এনসিপি থেকে বেরিয়ে আসা শিবিরের সাবেক নেতাদের নতুন সংগঠন কেন

প্রকাশিত: ২:৫৯ অপরাহ্ণ, মার্চ ১৮, ২০২৫

নিজেস্ব প্রতিবেদক:

 

জুলাই-অগাস্ট আন্দোলনের ছাত্র নেতৃত্ব থেকে গঠন করা হচ্ছে আরেকটি রাজনৈতিক সংগঠন । ওই ছাত্র নেতৃত্বের যে অংশ নতুন এই সংগঠন করছেন, তাদের প্রধান নেতারা জামায়াতে ইসলামী সমর্থিত ইসলামী ছাত্রশিবিরের সাবেক নেতা।

ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল এনসিপি গঠনের প্রক্রিয়াতেই দুটি অংশের বিভাজন দৃশ্যমান হয়। সেই প্রক্রিয়া থেকে বেরিয়ে আসা অংশ আরেকটি রাজনৈতিক সংগঠন কেন করছেন -এমন অনেক প্রশ্নে নতুন আলোচনা চলছে রাজনীতিতে।

আলী আহসান জুনায়েদ গত রোববার (১৬ই মার্চ) নিজের ফেসবুক পাতায় একটি পোস্টের মাধ্যমে তাদের নতুন সংগঠন করার কথা প্রকাশ করেন। তিনিই এর একজন প্রধান সংগঠক।

তিনি বিবিসি বাংলাকে বলেন, জুলাইয়ের চেতনাকে সামনে রেখে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ‘প্রেশার গ্রুপ’ হিসেবে কাজ করবে তাদের নতুন সংগঠন।

নানা শ্রেণি-পেশা ও বয়সের মানুষের পাশাপাশি বেসরিকারি বিশ্ববিদ্যালয় ও মাদ্রাসা শিক্ষার্থীরাও সংগঠনটিতে যুক্ত থাকবেন বলে উল্লেখ করেন আলী আহসান জুনায়েদ ।

তবে অতীতে শিবিরসংশ্লিষ্টতার কারণে আত্মপ্রকাশের আগেই নানা ধরনের প্রশ্ন উঠছে নতুন সংগঠন তৈরির উদ্দেশ্য ও এর নেতৃত্ব নিয়ে। অনেকেই বলেছেন, শিবিরের ট্যাগ থাকায় ছাত্র নেতৃত্বের নতুন দল জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপিতে জায়গা না পাওয়ার কারণেই গড়ছেন এই প্ল্যাটফর্ম; যেখানে থাকতে পারে ধর্মের প্রাধান্য।

একইসঙ্গে জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থীদের উত্থানের যে প্রবণতা দেখা গেছে, তা এই সংগঠনের মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী হতে পারে বলেও মনে করছেন কেউ কেউ।

তবে নতুন আরেকটি রাজনৈতিক সংগঠন তৈরির উদ্যোগকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় নাগরিক পার্টি (এনসিপি)। তবে প্ল্যাটফর্মটিকে ‘জামায়াতের বি-টিম’ হবার সম্ভাবনাও উড়িয়ে দিচ্ছেন না তারা।

নতুন সংগঠন তৈরির উদ্যোগ নিয়ে যা জানা যাচ্ছে

জুলাইয়ের চেতনাকে সমুন্নত রাখতেই নতুন রাজনৈতিক সংগঠনের আবির্ভাব হতে যাচ্ছে বলে দাবি করেন এর উদ্যোক্তারা ।

এই উদ্যোগের প্রধান আলী আহসান জুনায়েদ বলছেন জুলাইয়ের আকাঙ্ক্ষা বা চেতনা “সামগ্রিকভাবে ক্ষীণ বা দুর্বল” হয়ে যাবার কারণে নতুন এই প্ল্যাটফর্মের উদ্যোগ নিয়েছেন তারা।

তিনি আরও বলেন, “অনেকের ফোকাস পয়েন্ট ১০টা হয়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ জুলাইয়ের দাবিগুলোও তাদের ফোকাস পয়েন্ট আছে, আরও ৯টা ফোকাস পয়েন্টও আছে। কিন্তু একেবারেই জুলাইয়ের দাবিগুলোকে ফোকাস রেখেই কাজ করবে এমন কোনো প্ল্যাটফর্মকে সিংগুলারলি (এককভাবে) আমরা দেখছি না”।

