
নীলফামারী প্রতিনিধি:
দেখে বোঝার উপায় নেই মসজিদটি ৪০০ বছরের পুরোনো। কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে থাকা মসজিদটি প্রাচীন ও সৌন্দর্যমণ্ডিত হওয়ায় দূরদূরান্ত থেকে অনেক পর্যটক এই মসজিদটি দেখতে আসেন। মসজিদ আকারে ছোট হলেও প্রাচীন কারুকার্যে তৈরি নকশা ও গম্বুজগুলো বেশ দৃশ্যমান। মসজিদের দেয়ালের দরজার ওপরে কিছু আরবি লেখা আছে যা অস্পষ্ট। এ প্রাচীন মসজিদটি সংস্কারের অভাব হারিয়ে যেতে বসেছে মোঘল আমলের ঐতিহ্য।
মসজিদটি নীলফামারীর কিশোরগঞ্জ উপজেলা শহর থেকে প্রায় তিন কিলোমিটার পশ্চিমে নিতাই ইউনিয়নের পানিয়াল পুকুর মৌলভির হাট এলাকায় অবস্থিত।
মুঘল আমলে নির্মিত এই মসজিদটি আজও সুরক্ষিত রয়েছে তবে সংস্কার অভাবে হারাতে বসেছে তার ঐতিহ্য। কিশোরীগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ এ মসজিদটির ২০২২ সাল থেকে মুতাওয়াল্লির দায়িত্বে আছেন। তিনি জানান, বংশ পরম্পরায় তিনি মসজিদটির মুতাওয়াল্লি হয়েছেন।
তার দেওয়া তথ্যমতে জানা যায়, মসজিদটি তাদের পূর্বপুরুষের সময়ের। তাদের পূর্বপুরুষ, দরবারু কোরানী ও কেকারু শাহ্ এ মসজিদটি স্থাপন করেন বলে তিনি তার বাবা, ফজলার রহমান সরকারের কাছ থেকে শুনেছেন। কেকারু শাহের ছেলে গরিবুল্যাহ সরকার, তার ছেলে কিসমত উল্যাহ সরকার, তার ছেলে রহিম উদ্দিন সরকার ও কালু মোহাম্মাদ সরকার। মরহুম আব্দুর রহিম সরকারও মসজিদটির মুতওয়াল্লি ছিলেন।
পরে আব্দুর রহিম সরকারের ছেলেদের মধ্যে আলহাজ্ব ফজলার রহমান মসজিদটির মুতওয়াল্লি হন। ২০২২ সাল পর্যন্ত কিশোরীগঞ্জ সরকারি ডিগ্রি কলেজের সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রউফকে এ মসজিদটির মুতাওয়াল্লি দায়িত্ব পান। মসজিদটির ওপরে তিনটি গম্বুজ ও অভ্যন্তরে পাথরের কারুকার্য্যই এর প্রাচীনতার প্রমাণ বহন করে।
সাবেক অধ্যক্ষ আব্দুর রউফ জানান, বংশ পরম্পরার তথ্য অনুযায়ী মসজিদটি মুঘল সম্রাট আওরঙ্গজেবের সময়কালের বলে ধারণা করা হয়। তবে সংরক্ষণ ও সংস্কারের অভাবে মসজিদটি প্রায় নষ্ট হওয়ার উপক্রম। এখনই ব্যবস্থা গ্রহণ না করলে হারিয়ে যাবে প্রাচীন ঐতিহ্যবাহী ঐতিহাসিক এই মসজিদ।
নিতাই ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান মোত্তাকিনুর রহমান (আবু) বলেন, প্রাচীন এই মসজিদটি সংরক্ষণ ও সংস্কার করা জরুরি। ভবিষ্যৎ প্রজন্মের দেশের ও ধর্মের ইতিহাস জানার জন্য সরকারের কাছে আমার দাবি এটি আগের আদলে রূপ দেওয়ার।
মুসল্লি সাফিউল ইসলাম ও লাবু মিয়া জানান, মসজিদটি অনেক পুরোনো। এখানে নামাজের সময় সবার জায়গা হয় না। তাই ওই মসজিদটি ভেঙে নতুন মসজিদ করার পক্ষে বেশির ভাগ মুসল্লি।
মসজিদের আরেক মুসল্লি সুজাউল আলম জানান, ‘মোগল আমলের মসজিদটি কোনোভাবেই ভাঙা যাবে না। এটি সংরক্ষণ করতে হবে। এটি আমাদের সম্পদ। এটি রক্ষা করার দায়িত্ব সবার।
উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) মৌসুমি হক বলেন, এত প্রাচীন নিদর্শন অবশ্যই সংরক্ষণ করা প্রয়োজন। এ বিষয়ে প্রতœতত্ত্ব অধিদপ্তরের সঙ্গে যোগাযোগ করে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের উদ্যোগ গ্রহণ করা হবে।