টিসিবি কার্ড না পাওয়ায় দুর্ভোগে মাদারীপুরের ১৭ হাজার পরিবার

প্রকাশিত: ১১:০০ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ৪, ২০২৫

মাদারীপুর প্রতিনিধি:

স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় টিসিবি পণ্য থেকে বঞ্চিত হয়েছে মাদারীপুর জেলার ১৭ হাজার ২৩৯ অসহায় পরিবার। এর মধ্যে রাজৈর পৌরসভারই ৫ হাজার ৫১৬ সুবিধাভোগী পরিবার বঞ্চিত রয়েছে। দেড় মাস পার হলেও স্মার্ট কার্ড না পাওয়ায় দুর্ভোগে পড়েছেন পুরোনো এই কার্ডধারীরা। তারা রমজান মাসেও পাচ্ছেন না স্বল্পমূল্যের টিসিবি পণ্য। এতে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন ভুক্তভোগীরা। এদিকে একে অপরের ওপর দায় চাপাচ্ছেন কর্মকর্তারা। বলছেন, যাচাই-বাছাই শেষে দেওয়া হচ্ছে কার্ড।

রাজৈর পৌরসভা সূত্রে জানা যায়, এই পৌরসভার ৯টি ওয়ার্ডে ৬ হাজার ৬১৮টি টিসিবি সুবিধাভোগী পরিবার রয়েছে। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে এদের কার্ডগুলো নবায়ন করে স্মার্ট কার্ডে পরিবর্তিত করতে জমা নেওয়া হয়। গত ১৩ জানুয়ারি ছিল প্রয়োজনীয় কাগজপত্র জমা দেওয়ার শেষ সময়। এর মধ্যে গত ফেব্রুয়ারি মাসে ৯টি ওয়ার্ডে মোট ১১০২টি স্মার্ট কার্ড বিতরণ করে রাজৈর পৌরসভা। রমজান মাসের আগে ও দ্বিতীয় রোজায় দুইবার তাদের মাঝে টিসিবির পণ্য বিক্রি করা হয়। কিন্তু বাকি থাকা ৫ হাজার ৫১৬টি অসহায় পরিবার বঞ্চিত হয়। দীর্ঘ দেড় মাস পার হয়ে গেলেও যাচাই-বাছাই শেষ না হওয়ায় স্মার্ট কার্ড হাতে পাননি সুবিধাভোগী পরিবারগুলো।

টিসিবি ডিলাররা জানান, রমজান মাস উপলক্ষে ১ কেজি চিনি, ২ কেজি ডাল, ২ লিটার সয়াবিন তেল, ২ কেজি ছোলা ও ৫ কেজি চালের প্যাকেজ ৬৬০ টাকায় বিক্রি করা হয়।

দ্বিতীয় রোজায় রাজৈর পৌরসভার ৩নং ওয়ার্ডের পূর্ব স্বরমঙ্গল গ্রামের তেতুলতলা এলাকায় বিক্রি হয় স্বল্পমূল্যের এসব টিসিবি পণ্য। ৬৬০ টাকা হাতে নিয়ে টিসিবি পণ্যের গাড়ির কাছে ছুটে যান রিতা বেগম, রিজিয়া বেগম, অহিদুল বেপারী, জাহিদ, ফিরোজা বেগম, খাদিজা, ফাতেমা, আব্দুস সোবহানসহ অনেকেই। কিন্তু লাইনে দাড়ালেও স্মার্ট কার্ড না থাকায় তাদেরকে দেওয়া হয়নি স্বল্পমূল্যের পণ্য। পরে দুঃখ ভারাক্রান্ত মনে বাড়ি ফিরে যাওয়ার সময় তারা ঢাকা পোস্টের প্রতিবেদককে বলেন, পুরোনো টিসিবির কার্ড নিয়ে স্বল্পমূল্যের পণ্য কিনতে আসছিলাম। শুনছিলাম পুরোনো কার্ডেই দেবে। কিন্তু আইসা দেখি স্মার্ট কার্ড ছাড়া কারো কাছে টিসিবির মালামাল বেঁচে না। পৌরসভা থেকে আমাগো স্মার্ট কার্ড না দেওয়ায় দুই মাস যাবৎ টিসিবির মালামাল কিনতে পারি না। রমজান মাসেও কিনতে পারলাম না। বাজার থেকে চড়া দামে চিনি, তেল, ডাল, ছোলা, চাল কেনা আমাদের মতো গরীব মানুষের জন্য কষ্টসাধ্য ব্যাপার। অনেকক্ষণ দাড়াইছিলাম তারপরও দিল না।