প্রসঙ্গত, জুলাই অভ্যুত্থানের পর সামাজিক ও রাজনৈতিক সংগঠন হিসেবে আবির্ভূত হওয়া জাতীয় নাগরিক কমিটির বড় একটি অংশই নতুন রাজনৈতিক দল জাতীয় জাতীয় নাগরিক পার্টিতে (এনসিপি) গেলেও, তাতে যোগ দেননি ওই নাগরিক কমিটির যুগ্ম আহবায়ক আলী আহসান জুনায়েদ।

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা শিবিরের সভাপতিও ছিলেন তিনি।

শিবিরসংশ্লিষ্টতার কারণেই নতুন দলের শীর্ষ পদ নিয়ে দ্বন্দ্ব এবং পরে দলটিতে যোগ দেননি বলেও শোনা গেছে। তাকে জাতীয় নাগরিক কমিটি থেকেও বেরিয়ে আসতে হয়।

একই কথা শোনা গেছে জুনায়েদ ছাড়াও রাফে সালমান রিফাত এবং আরেফিন মোহাম্মদ হিযবুল্লাহকে নিয়েও, যদিও তাদের কেউই বিষয়টি শিকার করেননি।

এনিয়ে রিফাত বলেন, “পদ-পদবির কথা সত্য না। অনেক বিষয় নিয়ে সোচ্চার থেকেও কাঙ্ক্ষিত প্রতিফলন পাই নাই, তখন মনে হয়েছে পার্টিতে না গিয়ে অবজার্ভ করি”।

“পার্টিতে যাওয়ার রাস্তা এখনও যে খোলা না, তেমনটাও না” বলেও মন্তব্য করেন তিনি।।

এদিকে নতুন দল ঘোষণার দুই সপ্তাহ পরেই ঘোষণা এলো নতুন আরেকটি সংগঠনের। নতুন সংগঠনে থাকবেন রিফাত এবং হিযবুল্লাহও।

ফলে এই সংগঠনটি নতুন রাজনৈতিক দলেরই বিকল্প হিসেবে সামনে আসছে কিনা, উঠছে এমন প্রশ্নও।

তবে এমন বক্তব্য মানতে রাজি নন আলী আহসান জুনায়েদসহ অন্যরা।

তবে নতুন দল ঘোষণার পর জাতীয় নাগরিক কমিটি কার্যত নিষ্ক্রিয় হয়ে যাওয়ায় রাজনীতির মাঠে যে শূন্যতা তৈরি হয়েছে, তা পূরণের চিন্তা থেকেই নতুন প্ল্যাটফর্ম করার কথা ভাবা হচ্ছে বলে দাবি করেন রাফে সালমান রিফাত। তিনিও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রশিবিরের সভাপতির দায়িত্ব পালন করেছেন।

জাতীয় নাগরিক কমিটির অর্গানোগ্রাম বিলুপ্ত করার আগে সংগঠনটির যুগ্ম সদস্য সচিব পদেও ছিলেন তিনি।

“জুলাই গণ- অভ্যুত্থানের সময় সংঘটিত অপরাধগুলোর বিচার, ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগকে নিষিদ্ধ, ফ্যাসিবাদী কাঠামোর বিলোপের দাবি বাস্তবায়ন, আধিপত্যবাদবিরোধী অবস্থান এবং জুলাই আন্দোলনের শহীদ এবং আহতদের স্বীকৃতি এবং সম্মান নিশ্চিত করার মতো বিষয়গুলোকে কেন্দ্রে রেখেই নতুন সংগঠন কাজ করবে” বলে জানান আলী আহসান জুনায়েদ।

আদর্শের প্রসঙ্গে তিনি বলেন, “ফ্যাসিবাদবিরোধী, আধিপত্যবাদবিরোধী এবং বাংলাদেশপন্থি আন্দোলনে আমরা বিশ্বাস করি। একইসঙ্গে আমরা চাচ্ছি এবং বিশ্বাসও করি যে দুর্নীতিমুক্ত, ন্যায়সঙ্গত, সাম্যপূর্ণ সমাজ আমাদের গড়তে হবে”।

“সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির একটা রাষ্ট্র গঠনে আমাদের সর্বোচ্চ চেষ্টা করতে হবে এবং সেই লক্ষ্যেই কাজ করতে হবে, যাতে করে সব নাগরিকের আজাদির ব্যাপারটা, তাদের সম্মান-ডিগনিটির ব্যাপারটা এবং তার অধিকার নিশ্চিতের ব্যাপারটা থাকে”, বলেন মি. জুনায়েদ।

সেক্ষেত্রে “এনসিপি, বিএনপি, জামায়াতসহ যারা ফ্যাসিবাদবিরোধী আন্দোলনে অংশ নিয়েছেন, তাদের সবাইকে সাথে নিয়েই” প্ল্যাটফর্মটি কাজ করতে চায় বলে জানান তিনি।

নতুন সংগঠনে কারা থাকবেন?

