স্বস্তি ফিরেছে ভোলার কাঁচাবাজারে, ৩০ টাকায় লেবু ১৫ টাকায় টমেটো!

প্রকাশিত: ১:০২ অপরাহ্ণ, মার্চ ৬, ২০২৫

ভোলা প্রতিনিধি:

বিগত বছরগুলোতে পবিত্র মাহে রমজানকে ঘিরে ভোলায় নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের বাজার অস্থিতিশীল থাকলেও এ বছর বাজারগুলোর চিত্র সম্পূর্ণ ভিন্ন। বেশিরভাগ নিত্যপণ্যের দাম নিম্নবিত্ত-মধ্যবিত্তদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে। এতে স্বস্তি ফিরেছে সাধারণ ক্রেতাদের মাঝে। স্থিতিশীল রয়েছে গরু, খাসি ও মুরগির দাম। কিছুটা বেড়েছে মাছের দাম। তবে বোতলজাত সয়াবিন তেল নিয়ে রয়েছে মিশ্র প্রতিক্রিয়া।

বিক্রেতারা বলছেন, বাজারে পণ্যের বেশি চাহিদা থাকলেও পর্যাপ্ত সরবরাহ রয়েছে। ফলে পণ্যের সংকট না থাকায় দাম ক্রেতাদের নাগালের মধ্যে রয়েছে।

সরেজমিনে গত মঙ্গলবার ও বুধবার ভোলা জেলা শহরের কাঁচাবাজার, কিচেন মার্কেট ও খালপাড় মুদি মালের পাইকারি ও খুচরা দোকানগুলো ঘুরে দেখা গেছে, উপচে পড়া ভিড় ক্রেতাদের। স্বাচ্ছন্দ্যে যে যার পছন্দমত পণ্য কিনছেন। সপ্তাহের ব্যবধানে রমজান মাসকে কেন্দ্র করে কোনো সবজির দাম বাড়েনি। সর্বনিম্ন রয়েছে টমেটোর দাম আর সর্বোচ্চ দাম ঢেঁড়সের।

প্রতি কেজি টমেটো ১৫ থেকে ২০ টাকা, ঢেঁড়স ৮০ টাকা। বেগুন ৪০, আলু ২২ টাকা, শসা ৩০ টাকা, গাজর ৩০ টাকা, কাচামরিচ ৫০ টাকা, আকারভেদে প্রতিহালি লেবু ৩০ থেকে ৪০ টাকা, ফুলকপি ৩০ টাকা, মিষ্টি কুমড়া ২০ টাকা, প্রতি কেজি ধনেপাতা ৪০ টাকা, বরবটি ৪০, চিচিঙ্গা ৫০ টাকা, বিচিওয়ালা সিম ৩০ টাকা, বাঁধাকপি প্রতি পিস ২০ টাকা ও প্রতি পিস ডিম ১০ টাকা।

মসল্লা জাতীয় পণ্যসহ অন্যান্য পণ্যের দামও সহনশীল। প্রতি কেজি পেঁয়াজ ৪৫ টাকা, রসুন ২২০ টাকা, আদা ১১০ টাকা, একশ টাকা বেড়ে প্রতি কেজি বড় এলাচি ৪ হাজার ৮০০ টাকা,জিরা ৭০০ টাকা, দারুচিনি ৫০০ টাকা, লবঙ্গ ১৬০০ টাকা। ছোলা ১০০ টাকা, বেসন ৮০, চিড়া ৭০ টাকা, ইসবগুল কেজি ১৬০০ টাকা ও চিনি ১১৮-২০ টাকা। খোলা সয়াবিন তেল ১৮৫-১৯০ টাকা, কোয়ালিটি সয়াবিন তেল ১৬৮ টাকা।

কেজি প্রতি ১০ থেকে ২০ টাকা বেড়েছে ফলের দাম, স্থিতিশীল রয়েছে খেজুরের দাম। প্রতি কেজি কালমি খেজুর বিক্রি হচ্ছে ৯০০ টাকায়, মাবরুম ১৩০০, ছড়া খেজুর ৭০০, একশ টাকা বেড়ে মেডজুল খেজুর ১৪০০, মরিয়ম ১২০০, আজওয়া ১৩০০ টাকা

তবে ভোলার মেঘনা তেতুলিয়া নদীতে ইলিশসহ সব ধরনের মাছ ধরার ওপর ২ মাসের সরকারি নিষেধাজ্ঞার ফলে কিছুটা প্রভাব পড়েছে মাছের বাজারে। ফলে ২০ থেকে ৫০ টাকা পর্যন্ত বেড়েছে সাগর ও পুকুরে চাষের মাছের দাম। আড়াইশ গ্রামের প্রতি কেজি তেলাপিয়া মাছ বিক্রি হচ্ছে ২১০ টাকায়, পাঙ্গাস ১৯০ টাকায়, তিন কেজি ওজনের রুইয়ের দাম প্রতি কেজি ৫০০ টাকা, বড় সাইজের কোরাল ৮০০ টাকা। একশ টাকা বেড়ে আধাকেজি ওজনের সাগরের ইলিশ বিক্রি হচ্ছে ১২শ টাকা কেজি দরে।

স্থিতিশীল রয়েছে মাংসের দাম। সোনালী মরগি ৩০০ টাকা, কক/লেয়ার ৩৩০, সাদা ব্রয়লার ১৯০ ও দেশি মুরগি ৬০০‌টাকা। গরুর মাংস ৭৫০ টাকা ও খাসি ১ হাজার টাকা।

