শহীদ জননী জাহানারা ইমামের মৃত্যুবার্ষিকী আজ

প্রকাশিত: ১১:৪১ পূর্বাহ্ণ, জুন ২৬, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

শহীদ জননী জাহানারা ইমামের ২৯তম মৃত্যুবার্ষিকী আজ। ১৯৯৪ সালের এই দিনে তিনি মৃত্যুবরণ করেন। একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধে তার ছেলে শফি ইমাম রুমী শহীদ হন। এছাড়া তার স্বামী শরীফ ইমামও মুক্তিযুদ্ধ চলাকালীন সময়ে মারা যান।
একাত্তরে স্বামী-সন্তানহারা এই মা স্বাধীনতা-উত্তর বাংলাদেশে হয়ে ওঠেন মুক্তিযুদ্ধের প্রেরণা। তার নেতৃত্বেই ২৩ বছর আগে ৭১-এর যুদ্ধাপরাধীদের বিচার ও মৌলবাদী-সাম্প্রদায়িক রাজনীতি নিষিদ্ধকরণের দাবিতে নাগরিক আন্দোলন সূচিত হয়েছিল। বহু ঘাতপ্রতিঘাত অতিক্রম করে আজ তা বিজয়ের দ্বারপ্রান্তে উপনীত হয়েছে। বাংলাদেশে যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কার্যকর হওয়া শুরু হয়েছে। তার একাত্তরের দিনলিপি নিয়ে বিখ্যাত গ্রন্থ ‘একাত্তরের দিনগুলি’তে একজন মুক্তিযোদ্ধার মায়ের দৃঢ়তা, ত্যাগ ফুটে উঠেছে, যা তাকে দেশের মানুষের কাছে এক চির সম্মানের আসনে পৌঁছে দেয়।
১৯৯১ সালের ২৯ ডিসেম্বর গোলাম আযমকে জামায়াতে ইসলামী তাদের দলের আমির ঘোষণা করলে বাংলাদেশে জনবিক্ষোভের সূত্রপাত হয়। বিক্ষোভের অংশ হিসেবে জাহানারা ইমামের নেতৃত্বে ১৯৯২ সালের ১৯ জানুয়ারি ঘাতক দালাল নির্মূল কমিটি গঠন করা হয়। তিনি ওই কমিটির আহ্বায়ক হন। পাশাপাশি মুক্তিযুদ্ধের চেতনাবিরোধী প্রতিরোধ মঞ্চ, ১৪টি ছাত্রসংগঠন, প্রধান রাজনৈতিক জোট, শ্রমিক-কৃষক-নারী এবং সাংস্কৃতিক জোটসহ ৭০টি সংগঠনের সমন্বয়ে ১১ ফেব্রুয়ারি গঠন করা হয় মুক্তিযুদ্ধের চেতনা বাস্তবায়ন ও একাত্তরের ঘাতক দালাল নির্মূল জাতীয় সমন্বয় কমিটি। এর আহ্বায়ক নির্বাচিত হন জাহানারা ইমাম। তার নেতৃত্বেই এই কমিটি ১৯৯২ সালের ২৬ মার্চ গণ-আদালতের মাধ্যমে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে গোলাম আযমের ঐতিহাসিক বিচার সম্পাদন করা হয়। ১২ জন বিচারক সমন্বয়ে গঠিত গণ-আদালতের চেয়ারম্যান শহীদ জননী জাহানারা ইমাম গোলাম আযমের ১০টি অপরাধ মৃত্যুদণ্ডযোগ্য বলে ঘোষণা করেন। তার এই বিচারের পর দেশব্যাপী এই আন্দোলন ছড়িয়ে পড়ে। তৎকালীন সরকারের বিরোধিতা জেলজুলুম সহ্য করে তিনি এই আন্দোলন গড়ে তুলেছিলেন। আন্দোলন চলাকালীন সময়ে তার ক্যান্সার আরও বেড়ে যায়। আমেরিকায় চিৎকিসাধীন অবস্থায় তার মৃত্যু হয়।

জাহানারা ইমামের জন্ম ১৯২৯ সালের ৩ মে। বর্তমান পশ্চিমবঙ্গের মুর্শিদাবাদ জেলায়। ত্রিশ ও চল্লিশ দশকের রক্ষণশীল বাঙালি মুসলিম পরিবারে জন্ম হয় তার। তার বাবা সৈয়দ আবদুল আলী ছিলেন ডেপুটি ম্যাজিস্ট্রেট। মা সৈয়দা হামিদা বেগম।

১৯৪২ সালে মেট্রিক পাস করেন। ১৯৪৪ সালে রংপুর কারমাইকেল কলেজ থেকে আইএ পাশ করে ১৯৪৫ সালে ভর্তি হন কলকাতার লেডি ব্রেবোর্ন কলেজে। ১৯৬০ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে বিএড শেষ করে ১৯৬৪ সালে যুক্তরাষ্ট্র থেকে সার্টিফিকেট ইন এডুকেশন ডিগ্রি অর্জন করেন। ১৯৬৫ সালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাস্টার্স পাশ করেন ।=

তিনি তার কর্মজীবনে ময়মনসিংহের বিদ্যাময়ী বালিকা বিদ্যালয়, ঢাকার সিদ্ধেশ্বরী বালিকা উচ্চবিদ্যালয়, ঢাকা টিচার্স ট্রেনিং কলেজ শিক্ষকতা করেছেন। এছাড়া ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউটেও খণ্ডকালীন শিক্ষক হিসেবে কাজ করেছেন। সাহিত্যকর্মের জন্য তিনি ১৯৯১ সালে বাংলা একাডেমি পুরস্কারসহ অসংখ্য পুরস্কার পেয়েছেন।