অভ্যুত্থানের অংশ নেয়া “সব ধরনের মানুষের সঙ্গেই আলাপ হচ্ছে” বলে বিবিসি বাংলাকে জানিয়েছেন জুনায়েদ।

“যেমন ধরেন প্রাইভেট ইউনিভার্সিটি (বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়), মাদ্রাসার স্টুডেন্টরা (শিক্ষার্থীরা), নারী যারা ফ্রন্টলাইনে যুদ্ধ করেছেন, তারপর পাহাড়িরা, বিভিন্ন শ্রমিক শ্রেণির মানুষ – আমরা সবার সাথেই কথা বলছিলাম। তাদেরকে নিয়েই আমরা প্ল্যাটফর্মটা লঞ্চ করবো,” বলেন তিনি।

এর আগে, গত ২৬শে ফেব্রুয়ারি নতুন ছাত্র সংগঠন গণতান্ত্রিক ছাত্র সংসদের প্রায় সব পদে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের দেওয়া হয়েছে এবং বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের বঞ্চিত করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে।এ নিয়ে প্রতিবাদের সময় প্রতিবাদকারিদের সঙ্গে ওই সংগঠনের অন্যদের ধাক্কাধাক্কি থেকে গড়ায় হাতাহাতিতেও।

তাহলে কি নিজেদের বঞ্চিত মনে করা ব্যক্তিদের নিয়েই করা হচ্ছে সংগঠনটি?

জুনায়েদ বলছেন, যারা শুরু থেকে কোনো প্ল্যাটফর্মে যুক্ত হননি কিন্তু জুলাইকে নিয়ে কাজ করতে চান, এমন ব্যক্তিরা যেমন প্ল্যাটর্মটিতে যুক্ত হবেন তেমনি “বিভিন্ন প্ল্যাটফর্মে যাননি এমন লোকজনও আছেন” বলে জানান মি. জুনায়েদ।

“প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টদের মধ্যেতো একটা ক্ষোভ আছেই যে তাদের স্যাক্রিফাইসের তুলনায় তাদের সেই ইভালুয়েশনটা (মূল্যায়ন) হয় নাই”।

“আমরা বলছি যে জুলাইয়ের যে স্পিরিটটা আছে, সেটা ধারণ করে কাজ করতে চাই। এক্ষেত্রে প্রাইভেট ইউনিভার্সিটির ওরাও মনে করে এটা নিয়ে কাজ করা দরকার। জুলাইয়ের এই পয়েন্টেই আমরা একটা ইউনিফাইয়িং পয়েন্ট পেয়েছি, বলেন তিনি।

সংগঠন থেকে গঠিত হবে নতুন রাজনৈতিক দল?

শুরুতে জাতীয় নাগরিক কমিটির প্রধান লক্ষ্য ছিল “ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার বিলোপ ও নতুন রাজনৈতিক বন্দোবস্ত”। স্বৈরাচার ও গণহত্যাকারীদের বিচার নিশ্চিতের কথা বলেছিল এই সংগঠনটি।

তবে নতুন রাজনৈতিক দল ঘোষণার আগ দিয়েই সংগঠনটি জানায়, “নতুন দল আত্মপ্রকাশের মাধ্যমে জাতীয় নাগরিক কমিটির রাজনৈতিক দল গঠনের ঐতিহাসিক দায়িত্ব সম্পন্ন হয়েছে”।

সংগঠনের বেশিরভাগ সদস্যই নতুন দলে যোগ দেওয়ায় আহবায়ক, সদস্য সচিব, মুখপাত্র ও মুখ্য সংগঠক ব্যতীত জাতীয় নাগরিক কমিটির অবশিষ্ট অর্গানোগ্রাম, নির্বাহী কমিটি, সেলসমূহ ও সার্চ কমিটি বিলুপ্ত ঘোষণা করা হয়।

