সিদ্ধিরগঞ্জে লিকেজ আতঙ্ক, প্রতিনিয়তই ঘটছে বিস্ফোরণ

প্রকাশিত: ২:২৭ অপরাহ্ণ, মার্চ ৩, ২০২৫

নারায়ণগঞ্জ প্রতিনিধি:

নারায়ণগঞ্জের সিদ্ধিরগঞ্জের পশ্চিম ধনকুন্ডা এলাকায় গ্যাসের লিকেজ থেকে প্রতিনিয়তই ঘটছে বিস্ফোরণের ঘটনা। সর্বশেষ আজ সোমবার (৩ মার্চ) ভোরে তিতাস গ্যাস লাইনের লিকেজ থেকে বিস্ফোরণে দুই পরিবারের নারী ও শিশুসহ আটজন দগ্ধ হওয়ার ঘটনা ঘটেছে। এরপর গ্যাস লিকেজ নিয়ে আতঙ্কে রয়েছে এলাকাবাসী।এলাকাবাসীর অভিযোগ, তিতাস গ্যাসের অফিসে অভিযোগ দিয়েও কোনো প্রতিকার পাচ্ছেন না তারা। এক জায়গায় লিকেজ ঠিক করে দিয়ে গেলেও অন্য জায়গায় লিকেজ দেখা দিয়েছে। এছাড়া এলাকার বিভিন্ন জায়গায় গ্যাসের বুদবুদও দেখা যায়।

শান্তিবাগ এলাকার বাসিন্দা নুরুল হক বলেন, আমাদের এলাকার অনেক জায়গায় লিকেজ আছে। তিতাস গ্যাসের অফিসে আবেদন জানিয়েও আমরা কোনো প্রতিকার পাইনি। গত ২ বছর আগেও পাশের আরেকটি বাড়িতে এমন বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে।

তিনি আরও বলেন, যেই বাড়িতে বিস্ফোরণ ঘটেছে সেই বাড়ির নিচে দিয়ে গ্যাসের পাইপ আছে। সেটার কয়েক জায়গায় লিকেজ রয়েছে। সেটা এলাকার সবাই জানে। বৃষ্টি হলে বাড়ির চারপাশ দিয়ে গ্যাসের বুদবুদ ওঠে।’একই এলাকার আসাদ মিয়া বলেন, কয়েক মাস আগেও আমার বাড়ির নিচে গ্যাসের বিস্ফোরণ ঘটেছে। আমার বাড়ির স্ল্যাব ফেটে গেছে। এই এলাকার কয়েকটি বাড়িতে প্রায়ই আগুনের ঘটনা ঘটে। এখনতো এই এলাকায় হাঁটতে ভয় লাগে।

এ বিষয়ে তিতাস গ্যাস ট্রান্সমিশন অ্যান্ড ডিস্ট্রিবিউশন পিএলসির ব্যবস্থাপনা পরিচালক মামুনুর রশীদ ঢাকা পোস্টকে বলেন, আমি ঘটনাস্থল পরিদর্শনে এসেছি। আমি বিষয়টি তদন্ত করছি। তবে এখনো লিকেজ আছে।

তিনি আরও বলেন, কোন বাড়ির গ্যাস লাইনের রাইজার সাধারণত বাড়ির বাইরে থাকে। কিন্তু এই বাড়ির রাইজার বাড়ির ভেতরে। এই বাড়ির মালিক লোকাল লোক দিয়ে এই লাইন টেনেছেন বলে আমরা ধারণা করছি। আমরা বাড়ির মালিকের সঙ্গে যোগাযোগের চেষ্টা করছি। লিকেজের বিষয়ে তিনি বলেন, কেউ যদি অভিযোগ করে আমরা সেখানে লিকেজ সারিয়ে দেই।

সোমবার বিস্ফোরণস্থলে সরেজমিনে দেখা যায়, দুইটি রুমের প্রায় সবকিছুই পুড়ে গেছে এবং বিস্ফোরণে বাড়ির দেয়ালের কিছু অংশে ফাটল ধরেছে। ভোরে ওই এলাকার মো. ইব্রাহীম খলিলের আমেনা ভিলায় ভোরে বিস্ফোরণের ঘটনায় শিশু ও নারীসহ ৮ জন দগ্ধ হয়ে জাতীয় বার্ন ও প্লাস্টিক সার্জারি ইনস্টিটিউটের জরুরি বিভাগে চিকিৎসাধীন রয়েছে।

হাসপাতাল সূত্রে জানা যায়, মো. সোহাগ (২৩), মো. হান্নান (৪০) ও শিশু সুমাইয়া ৪০ শতাংশের বেশি দগ্ধ হয়েছে। বাকিদের মধ্যে রূপালী (২০) ৩৪ শতাংশ, লাকী (৩০) ২২ শতাংশ, মো. সাব্বির (১৬) ২৭ শতাংশ, সামিয়া (৯) ও জান্নাত (৩) ৭ শতাংশ দগ্ধ হয়েছে।

প্রত্যক্ষদর্শী সুমন মোল্লা বলেন, রাতে বিস্ফোরণের শব্দ পেয়ে আমরা বের হয়ে দেখি সবার শরীরের প্রায় বেশিরভাগ অংশ ঝলসে গেছে। তাদের চিৎকার চেঁচামেচিতে আশপাশের সব মানুষ জড়ো হয়ে তাদের উদ্ধার করে ৮ জনকে হাসপাতালে পাঠাই। তবে বাচ্চাটার অবস্থা খুবই খারাপ ছিল।

নারায়ণগঞ্জ ফায়ার সার্ভিসের উপ সহকারী পরিচালক আব্দুল্লাহ আল আরেফীন ঘটনাস্থল পরিদর্শন এসে সাংবাদিকদের বলেন, রাত আড়াইটার দিকে এই বিস্ফোরণের ঘটনা ঘটে। ঘটনাস্থল একটা সেমি পাকা ভবন। যার নিচে দিয়ে একটা গ্যাসের লাইন গিয়েছে। আমরা পরীক্ষা করে দেখলাম ওই গ্যাসের লাইনে একটা লিকেজ আছে। ওই লিকেজটা পুরোনো। লিকেজ থেকে ঘরগুলোতে একটা গ্যাস চেম্বার তৈরি হলে আগুনের সংস্পর্শে এসে এই বিস্ফোরণ ঘটে। পাশাপাশি ২টি রুমের একটিতে ৩ জন ছিল। আরেকটিতে ৫ জন ছিল। তারা ঢাকা বার্ন ইউনিটে চিকিৎসাধীন আছে।