
দুদক জানিয়েছে, তদন্তে দেখা গেছে যে, আসামি একজন আইন অমান্যকারী এবং সরকারি কর্মচারী হিসেবে নিজের আর্থিক স্বার্থসিদ্ধির জন্য দুর্নীতিতে জড়িত ছিলেন। অবৈধভাবে ব্যবসা পরিচালনা ও সরকারি সম্পত্তি আত্মসাৎ করে তিনি ব্যক্তিগতভাবে লাভবান হয়েছেন।