২৮শে ফেব্রুয়ারি নতুন দল ঘোষণার ১৫ দিনের মধ্যেই নতুন করে সংগঠনের অর্গানোগ্রাম দেওয়ার কথা থাকলেও ১৭ দিন পরও তেমনটা দেখা যায়নি।

ফলে জাতীয় নাগরিক কমিটি “ফাংশেনবেল কোনো প্ল্যাটফর্ম হিসেবে কাজ করবে কি না” এমন সন্দেহও প্রকাশ করেন মি. জুনায়েদ।

অন্যদিকে জাতীয় নাগরিক কমিটির মতো আসন্ন প্ল্যাটফর্ম থেকেও নতুন কোনো রাজনৈতিক দল গঠনের সুযোগ আছে কি না, এমন প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, “জুলাইয়ের চেতনা সমুন্নত রাখাই আমাদের মূল চিন্তার জায়গা। পিপলের রেসপন্স (মানুষের প্রতিক্রিয়া) কেমন হয় এবং ফিল্ডের (মাঠের) চাহিদা কী হয়- এইটার আলোকে যদি এমন কোনো সিদ্ধান্ত আসে তাহলে তাতে আরও সময় লাগবে”।

মোটাদাগে “চাহিদার আলোকে” পরবর্তী সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে বলেই মন্তব্য করেন তিনি।

এনিয়ে মি. রিফাত বলেন, অভ্যুত্থানের পর যে ধরনের রাজনৈতিক সংস্কৃতি তারা প্রত্যাশা করছেন অর্থাৎ “যথেষ্ট পরিমাণ গণতান্ত্রিক পরিবেশ নিশ্চিত হয়েছে দেখলে প্রেশার গ্রুপ হিসেবে দেখতে পারেন”।

নতুন প্ল্যাটফর্ম নিয়ে ইতিবাচক এনসিপি

আসন্ন রাজনৈতিক প্ল্যাটফর্ম আসার ঘোষণাকে ইতিবাচকভাবেই দেখছে জাতীয় নাগরিক পার্টি বা এনসিপি।

এনিয়ে দলটির জ্যেষ্ঠ যুগ্ম আহ্বায়ক আরিফুল ইসলাম আদিব বলেন, “তারা তাদের মতো তরুণদের সংগঠিত করছে, আর তরুণরা যে নামে, যে ফরম্যাটেই সংগঠিত হোক না কেন, সবকটাকেই আমরা ইতিবাচকভাবেই দেখি”।

অনেকটা একই কথা বলছেন দলটির জ্যেষ্ঠ মুখ্য সমন্বয়কারী আব্দুল হান্নান মাসউদ।

বলেন, “এটাকে একটা ভালো উদ্যোগ বলেই মনে করি”।

তার মতে, নিজস্ব রাজনৈতিক আদর্শ নিয়ে ভিন্ন একটি প্ল্যাটফর্ম আসছে। তবে প্ল্যাটফর্মটি এনসিপির বিকল্প হতে পারবে না বলেও মনে করেন তিনি।

মাসউদ বলেন, “যারা এই সংগঠনের নেতৃত্ব দিচ্ছেন তারাতো অভ্যুত্থানের নেতৃত্ব দেয় নাই বা অভ্যুত্থানের সময় সামনে ছিল না। অভ্যুত্থানকে ক্লেইম করে তারা যদি নেতৃত্ব চায়, এটাতো এদেশের মানুষ গ্রহণ করবে না”।

“সেক্ষেত্রে ওনাদের রাজনৈতিক ধারা আছে। জামায়াতের বি-টিম হিসেবে হয়তো আবার আরেকটা রাজনৈতিক দল হতে যাচ্ছে। এটাকে আমরা স্বাভাবিক প্রক্রিয়া মনে করি”, বলেন তিনি।

তবে নতুন পার্টির সঙ্গে রাজনৈতিক বোঝাপড়ার দূরত্বের কারণেই প্রধান উদ্যোক্তা আলী আহসান জুনায়েদ আরেকটা সংগঠন করছে বলে মন্তব্য করেন মি. আদিব।

সেক্ষেত্রে নতুন দলের শীর্ষ পদ নিয়ে সংকট কোনো ফ্যাক্টর না বলেও মত তার।

“ইসলামিস্টদের উত্থানের প্রবণতা শক্তিশালী হতে পারে”

