
সেলিনা আক্তার:
- রমজানের প্রথম ১৫ দিনে ২০ হাজার কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে,
মার্কেট-বিপণিবিতানে বিক্রি বাড়লেও গতবারের তুলনায় কম
মুসলমানদের প্রধান ধর্মীয় উৎসব পবিত্র ঈদুল ফিতর এগিয়ে আসছে। প্রতি বছর এ আনন্দে সব পরিবারেই থাকে বাড়তি কেনাকাটার চাপ। আবার রমজান জুড়ে সেহরি ও ইফতার বাবদও অতিরিক্ত ব্যয় হয়ে থাকে। সব মিলিয়ে এবার রোজায় ভোগব্যয়সহ ঈদকেন্দ্রিক বিভিন্ন ধরনের কেনাকাটায় সারা দেশে মার্কেট ও বিপণিবিতানগুলোর ২৫ লাখ দোকানে প্রায় ২ লাখ কোটি টাকা বাণিজ্যের প্রত্যাশা করছেন ব্যবসায়ীরা। আবার ঈদকে কেন্দ্র করে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ২০ হাজার ২৫২ কোটি টাকার রেমিট্যান্স এসেছে। ফলে রেমিট্যান্সে গ্রামীণ অর্থনীতি চাঙ্গা হতে শুরু করেছে।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতির সভাপতি হেলাল উদ্দিন ইত্তেফাককে বলেন, ঈদুল ফিতরে সবচেয়ে বেশি কেনাবেচা হয়। ফলে ঈদ অর্থনীতির আকারও বড় হচ্ছে। তবে মানুষের আয়ের বেশির ভাগ খরচ হয়ে যায় দৈনন্দিন চাহিদা মেটাতে। সে কারণে ঈদে বিক্রি বাড়লেও তার হার গতবারের তুলনায় কম। উচ্চ মূল্যস্ফীতিই তার অন্যতম কারণ। তবে ঈদ ঘিরে ২ লাখ কোটি টাকার বাণিজ্যের আশা করছেন তারা।
ঈদের কেনাকাটা শুরু হয়ে যায় রোজার প্রথম সপ্তাহ থেকেই, যা চলে চাঁদ রাত পর্যন্ত। ঈদ যত ঘনিয়ে আসছে সব শ্রেণির মানুষের কেনাকাটার চাপও তত বাড়ছে। ফুটপাত থেকে অভিজাত—সব ধরনের মার্কেটে থাকে উপচে পড়া ভিড়। এই কেনাকাটায় সবচেয়ে বেশি গুরুত্ব পেয়ে থাকে নতুন পোশাক। এছাড়া গহনাসামগ্রী, কসমেটিকস থেকে চুড়ি-ফিতা সবই কেনা চাই। বিভিন্ন খাবারও ঈদের কেনাকাটায় গুরুত্ব পায়। আবার প্রতি বছর যে হারে মূল্যস্ফীতি ঘটে, সব ধরনের কেনাকাটায় বাড়তি দামও গুনতে হয়। ফলে প্রতি বছর ঈদকেন্দ্রিক লেনদেনে টাকার অঙ্কও কিছুটা বেশি হয়। ঈদ উৎসব ঘিরে বিভিন্ন খাতে বিপুল অঙ্কের অর্থ ঘন ঘন হাতবদল হওয়ায় অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড যেমন বাড়ে, দেশের অর্থনীতিও তেমনি চাঙ্গা হয়ে ওঠে।
গতকাল নিউমার্কেটে দেখা গেছে, শিশু থেকে শুরু করে বিভিন্ন বয়সী মানুষ কেনাকাটা করতে এসেছেন। এবারের ঈদে মেয়েদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে—পাকিস্তানি আগানুর, শাহিনশাহ, তাওকাল, মুসলিম অরগেঞ্জা, সিকুয়েন্স, সাদা বাহার, কারিজমা ও সারারা থ্রি পিস। তালিকায় রয়েছে শাড়িও। এছাড়া গরমকে সামনে রেখে ক্রেতারা আরামদায়ক সুতি কাপড়কে প্রাধান্য দিচ্ছেন। ছেলেদের পছন্দের তালিকায় রয়েছে শার্ট, প্যান্ট, জুতা, পাঞ্জাবি ও পায়জামা।
