শিক্ষার্থীদের ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, ইন্টার্ন চিকিৎসকদের কর্মবিরতি

প্রকাশিত: ৩:০৩ অপরাহ্ণ, মার্চ ৯, ২০২৫

নওগাঁ প্রতিনিধি:

হাইকোর্ট কর্তৃক পূর্ণাঙ্গ রায় প্রকাশ এবং পাঁচ দফা দাবিতে কমপ্লিট শাটডাউন ঘোষণা করে বিক্ষোভ এবং সংবাদ সম্মেলন করেছেন ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। চিকিৎসকদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে ক্লাস এবং পরীক্ষা বর্জন করে এতে অংশ নিয়েছেন নওগাঁ মেডিকেল কলেজের শিক্ষার্থীরা। শিক্ষার্থীরা দাবি আদায়ের লক্ষ্যে ১২ মার্চ পর্যন্ত সকল ক্লাস-পরীক্ষা বর্জনের ঘোষণা দিয়েছেন।

রোববার (৯ মার্চ) দুপুর ১২টায় প্রথমে মেডিকেল কলেজ থেকে একটি বিক্ষোভ মিছিল বের করেন ইন্টার্ন চিকিৎসকরা। মিছিলটি মেডিকেল কলেজের সামনের সড়ক প্রদক্ষিণ করে মেডিকেল কলেজের প্রধান ফটকের সামনে এসে থামে। পরে মেডিকেল কলেজের হলরুমে দাবি আদায়ের লক্ষ্যে সংবাদ সম্মেলন করেন ইন্টার্ন চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীরা।

সংবাদ সম্মেলনে ইন্টার্ন চিকিৎসকরা বলেন, দেশে প্রচলিত আইন অনুযায়ী এমবিবিএস অথবা বিডিএস ছাড়া কেউ চিকিৎসক পরিচয় দিতে পারবে না। সম্প্রতি এ নিয়ে উচ্চ আদালতে করা রিট দ্রুত খারিজ করতে হবে। মানহীন বেসরকারি মেডিকেল কলেজগুলো বন্ধ করতে হবে। রেজিস্টার্ড চিকিৎসকের প্রেসক্রিপশন ছাড়া ফার্মেসিগুলো ওটিসি লিস্টের বাইরে কোনো প্রকার ওষুধ বিক্রি করতে পারবে নাসহ পাঁচ দফা দাবি তুলে ধরেন।

সংবাদ সম্মেলনে চিকিৎসক এবং শিক্ষার্থীদের দাবির প্রতি সংহতি জানিয়ে বক্তব্য দেন ২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী ও নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুক্তার হোসেন।
নওগাঁ মেডিকেল কলেজের চতুর্থ বর্ষের শিক্ষার্থী সামিউল ইসলাম বলেন, আমরা বিগত ১২ বছর ধরে হাইকোর্ট থেকে একটি রায় চাচ্ছি। এখন পর্যন্ত ৯১ বার রায়ের তারিখ পেছানো হয়েছে, যা অত্যন্ত দুঃখজনক। আমাদের দাবিগুলো খুবই সাধারণ, আমরা চাচ্ছি এমবিবিএস এবং বিডিএসের বাইরে কেউ যেন নামের পূর্বে ডাক্তার লিখতে না পারে। আমরা চার বছর পড়াশোনা করে এরপর এমবিবিএস পাস করে ডাক্তার লিখতে পারি। কিন্তু একজন তিন মাসের একটি প্রশিক্ষণ নিয়ে নামের পূর্বে ডাক্তার লিখে রোগী দেখা শুরু করে। ফলে অনেক রোগীই ভুল চিকিৎসায় জীবন হারাচ্ছে।

২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের ইন্টার্ন চিকিৎসক সাইফুল ইসলাম বলেন, বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে এসে নামের পূর্বে ডাক্তার লিখে গ্রামাঞ্চলের মানুষদের ভুল চিকিৎসা দিয়ে চরম হুমকির মুখে ফেলা হচ্ছে। কারণ তারা জানে না, কোন রোগীকে কোন ধরনের চিকিৎসা দিতে হবে। তারা মুড়িমুড়কির মতো অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করে, যা একজন রোগীর জন্য চরম হুমকি। অথচ অ্যান্টিবায়োটিকের বিষয়ে তাদের কোনো জ্ঞানই নেই। একজন এমবিবিএস ডাক্তারই কেবল অ্যান্টিবায়োটিক প্রেসক্রাইব করতে পারে। তাই চিকিৎসা খাতকে বাঁচাতে ১২ মার্চ যেন হাইকোর্ট থেকে সঠিক রায় দেওয়া হয় সেই দাবি জানাচ্ছি।

২৫০ শয্যা নওগাঁ জেনারেল হাসপাতালের তত্ত্বাবধায়ক ডা. জাহিদ নজরুল চৌধুরী বলেন, বিএমডিসির ২৬নং ধারায় বলা আছে কেউ যদি এমবিবিএস এবং বিডিএস না হয় তাহলে নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে না। শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরা যে দাবি জানাচ্ছে এটি শুধু তাদের একার নয় এটি আমাদেরও দাবি। আমরা চাই দ্রুত যেন দাবিগুলো বাস্তবায়ন করা হয়।

নওগাঁ মেডিকেল কলেজের অধ্যক্ষ ডা. মুক্তার হোসেন বলেন, বিএমডিসি হচ্ছে মেডিকেলের সর্বোচ্চ নিয়ন্ত্রক সংস্থা। বিএমডিসির বিধিতে স্পষ্টভাবে উল্লেখ করা আছে, কারা নামের আগে ডাক্তার লিখতে পারবে এবং কারা পারবে না। এরপরও ম্যাটস এবং বিভিন্ন প্রশিক্ষণ কেন্দ্র থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে নামের পূর্বে কীভাবে ডাক্তার লেখার দাবি জানায় তা আমার বোধগম্য না। শিক্ষার্থী এবং চিকিৎসকরা যে দাবি জানাচ্ছে এটি আমাদের সকলেরই দাবি। আমি চাই, হাইকোর্ট যেন দ্রুত রায় দিয়ে এই সমস্যার নিরসন করে।