টিসিবি ডিলার শামীমা ট্রেডার্সের স্বত্বাধিকারী শামীমা নাসরিন বলেন, এই ওয়ার্ডে মোট কার্ড ছিল ৫৩৪ টি। সেখানে স্মার্ট কার্ড পেয়েছেন ১২৬ জন। বাকিগুলো এখনো ডিজিটাল হয়নি। আমাকে ১২৬টি প্যাকেজ বরাদ্দ দিয়েছে তাই শুধু তাদেরকেই দেওয়া সম্ভব হচ্ছে। কিন্তু ১২৬টি দিয়ে তো আর ৫৩৪টি কার্ডের চাহিদা পূরণ করা সম্ভব না। এ সমস্যাগুলো পৌরসভা থেকে বলতে পারবে।

এ ব্যাপারে রাজৈর পৌরসভা প্রশাসক ও উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. মাহফুজুল হক বলেন, আমরা এখান থেকে কাজ শেষ করে ঢাকায় পাঠিয়েছি। এখন ঢাকা থেকে কার্ডগুলো আসার পর আমরা অ্যাপ্রুভাল দিলেই হয়ে যাবে। এতে আরও ১৫/২০ দিন সময় লাগতে পারে। সারাদেশের কার্ড নিয়ে কাজ চলছে। তাই উপজেলা পর্যায়ে আসতে দেরি হচ্ছে। এই কার্ডগুলো ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) নিয়ন্ত্রণ করে।

রমজান মাসের শুরুতেই সুবিধাভোগীরা টিসিবি পণ্য পেলেন না তবে সামনে পুরোনো কার্ডে দেওয়া হবে কিনা জানতে চাইলে তিনি বলেন, স্মার্ট কার্ড ছাড়া দেওয়ার কোনো সুযোগ নেই। তবে বিষয়টি ডিসি স্যারসহ সংশ্লিষ্ট দপ্তরে জানিয়েছি। পরবর্তী সময়ে যদি কার্ড না হয় সেই ক্ষেত্রে হয়তো ন্যাশনাল আইডি কার্ডের মাধ্যমে টিসিবি পণ্য বিক্রি করা হতে পারে। এ বিষয়ে জেলা টিসিবি অফিস থেকে ভালো বলতে পারবে।

ট্রেডিং কর্পোরেশন অব বাংলাদেশ (টিসিবি) মাদারীপুরের উপ-পরিচালক মো. কামাল হোসেন বলেন, যতগুলো স্মার্ট কার্ড হয়েছে ততোগুলো বরাদ্দ আমরা পেয়েছি। এর বেশি পাইনি। আমাদের এই কার্যক্রম ২০২২ সাল থেকে শুরু হয়েছে। এরমধ্যে যাচাই-বাছাই করে কার্ড দেওয়া হয়েছে। পরবর্তীতে আবার বাকিগুলো উপজেলা, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পর্যায়ে নতুন করে আপলোড দিতে বলা হয়েছিল। ইতোমধ্যে সারাদেশে ৫৭ লাখ কার্ড বিতরণ করা হয়েছে। আরো ৬ লাখ কার্ড প্রিন্টেড পর্যায়ে আছে। বাকি আছে ৩৭ লাখ। প্রতিদিন আমাদের এনটিআরসি সার্ভার থেকে ৫০ হাজার তথ্য ভেরিফিকেশন করতে পারে।

তিনি আরও বলেন, মাদারীপুর জেলায় মোট কার্ডের সংখ্যা ৫১ হাজার ৩৪৮টি। এরমধ্যে স্মার্ট কার্ড বিতরণ করা হয়েছে ৩৪ হাজার ১০৯টি। বাকিগুলো অনলাইনে আপলোড হচ্ছে। ওই ৬ লাখের মধ্যেও কিছু থাকতে পারে। আমাদের হাতে এলে দিয়ে দেব। এছাড়া রমজান মাস উপলক্ষে আগামী ৫ মার্চ থেকে শুধুমাত্র জেলা সদরে ট্রাকসেল কার্যক্রম পরিচালনা করা হবে। সেখান থেকে টিসিবি কার্ড ছাড়াই জাতীয় পরিচয়পত্র দিয়ে যে কেউ পণ্য নিতে পারবেন। পরবর্তী সময়ে উপজেলা পর্যায়ে চালু হলে সবাইকে জানিয়ে দেওয়া হবে।