ক্রেতাদের উপচে পড়া ভিড় লক্ষ করা গেছে মিরপুরের বিভিন্ন মার্কেটেও। বেসরকারি একটি প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা নাজমা আক্তার বলেন, ঈদের বাকি আর মাত্র কিছু দিন। মেয়েদের একটু আগেভাগেই কেনাকাটা করতে হয়। কারণ পোশাকগুলো আবার সেলাই করতে দিতে হয়। তাই আগেই এসেছেন ঈদের কেনাকাটা করতে।
ব্যবসায়ীরা বলছেন, এতদিন ক্রেতাদের তেমন একটা ভিড় দেখা যায়নি। ঈদে ক্রেতাদের চাপ ১৪ রমজানের পর থেকে বেশি হয়। বিশেষ করে সাপ্তাহিক ছুটির দিনগুলোয় ক্রেতাদের উপস্থিতি বেশি হয়। তবে গত বছরের তুলনায় এখনো বেচাবিক্রি কম।
বাংলাদেশ দোকান মালিক সমিতি পরিচালিত সমীক্ষা পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, সাম্প্রতিক বছরগুলোয় ঈদ কেন্দ্র করে ১ লাখ ৬৫ হাজার কোটি থেকে ১ লাখ ৭০ হাজার কোটি টাকা লেনদেন হয়ে আসছে। তবে এ বছর মূল্যস্ফীতির কারণে সব ধরনের পণ্য ও সেবার দাম অতিরিক্ত ২০ থেকে ২৫ শতাংশ পর্যন্ত বেড়েছে। দাম বাড়ার কারণে আগের বছরগুলোর তুলনায় এবার কেনাকাটা কিছু কম হচ্ছে।
এদিকে পবিত্র রমজান মাসের প্রথম ১৫ দিনে ব্যাংক মাধ্যমে ১৬৬ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স আয় দেশে এসেছে, যা দেশীয় মুদ্রায় ২০ হাজার ২৫২ কোটি টাকার সমান। বাংলাদেশ ব্যাংকের হালনাগাদ পরিসংখ্যানে দেখা যায়, চলতি মাসের প্রথম সপ্তাহের চেয়ে দ্বিতীয় সপ্তাহে ছয় কোটি ডলারের রেমিট্যান্স বেশি এসেছে। ব্যাংক মাধ্যমে প্রথম সপ্তাহে ৮১ কোটি ও দ্বিতীয় সপ্তাহে ৮৫ কোটি ডলারের রেমিট্যান্স এসেছে।
ঈদুল ফিতরে রেমিট্যান্স ও শহরের মানুষ গ্রামমুখী হওয়ায় গ্রামীণ হাট-বাজারে টাকার প্রবাহ বেড়েছে। সরকারি-বেসরকারি চাকরিজীবীদের বোনাস, গতিশীল অভ্যন্তরীণ বাজারব্যবস্থার সঙ্গে জাকাত ও ফিতরা যোগ হয়। অর্থনীতিবিদদের মতে, ঈদে গ্রামীণ অর্থনীতিতে টাকার প্রবাহ বাড়ছে। ফলে সচল হয়ে উঠে গ্রামীণ অর্থনীতি। ঈদের সময় আর্থিক মানদণ্ডে অর্থনীতিতে কত টাকা প্রবাহিত হয়, তা নিয়ে সরকারিভাবে কোনো তথ্য নেই। তবে বেসরকারি গবেষণা অনুযায়ী ঈদ উত্সবকেন্দ্রিক অর্থনীতিতে দেড় লাখ কোটি টাকার অতিরিক্ত লেনদেন হয়। এ টাকার বড় অংশই যায় গ্রামে। এ সময় নিম্ন আয়ের মানুষের হাতেও টাকার লেনদেন হয়ে থাকে। এ সময় তাদের ক্রয়ক্ষমতা বাড়ে। সেক্ষেত্রে বাড়তি টাকা প্রবাহের কারণে মূল্যস্ফীতি বেড়ে যায়।