পবিত্র মাহে রমজান শুরু

লাইলাতুল কদর ২৭ মার্চ

প্রকাশিত: ১২:২৬ অপরাহ্ণ, মার্চ ২, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

গতকাল শনিবার পশ্চিমাকাশে উঁকি দিয়েছে নতুন চাঁদ। এই নয়া চাঁদের আলোক-রোশনাইয়ে সূচিত হলো ইবাদত-বন্দেগির বসন্তকাল। বছর ঘুরে রহমত, মাগফিরাত আর নাজাতের সওগাত নিয়ে আবারও এলো মাহে রমজান। শুরু হলো সংযম, তাক্বওয়া, আত্মশুদ্ধি, সম্প্রীতি-সৌহার্দ আর প্রাণান্ত ত্যাগ সাধনার মহিমান্বিত মাস। খোশ আমদেদ মাহে রমজান। এসেছে আল্লাহ তাআলার অধিক থেকে অধিকতর নৈকট্য লাভের সেরা সময়, পরকালীন পাথেয় অর্জনের অভাবনীয় মৌসুম। পাপ-পঙ্কিলতার নিকষ আঁধার মুছে পুণ্যের রশ্মিতে জীবন ভরিয়ে তোলার আরও একটি সুযোগ এলো মুমিন-মুসলমানের সমুখে। সিয়াম-সাধনা, ইবাদত-বন্দেগি, জিকির-আসকার এবং তাজকিয়া ও আত্মশুদ্ধির ভরা বসন্ত। এক মাস সংযম সাধনার পর আসবে আনন্দের ঈদুল ফিতর।

গতকাল রাতে এশার পরপরই মুসল্লিরা তারাবির সালাত আদায় করেছেন। কেউ মসজিদে, কেউ আপন গৃহে। ভোররাতে সেহরি খেয়ে আজ রোজা শুরু করেছেন রোজাদাররা। ঢাকায় প্রথম দিন সেহরির শেষ সময় ছিল রাত ৫টা ৪ মিনিট। আজ রবিবার প্রথম রোজায় ইফতারের সময় ৬টা ২ মিনিট। বহু ফজিলত ও পুণ্যময় বৈশিষ্ট্যে ভরা এ মাসটিতেই পবিত্র কুরআন নাজিল হয়। এ মাসেই রয়েছে সহস্র মাসের চেয়ে সেরা একটি রাত-লাইলাতুল কদর। আগামী ২৭ মার্চ দিবাগত রাতে পবিত্র লাইলাতুল কদর পালিত হবে। গতকাল সন্ধ্যায় বায়তুল মোকাররমে ইসলামিক ফাউন্ডেশনের সভাকক্ষে জাতীয় চাঁদ দেখা কমিটির সভায় দেশের আকাশে রমজান মাসের চাঁদ দর্শনের খবর জানান ধর্মবিষয়ক মন্ত্রণালয়ের উপদেষ্টা আ ফ ম খালিদ হোসেন।

