মুমিনের ইফতার ভাবনা কেমন হওয়া উচিত?

প্রকাশিত: ১২:০৪ অপরাহ্ণ, মার্চ ৫, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

সাহরির মাধ্যমে রোজা শুরু হয়। শেষ হয় সূর্যাস্তের সময় ইফতারের মাধ্যমে। ইফতার রোজা শেষ করার অন্যতম অনুষঙ্গ। সময় হওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ইফতার করতে হয়। রাসূল সা. সূর্যাস্তের সময় ইফতার করতে এবং দেরি না করতে নির্দেশ দিয়েছেন। হজরত সাহল ইবনে সাদ রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন—মানুষ যতদিন পর্যন্ত তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন কল্যাণের মধ্যে থাকবে। (বুখারি, মুসলিম)

অপর হাদিসে হজরত আবু হুরায়রা রাদিয়াল্লাহু আনহু বর্ণনা করেন, রাসুলুল্লাহ সাল্লাল্লাহু আলাইহি ওয়া সাল্লাম বলেছেন, ‘যতদিন মানুষ তাড়াতাড়ি ইফতার করবে ততদিন দ্বীন ইসলাম বিজয়ী থাকবে। কেননা, ইহুদি ও নাসারাদের অভ্যাস হলো ইফতার দেরিতে করা। (আবু দাউদ)রমজানে ইফতার ঘিরে আমাদের মাঝে ব্যাপক আয়োজন দেখা যায়। আয়োজনের ক্ষেত্রে অনেকেই বাড়াবাড়ি করেন। বাহারি আয়োজন করতে গিয়ে অনেক খাবার নষ্ট করেন। যা কোনোভাবেই কাম্য নয়।

ভেবে দেখা উচিত আমরা যখন খাবার নষ্ট করছি, তখন পৃথিবীর অসংখ্য মানুষ না খেয়ে রয়েছেন। ক্ষুধা নিবারণের সাধারণ উপকরণটুকুও নেই তাদের কাছে। মানবিক দৃষ্টিভঙ্গির বাইরেও পরকালে আল্লাহ তায়ালার কাছে অপচয়ের শাস্তি বিষয়ে ভয় করা উচিত। মুমিন হিসেবে জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রের মতো ইফতারেও রাসূল সা.-এর অনুসরণ করা উচিত।

রাসূল সা. কাচা, শুকনো খেজুর অথবা কখনো কখনো শুধু পানি দিয়ে ইফতার করতেন। আনাস বিন মালেক (রা.) থেকে বর্ণিত, তিনি বলেন, ‘নবী (সা.) নামাজের আগে কয়েকটি কাঁচা খেজুর খেয়ে ইফতার করতেন। যদি কাঁচা খেজুর না থাকত, তাহলে শুকনো খেজুর দিয়ে। যদি শুকনো খেজুরও না থাকত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে।’ (সুনানে তিরমিজি, হাদিস : ৬৩২)

অন্য হাদিসে ভিন্ন বর্ণনায় এসেছে, রাসুল (সা.) (মাগরিবের) নামাজের আগে তাজা খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। যদি তাজা খেজুর পাওয়া না যেত, তবে শুকনো খেজুর দিয়ে ইফতার করতেন। আর যদি শুকনা খেজুর পাওয়া না যেত তাহলে কয়েক ঢোক পানি দিয়ে ইফতার করতেন। ( মুসনাদে আহমাদ, হাদিস : ৩/১৬৪)
এই হাদিসগুলোর মাধ্যমে রাসূল সা.-এর ইফতারের চিত্র স্পষ্টভাবে ফুটে উঠে। অথচ আমরা কেউ তা অনুসরণের চেষ্টা করি না। রমজান মাস এলে আমাদের বাসা-বাড়িতে সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র দেখা যায়—

রমজানে অনেকের দৃষ্টি নিবন্ধ থাকে ফ্রিজে খাবার স্তুূপ করে রাখার মধ্যে। যেন তারা মান্থ অব ফাস্টিং অর্থাৎ রোজার মাস পালনের পরিবর্তে মান্থ অব ফিস্টিং (ভোজনের মাস) উদযাপন করছেন।

রোজার ফজিলতের কথা তুলে ধরতে আমরা অমুসলিমদের বলে থাকি— আমাদের ডায়েট ঠিক রাখতে, পরিমিত খাবার গ্রহণ করতে এবং আল্লাহর দেওয়া নেয়ামতের কৃতজ্ঞতা আদায় করতে এই মাসে রোজা পালন করি আমরা।

শতভাগ সত্য এই কথাগুলো আমরা মানুষকে বললেও নিজেদের কাজকর্ম সব এর বিপরীতে করি। রমজানে অন্য যেকোনো সময়ের তুলনায় বেহিসাবী খাবার গ্রহণ করি। ফলে অতিরিক্ত ওজন বেড়ে যায়। খাবারের ভয়াবহ অপচয় হয়। আমাদের কথার সঙ্গে এই কাজগুলো সম্পূর্ণ সাংঘর্ষিক।

এছাড়াও রমজান মাসে খাবারের এতো বেশি আয়োজন করতে গিয়ে আমাদের ঘরের নারীদের সময় নষ্ট হয়। রমজানের বেশির ভাগ সময় তাদের রান্নাঘর ও খাবারের আয়োজনে ব্যস্ত কাটাতে হয়। ফলে তারা আমল ইবাদতে মনোযোগ দিতে পারেন না। সারাদিন কাজ করতে করতে ক্লান্ত হয়ে পড়েন। অথচ পুরুষের মতো তাদেরও ইবাদতের মাস রমজান। শুধুমাত্র আমাদের বাহারি আয়োজনের খাবার প্রস্তুত করতে গিয়ে তাদের আমল নষ্ট হচ্ছে। তারা রমজানের ফজিলত থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন।
রাসূল সা. বলেছেন, দুনিয়াতে যাদের পেটগুলো পূর্ণ থাকবে কেয়ামতের দিন তারা সব থেকে বেশি ক্ষুধার্ত থাকবে। (আল জামিউস ছাগির, হাদিস : ২২১১)

এই হাদিস শোনার পর থেকে বর্ণনাকারী যুহাইফা রা. ইন্তেকালের আগ পর্যন্ত আর কখনো পেট ভরে খাবার গ্রহণ করেননি। ( আল মুজামুল আওসাত লিত তাবারানি, ৮/ ৩৭৮)

ইমাম আহমদ রহ.-কে জিজ্ঞাসা করা হয়েছিল, পেট মোটা কোন মানুষের অন্তর কি নরম হতে পারে? তিনি জবাবে বলেছিলেন, এটা আমি বিশ্বাস করি না।