জাতীয় নাগরিক কমিটি ইতোমধ্যেই প্রেশার গ্রুপ হয়ে থাকায় শুরুতেই কোনো বিকল্প হিসেবে নতুন প্ল্যাটফর্ম নিজেদের প্রতিষ্ঠিত করতে সক্ষম হবে বলে মনে করছেন না রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক সাব্বির আহমেদ।

বরং জুলাই অভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ইসলামপন্থীদের উত্থানের যে প্রবণতা দেখা গেছে তা এই ধরনের একটা সংগঠনের মধ্য দিয়ে আরও শক্তিশালী হতে পারে বলেও মনে করেন তিনি।

আহমেদ বলেন, “সেক্ষেত্রে সবচেয়ে বড় চ্যালেঞ্জ হলো এই ধরনের সংগঠনের ব্যাকগ্রাউন্ডে থেকে কাজ করে। তারা ইসলামিস্ট, কিন্তু পরিচয় দেবে না যে তারা ইসলামিস্ট”।

অনেকটা একই মত আরেক রাজনৈতিক বিশ্লেষক ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সামিয়া জামানের।

সামিয়া জামান বলছেন, জুলাই গণ- অভ্যুত্থানের নেতৃত্বের একটা বিশাল অংশ শিবিরপন্থি ছিল। কিন্তু নতুন দল নিজেদের শিবির ট্যাগিং থেকে আলাদা করতে চাওয়ায় অনেকেই সেই দলে জায়গা পায়নি।

ফলে শিবিরপন্থিদের মধ্যে একটা আইডেন্টি ক্রাইসিস (পরিচয় সংকট) তৈরি হয়েছে। এই জায়গাটি থেকে বেরিয়ে তারা নতুন পরিচয়ে নতুন রাজনীতির দিকে যেতে চাচ্ছে।

একইসঙ্গে “শিবিরের যে পরিচয়, তাদের যে ইতিহাস সেটাকে একটা গর্বের জায়গা থেকে তারা হয়তো নিজেদের আইডেন্টিফাই (পরিচিত) করার চেষ্টা করছে যাতে তাদের শিবির পরিচয় নিয়ে কোনো হীনম্মন্যতার মধ্যে দিয়ে যেতে না হয়”, বলেন মিজ জামান।

এছাড়াও ছদ্মবেশে রাজনীতি করে অন্যের উদ্দেশ্য পূরণে কাজ করার যে প্রবণতা এককালে বাংলাদেশের রাজনীতিতে ছিল, নতুন করে সেই “সিন্ড্রোম” দেখা যাচ্ছে বলেই মনে করেন অধ্যাপক আহমেদ।

অন্যদিকে “ইসলামিস্ট হিসেবে বাজারে কথা চাউর থাকায়” এবং “জুনায়েদের বিরুদ্ধে শিবিরের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ততার অভিযোগ থাকায়” সেদিকেই মোড় ঘুরিয়ে তারা যে জামায়াতের বি-টিম হিসেবে যে কাজ করবেন না সে সম্ভাবনাও উড়িয়ে দেয়া যায় না বলেও মন্তব্য করেন তিনি।

ফলে “দলীয় লেজুড়বৃত্তিক সংগঠন পরিণত হবার সম্ভাবনা থেকে যাবে” বলেও মত আধ্যাপক আহমেদের।

তবে নতুন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে শিবিরের রাজনীতি করার সম্ভাবনাকে একেবারেই উড়িয়ে দিয়েছেন প্ল্যাটফর্ম-সংশ্লিষ্টরা।

এনিয়ে জুনায়েদ বলেন, “মানুষের সাথে আমাদেরই বন্ধন, পরিচিতিটা আছে। তারা আমাদের সহযোদ্ধা হিসেবেই দেখে। কাজের ক্ষেত্রেও আমাদের পূর্বের পরিচয় বাধা হয়ে দাড়ায়নি। বরং আমরা এবিষয়ে একমত হয়েছি যে জুলাইয়ের এই জায়গাগুলো নিয়ে আমাদের কাজ করতে হবে”।

রিফাত বলছেন, “এই প্ল্যাটফর্মকে সাবেক শিবির হিসেবে ফ্রেম করা ভুল হবে। ২৪’র গণঅভ্যুত্থানের মধ্য দিয়ে ফ্যাসিবাদের তৈরি করা ট্যাগিং রাজনীতির উর্ধ্বে ওঠার চেষ্টা ছিল”।

