স্নানঘাটের মানুষের মুখে হামজার ছোটবেলার স্মৃতি

প্রকাশিত: ১১:১৭ পূর্বাহ্ণ, মার্চ ১৬, ২০২৫

ক্রীড়া ডেস্ক:

 

হামজা চৌধুরী তাকে ঘিরে স্নানঘাটের মানুষের আগ্রহ তৈরি হয়েছে। ছোট বাচ্চা থেকে শুরু করে হামজা চৌধুর ৭০ বছরের বৃদ্ধা জানতে চাইছেন আমরার হামজা আইছে নাকি।

গ্রামে ঘুরলে অন্যরা বুঝে ফেলেন গ্রামে নতুন মানুষ ঢুকেছে। গেট সাজানো হচ্ছে। কয়েক শত পানির বোতল নিয়ে ইজিবাইক ঢুকছে হামজার বাবা দেওয়ান মোরশেদের বাসায়। একদিক থেকে হামজার পরিবার ঢুকবেন। তার জন্য আলাদা গেট করা হয়েছে। অন্যদিক থেকে সাধারণ মানুষ চলাচল করবেন, তার জন্য আলাদা গেট খোলা হয়েছে। কেউ চাইলেই আর বাড়ির ভেতরে ঢুকে পড়তে পারবেন না। উৎসুক মানুষের আগ্রহ এখন হামজাকে দেখার অপেক্ষায়।

হামজাকে ছোট থাকতে দেখেছেন এলাকার অনেক মানুষ। একটা পান দোকান থেকে শুরু করে সর্বশ্রেণির মানুষের মনে এখনো ছোট্ট হামজা ভালোবাসার স্থান দখল করে আছেন। ছোট থাকতে এসেছিলেন। প্রতি বছর আসতেন তিনি। তখন এক মাস থাকতেন। সবার সঙ্গে মিশতেন। অবাধ চলাফেরা ছিল। পুকুর বিল হাওরে গিয়ে মাছ ধরেছেন। মাঠে মাঠে ফুটবল খেলেছেন। যারা খেলেছেন তারা নাকি কেউ ফুটবল খেলে পেরে উঠতেন না। ফুটবলে অসাধারণ প্রতিভা ছিল। যারা প্রত্যক্ষ সাক্ষী, তাদের কথা-হামজা ফুটবলসহ সব খেলা খেলতেন। তবে ফুটবলই তার প্রাণ। আজিজ সিদ্দিকী বললেন, ‘ফুটবলে এমনই নেশা ছিল যে, গলায় ফুটবল নিয়ে ঘুরতেও দেখেছি।’ হামজার মাথার চুল কোঁকড়া। স্নানঘাট গ্রামে এত বেশি কোঁকড়া চুলের কেউ নেই। এত ঝাঁকড়া চুলে কেউ ছিল না। যে কারণে হামজাকে সবার চোখে পড়ত। তোফাজ্জল হোসেন বললেন, ‘হামজার বয়স তখন সাত কিংবা আট বছর। গ্রামে আসলে ঘুরে বেড়াতো আমরা ওর চুল ধরে টানতাম। দেখতাম এটা কেমন চুল।’

একা একা দোকানে গিয়ে গিয়ে কেনাকাটা করতেন। কোনো কিছু কিনতে টাকা নেওয়া হতো না। দেওয়ান মোরশেদ প্রত্যেক দোকানে বলে রেখেছিলেন কিছু চাইলে যেন দিয়ে দেয়। হামজা জানত এই গ্রামে কিছু কিনতে টাকা লাগে না। মোরশেদ চৌধুরী বললেন, ‘আমি কিছু কিনে টাকা দিতে গেলে হামজা আমাকে বলে টাকা লাগে না। সবাই ফ্রি দেয়।’

মোটরসাইকেল নিয়ে যাচ্ছিললেন নাসির উদ্দিন। হামজার প্রসঙ্গ তুলতে বললেন, ‘আমরা দেখেছি। হামজা আমার দোকানে এসে ওষুধ চেয়েছিল। ও জানত না ওষুধের দোকান আলাদা হয়। আমি দেখালম এই দোকান থেকে কিনতে। সে তখন সাইকেলে দুইটা তালা মারল। বুদ্ধি আছে। ভালো ফুটবল খেলত। হামজার সঙ্গে কেউ দৌড়ে পারত না।’

পুটিজুরীর মোড় থেকে স্নানঘাটের দিকে ছুটে চলা সিএনজিচালক শাহবাজ বললেন, সে হামজাকে দেখেছেন, ‘হামজা সারা দিন ফুটবল খেলত। সন্ধ্যা যদি না হইত হেই সময়ও ফুটবল খেলত।’ হামজার পরিবার প্রসঙ্গে সিএনজির একজন যাত্রী বলছিলেন, ‘হামজা মোরশেদ চৌধুরীর সন্তান না হইলেও সে এখন আমাদের সন্তান। মোরশেদ চৌধুরীর সন্তান হিসেবেই আমরা দেখি।’ স্থানীয় বিএনপির স্নানঘাট ইউনিয়নের সভাপতি ঈমাম শরীফ হোসেন চৌধুরী জুয়েল জানান, ইউনিয়ন বিএনপির পক্ষ থেকে মোটরসাইকেল শোভাযাত্রা করা হবে।