ইসলাম ধর্ম অনুযায়ী, রমজান মাসে প্রতিটি নেক আমলের সওয়াব আল্লাহ পাক ৭০ গুন বাড়িয়ে দেন। অন্যদিকে সৌদি আরবসহ সিরিয়া, কুয়েত, কাতার, লেবানন, মিশর, মরক্কো,বাহরাইন, আরব আমিরাত, আরান, ইরাক, জর্ডান, ইন্দোনেশিয়া, জাপান, মালয়েশিয়া, দ.কোরিয়া, সিংগাপুর, অস্ট্রেলিয়া, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, ইউরোপসহ বহু দেশে গতকাল থেকে রোজা শুরু হয়েছে। রোজা ইসলাম ধর্মের অন্যতম স্তম্ভ। প্রত্যেক সুস্থ-সবল মুসলমানের জন্য এই রোজা ফরজ। এর অনেক তাৎপর্য ও ফজিলতের কথা কুরআন-হাদিসে বিস্তারিতভাবে বিধৃত হয়েছে। মুসলিম বিশ্বে প্রতি বছর অপূর্ব আবহে রমজান পালিত হয়। বছরের অন্যান্য সময়ের তুলনায় ইবাদত-বন্দেগিতে বেশি মনোনিবেশ করেন প্রতিটি মুসলমান। রমাদানের ফরজ হওয়া সম্পর্কে মহান আল্লাহ তাআলা পবিত্র কালামে সুরা বাকারার ১৮৩ নম্বর আয়াতে ইরশাদ করেন :‘হে ইমানদারগণ! তোমাদের ওপর রোজা ফরজ করা হয়েছে, যেমনি ফরজ করা হয়েছিল তোমাদের পূর্ববর্তীদের ওপর। যেন তোমরা তাকওয়া বা আল্লাহভীতি অর্জন করতে পারো।’ এ সম্পর্কে পবিত্র কুরআনে সুরা বাকারার ১৮৫ নম্বর আয়াতে আল্লাহ তাআলা আরও বলেন :‘রমাদান মাসই হলো সেই মাস, যাতে নাজিল করা হয়েছে পবিত্র কুরআন, যা মানুষের জন্য হিদায়াত, সৎ পথের সুস্পষ্ট নিদর্শন এবং হক ও বাতিলের পার্থক্যকারী।

 

অতএব তোমাদের মধ্যে যে ব্যক্তি এ মাসটি পাবে, সে অবশ্যই রোজা রাখবে। তবে যে অসুস্থ অথবা মুসাফির থাকবে, সে পরবর্তী সময় তা পূরণ করে নেবে। আল্লাহ তোমাদের জন্য সহজ করতে চান, কঠিন করতে চান না; যাতে তোমরা গণনা করে তা পূরণ করো। আল্লাহ তাআলা তোমাদের (কুরআনের মাধ্যমে) যে পথ দেখিয়েছেন, তার জন্য তোমরা তার মাহাত্ম্য বর্ণনা করো এবং তার কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করো।’ আবু হুরায়রাহ্ (রা.) হতে বর্ণিত। তিনি বলেন, রসুল সাল্লাল্লাহু আলাহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যখন রমজান মাস আসে আসমানের দরজাগুলো খুলে দেওয়া হয় এবং দোজখের দরজাগুলো বন্ধ করে দেওয়া হয়, আর শয়তানকে শৃঙ্খলিত করা হয়। (সহি বুখারি, মুসলিম)। অন্য হাদিসে এসেছে, জান্নাতের আটটি দরজা রয়েছে। এর মধ্যে একটি দরজার নাম রাইয়ান। রোজাদার ব্যতীত আর কেউ ঐ দরজা দিয়ে প্রবেশ করতে পারবে না। (সহি বুখারি, মুসলিম)। রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম বলেছেন, আল্লাহ তায়ালা এরশাদ করেছেনে, যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমজান মাসের রোজা রাখবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে রমাদান মাসের রাতে ইবাদত করে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। যে ব্যক্তি ইমানের সঙ্গে ও সওয়াবের নিয়তে কদরের রাতে ইবাদত করে কাটাবে তার আগের সব গুনাহ মাফ করে দেওয়া হবে। (বুখারি, মুসলিম)। মানুষের শরীরের সুস্থতা ও নিরাপত্তা লাভ হয় এবং গুনাহমুক্ত জীবন যাপনের তাওফিক হয় ও সার্বিকভাবে হেফাজতে থাকে।’ ইসলামের ইতিহাসে দ্বিতীয় হিজরি সনে রমজান মাসে রোজা পালন ফরজ করা হয়। প্রিয়নবী হজরত মুহাম্মদ সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম জীবনে ৯টি রমজান সিয়াম বা রোজা পালন করেছেন। কারণ রমজানের রোজা দ্বিতীয় হিজরির শাবান মাসে ফরজ করা হয়েছিল এবং রসুল সাল্লাল্লাহু আলাইহে ওয়া সাল্লাম একাদশ হিজরি বছরের রবিউল আউয়াল মাসে ওফাত লাভ করেন।