তার দাবি, গত ১৫-১৬ বছর ধরে শিবির প্রচণ্ড একটা ডিহিউম্যানাইজেশনের মধ্য দিয়ে গেছে। বিরোধী রাজনৈতিক দলের মানবিক মর্যাদা ছিল। তাদের কেউ অত্যাচারিত হলে তার প্রতিবাদ হতো, সমাজের বিভিন্ন স্তরের মানুষজন সেটা করতো।

কিন্তু শিবির ট্যাগ দিলেই তা নিয়ে হতো না কোনো উচ্চবাচ্য।

রিফাত বলেন, “আমাদের লড়াইটা এটার বিরুদ্ধে থাকবে। আর এটা সাবেক শিবিরের প্ল্যাটফর্ম না, জুলাই অংশীজনদের প্ল্যাটফর্ম”।

“পলিটিক্যাল – নন পলিটিক্যাল যারাই আসতে চায়, এই মূলনীতির আলোকে বাংলাদেশকে দেখতে চায়, পুরোপুরিভাবে ফ্যাসিবাদী ব্যবস্থার নির্মূল চায়, একইসাথে সুস্থধারার রাজনৈতিক চর্চা দেখতে চায়, দুর্নীতিবিরোধী অবস্থান আছে – এটা অভ্যুত্থানের সবার প্ল্যাটফর্ম”, বলেন তিনি।

মিজ জামান বলছেন, শিবিরের পরিচয় দিয়ে তাদের যে বিমানবিকীকরণ করা হয়েছে, সেই পরিচয়কেই ক্যাপিটালাইজ করে বাংলাদেশের রাজনীতিতে তাড়া এই প্ল্যাটফর্ম আনতে চাচ্ছে।

তার মতে, তাদের চোখে আসলে জুলাইয়ের গণঅভ্যুত্থানের স্পিরিটটা আসলে কী ছিল, সেটা তারা হয়তো নতুনভাবে রিডিফাইন করতে চাচ্ছে- যেটা এনসিপি থেকে হয়তো আলাদা হবে।

শাপলা, পিলখানার প্রসঙ্গ টেনে প্রথম পোস্টেই যে কথাগুলো লেখা হয়েছে সেই প্রসঙ্গে টেনে টেনে সামিয়া জামান বলেন, “ধর্মভিত্তিক রাজনীতি করায় নতুন দলে তারা যে জায়গা বুঝে পায়নি, সেটার জন্য তারা নতুন প্ল্যাটফর্ম করেছে”।

“একইসঙ্গে যে ট্যাগিং রাজনীতির মাধ্যমে তাদের ডিজিউম্যানাইজ বা মার্জিনালাইজ করা হয়েছে। সেখান থেকে সরে তারা নিজদের পরিচয় নতুন করে তুলে ধরতে চাচ্ছে যেখান থেকে বোঝা যাচ্ছে “ইসলামিস্টদের একটা বড় প্রভাব সামনের দিনগুলোতে থাকবে”, বলেন তিনি।

তবে “স্বীকার না করলেও নতুন দল যে রাষ্ট্রীয় আনুকূল্য পেয়েছে” তা নতুন প্ল্যাটফর্ম পাবে না বলেই মনে করছেন অধ্যাপক আহমেদ।

ফলে “পরীক্ষাটা তাদেরই হবে। প্রথমেই তারা বিকল্প হিসেবে দাঁড়াতে চাওয়ায় নিশ্চিতভাবেই আন্তরিকতা বা সিরিয়াসনেস বেশি থাকবে”।

একইসঙ্গে বৈষম্যবিরোধীদের নেতৃত্বের মধ্যে নৈতিক জায়গায় যে ঘোলাটে বিষয় দেখা গেছে সেই “শূন্যতা যদি তারা পূরণ করতে পারে, তারা যদি এথিক্যালি প্রমাণ করতে পারে তাদের বিরুদ্ধে কোনো স্ক্যান্ডাল নেই, তারা কোনো চাঁদাবাজির সঙ্গে জড়িত না, দুর্বৃত্তায়নের সাথে জড়িত না, তারা কারও কাছ থেকে চাঁদা নিয়ে চলে না – শুরুর দিকে এই ধারণা দিতে পারলে মানুষ তাদের গ্রহণ করবে” বলেও মত তার।

পরবর্তী সময়ে যদি আসলেই কিছু করে দেখাতে পারে তাহলে তাদের গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে বলেও মনে করেন এই বিশ্লেষক।