মেডিক্যাল অফিসার ছাড়াই চলছে বেড়ার তিন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র, ব্যাহত হচ্ছে সেবা

পাবনা প্রতিনিধি:
মেডিক্যাল অফিসার বা এমও ছাড়ায় চলছে বেড়া উপজেলার তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র। ফলে স্বাস্থ্যসেবা থেকে বঞ্চিত হচ্ছেন উপজেলার বিভিন্ন গ্রামে বসবাসরত হাজার হাজার মানুষ। শুধু তা-ই নয়, এসব কেন্দ্রের অন্যান্য পদেও রয়েছে জনবলসংকট।
উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্স সূত্রে জানা যায়, বেড়া উপজেলায় হাটুরিয়া, নতুনভারেঙ্গা ও রাজনারায়ণপুরে তিনটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র রয়েছে। নিয়মানুযায়ী প্রতিটি উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে একজন করে চিকিৎসা কর্মকর্তা (এমও), উপসহকারী কমিউনিটি চিকিৎসা কর্মকর্তা (সাকমো), ফার্মাসিস্ট, মিডওয়াইফ (ধাত্রী) ও অফিস সহায়ক (পিয়ন) থাকার কথা। কিন্তু এর একটিতেও চিকিৎসা কর্মকর্তা নেই। বাকি পদগুলোতেও জনবলসংকট রয়েছে।
জানা গেছে, প্রত্যন্ত এলাকার রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার লক্ষ্যে বেড়া উপজেলায় স্থাপন করা হয়েছে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্র তিনটি। প্রতিদিন এগুলোর প্রত্যেকটিতে ৮০-১০০ জন করে রোগী চিকিৎসা নিতে আসেন। চিকিৎসা কর্মকর্তা বা মেডিক্যাল অফিসারের এসব রোগীর চিকিৎসা প্রদান করার কথা। আর সেই চিকিৎসায় সহায়তা করার কথা সাকমোদের। কিন্তু তিন উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের একটিতেও চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকায় তাদের সেই দায়িত্ব পালন করছেন সাকমোরা। রোগীদের ভিড় বেড়ে গেলে কখনো কখনো ফার্মাসিস্ট বা অফিস সহায়করাও রোগী দেখে ওষুধ দিয়ে থাকেন।
সরেজমিনে নতুন ভারেঙ্গা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে রোগী দেখার দায়িত্ব পালন করছিলেন উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার মাহমুদা আফরোজ ও অফিস সহায়ক জহুরুল ইসলাম।
তারা জানান, সেখানে চিকিৎসা কর্মকর্তার পদটি ফাঁকা। নিয়োগপ্রাপ্ত ফার্মাসিস্ট দীর্ঘদিন ধরে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে প্রেষণে দায়িত্ব পালন করছেন। মিডওয়াইফ পদে একজন থাকলেও তিনি শুধু গর্ভবতী নারীদের দেখে থাকেন। হাটুরিয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে চিকিৎসা কর্মকর্তা ও অফিস সহায়কের পদ ফাঁকা থাকায় দায়িত্ব পালন করছেন উপসহকারী মেডিক্যাল অফিসার সিরাজুল ইসলাম ও ফার্মাসিস্ট হাবিবুর রহমান।
সিরাজুল ইসলাম জানান, প্রতিদিন সেখানে চিকিৎসা নিতে শতাধিক রোগী আসে। এত রোগীর চাপ তাকে একা সামলাতে হয়। তিনি আরো জানান, এই স্বাস্থ্যকেন্দ্রে আসা-যাওয়ার রাস্তা নেই। ব্যক্তি মালিকানাধীন বাঁশবাগানের মধ্য দিয়ে আসতে হয়। সুনসান এলাকায় অবস্থিত বলে রাতের বেলা উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রের সুপরিসর ভবনটি অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে থাকে। দুর্বৃত্তরা এই ভবনের দুটি তলারই সব জানালার কাচ ভেঙে ফেলেছে।
হাটুরিয়া উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রে চিকিৎসা নিতে আসা জগন্নাথপুর গ্রামের আরশেদ শেখ (৭০) বলেন, ‘এই জায়গায় নাকি বড় ডাক্তার (চিকিৎসা কর্মকর্তা) থাকার কথা। কিন্তু তাকে কখনোই দেখলাম না। বাধ্য হয়ে ছোট ডাক্তারের (উপসহকারী কমিউনিটি মেডিক্যাল অফিসার) কাছে আমরা চিকিৎসা নিই।’
এ বিষয়ে বেড়া উপজেলা স্বাস্থ্য ও পরিবার পরিকল্পনা কর্মকর্তা ফাতেমা তুজ জান্নাত বলেন, ‘উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে চিকিৎসা কর্মকর্তা না থাকার বিষয়টি ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হয়েছে। এছাড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সেও চিকিৎসকসংকট থাকায় সেখান থেকে উপস্বাস্থ্যকেন্দ্রগুলোতে কোনো চিকিৎসা কর্মকর্তা পাঠানো যাচ্ছে না।