ভোলা জেলা শহরের বাসিন্দা ক্রেতা মো. হোসেন, মো. আশরাফ ও আজিজুল ঢাকা পোস্টকে বলেন, রমজান মাসে বিগত বছরগুলোতে আমরা দেখেছি ব্যবসায়ীরা সিন্ডিকেটের মাধ্যমে নানান অজুহাতে নিত্যপণ্যের দাম তাদের খেয়াল খুশি মতো বাড়িয়ে বিক্রি করতেন। বাজারে এসে জিনিসপত্রের দাম শুনলে আমাদের ঘাম বেরিয়ে যেত, ইচ্ছে থাকলেও পছন্দের পণ্য কিনতে পারতাম না। এ বছর ভোলার বাজারগুলোতে সম্পূর্ণ ভিন্নচিত্র। রমজানের এক সপ্তাহ আগেও নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্য যে দামে কিনেছি ১ম থেকে ৪র্থ রমজানেও একই দামে কিনতে পারছি। এটা আমাদের মত মধ্যবিত্তদের ও নিন্মবিত্তের জন্য স্বস্তির। আমাদের আয় কম হলেও চাহিদা কম না। বাজারে নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম নাগালের মধ্যে থাকলে আমাদের জন্য অনেক ভালো হয়। এই রমজানে সবজি, মাছ, মাংস, ছোলা খেজুর তেল চিনিসহ সকল ধরনের পণ্যের দামই আমাদের ক্রয়ক্ষমতার মধ্যে রয়েছে, এতে আমরা খুশি।

তবে মো. সহিদুল, তাজউদ্দিনসহ বেশ কয়েকজন ক্রেতা অভিযোগ করে বলেন, আমরা বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে পারছি না। বোতলজাত সয়াবিন তেল কিনতে গেলে মুদি ব্যবসায়ীরা বলছেন তেল নেই, সরবরাহ কম। এক লিটারের সয়াবিন তেলের বোতল মাঝে মধ্যে পাওয়া গেলেও ৫ লিটারের বোতল বাজার থেকে উধাও। আবার সয়াবিন তেলের সঙ্গে একই কোম্পানির পণ্য ক্রয়ের জন্য বলেন, এটা হয়রানি।

ক্রেতাদের অভিযোগের পরিপেক্ষিতে শহরের খালপাড় রোডের কয়েকটি বোতলজাত ভোজ্যতেল পরিবেশকদের কাছে এ বিষয়ে জানতে চাইলে তারা অস্বীকার বলেন, কোম্পানি আমাদের তেল দিচ্ছে না, দিলেও কম দিচ্ছে। আমরা কোনো ক্রেতাকে বোতলজাত সয়াবিন তেলের সঙ্গে অন্য কোনো পণ্য কেনার জন্য চাপ দেই না। কোম্পানির নিজস্ব প্রতিনিধি আছেন, হয়তো তারা করতে পারেন। সরবরাহ যা আসে তাই আমরা খুচরা ও পাইকারি বিক্রি করি।

সবজি বিক্রেতা জহুরুল ইসলাম, মঞ্জুর আলম ও মো. হোসাইন বলেন, সবজির যথেষ্ট সরবরাহ রয়েছে। বাজারে কোনো সিন্ডিকেট নেই, সবজির দাম কম। রমজান মাসকে ঘিরে আমরা কোনো পণ্যের দাম বাড়িয়ে বিক্রি করছি না।লাভ কম করলেও লস হচ্ছে না।ক্রেতারা কম দামে পণ্য কিনতে পারছে,আমাদেরও বেশি বিক্রি হচ্ছে।

মাছ বিক্রেতা মো. রুবেল বলেন, নদীতে মাছ ধরায় দুই মাসের নিষেধাজ্ঞা থাকার বাজারে নদীর মাছ আসছে না। এতে পুকুরের মাছের ওপর ভরসা করতে হচ্ছে। তাই কেজি প্রতি ২০ টাকা বেড়েছে। প্রকারভেদে সাগরের মাছের দাম কেজি প্রতি প্রায় ৫০ টাকা বেড়েছে। মাছের সরবরাহ বাড়লে দাম কমবে।

মুদি ব্যবসায়ী আশিস সাহা বলেন, সব মুদি মালের দাম স্থিতিশীল রয়েছে, দাম বাড়েনি। বোতলজাত সয়াবিন তেল ছাড়া কোনো মালের সংকট নেই।মালামাল কেনা অনুযায়ী বিক্রি করছি।

ভোলা জেলা কৃষি বিপণন কর্মকর্তা মোস্তফা সোহেল ঢাকা পোস্টকে বলেন, প্রতি বছর রমজান মাসে কিছু অসাধু ব্যবসায়ী নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর চেষ্টায় লিপ্ত থাকে। আমরা বাজার মনিটরিং কাউন্সিলিং ও মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করছি, ফলে অসাধু ব্যবসায়ীরা নিত্যপণ্যের দাম বাড়ানোর সুযোগ পাচ্ছে না। এতে সাধারণ ক্রেতারা স্বাচ্ছন্দ্যে তাদের পছন্দের পণ্যসামগ্রী কিনতে পারছেন। আমাদের সব কার্যক্রম চলমান রয়েছে।

এদিকে নিয়মিত বাজার মনিটরিংয়ের মাধ্যমে সকল নিত্যপ্রয়োজনীয় পণ্যের দাম রমজানের পরেও সহনীয় পর্যায়ে রাখার দাবি জানিয়েছেন সাধারণ ক্রেতারা।