গুলিতে কিশোর নিহত: বিক্ষোভে উত্তাল ফ্রান্স, গ্রেপ্তার ৪২১
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক :
ফুঁসে উঠেছে ফ্রান্স। ফ্রান্সের রাজধানী প্যারিসে পুলিশের গুলিতে ১৭ বছর বয়সী এক আলজেরীয়-বংশোদ্ভূত তরুণ নিহত হওয়ার পর থেকে তিন রাত ধরে ব্যাপক সহিংসতা চলছে। বৃহস্পতিবার রাত থেকে ফ্রান্সজুড়ে চলা এই সহিংসতায় এ পর্যন্ত ৪২১ জনকে আটক করা হয়েছে বলে সিএনএনকে জানিয়েছেন স্বরাষ্ট্রমন্ত্রী জেরাল্ড ডারমানিন।
প্যারিসের হাউটস দ্য সেইন অঞ্চলে, সেইন সেইন্ট দেনিসে এবং ভাল দে মার্নে থেকে ২৪২ জনকে আটক করা হয়েছে বলে পুলিশ জানিয়েছে। প্যারিসের দক্ষিণ-পশ্চিমের কাছের শহর ক্ল্যামার্তে ৩ জুলাই পর্যন্ত রাত ৯টা থেকে সকাল ৬টা পর্যন্ত জারি করা হয়েছে কারফিউ। কিছু এলাকায় বন্ধ করা হয়েছে যান চলাচল।
এর আগে প্যারিসের পশ্চিম দিকে নান্তেরে এলাকায় নাহেল এম নামের এক তরুণ মঙ্গলবার গাড়ি চালিয়ে যাওয়ার সময় ট্রাফিক পুলিশ তাকে থামতে বলে। সে না থামলে পুলিশ খুব কাছে থেকে তাকে গুলি করে। পরে আহত নাহেলকে চিকিৎসা দিয়েও বাঁচানো যায়নি। আটক করা হয়েছে গুলি চালানো সেই অফিসারকে। বার্তা সংস্থা রয়টার্স জানায়, নিহত নাহেল ফরাসি-আলজেরিয়ান পরিবারের সন্তান।
তার মা মুনিয়া সংবাদমাধ্যমকে দেওয়া সাক্ষাৎকারে বলেছেন– ‘নাহেল সকাল বেলাও বলছিল , ‘মা আমি তোমাকে ভালোবাসি’, তারপর আমি কাজে যাই, এর এক ঘণ্টা পর একটা ফোন পাই—আমাকে বলা হয়, আমার ছেলেকে গুলি করা হয়েছে।’
এ ঘটনার প্রতিবাদে প্যারিসসহ আরও কয়েকটি শহরে বিক্ষোভ ও সহিংসতা শুরু হয়। বিক্ষোভকারীরা পুলিশ স্টেশনেও আগুন দেয়। ফ্রান্সজুড়ে প্রায় ৪০ হাজার পুলিশ কর্মকর্তা এই বিক্ষোভ ঠেকাতে হিমশিম খাচ্ছেন।
বিবিসি জানায়, অভিযুক্ত পুলিশ অফিসার নাহেলের পরিবারের কাছে ক্ষমা চেয়েছেন। তার উকিল বলেছেন মক্কেলের অবস্থা বেগতিক। এ ঘটনায় নাহেলের মা পুরো পুলিশ বাহিনী নয় বরং শুধু তার ছেলেকে হত্যা করা পুলিশ কর্মকর্তাকে দায়ী করেছেন।
প্যারিসের কেন্দ্রে অবস্থিত রু দে রিভলিতে দোকানপাট লুটের ঘটনা ঘটেছে। বিভিন্ন ভিডিওতে দেখা যায় বিক্ষোভকারীরা পোশাকের দোকান জারাসহ আরও বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান থেকে লুট করছে। এ ছাড়াও ওয়েস্টফিল্ডের নাইকি স্টোরের সামনেও ব্যাপক ভাঙচুর চালায় উত্তেজিত জনতা।
পশ্চিম ফ্রান্সের নতে শহরে লিডিল সুপারমার্কেটের বাইরে কাচের দরজার ভেতর দিয়ে গাড়ি চালিয়ে প্রবেশদ্বার ভেঙে ফেলা হয়েছে। আশপাশে দাঁড়ানো বিক্ষোভকারীদের এ সময় উল্লাস করতে দেখা যায়। মনট্রিউলের উত্তরে লাঠিসোঁটাসহ কিছু যুবক ম্যাকডোনাল্ডসের একটি আউটলেট, এটিএম বুথ, ফার্মেসিতে ভাঙচুর করে। এসময় পুলিশ তাদের ওপর টিয়ারশেল নিক্ষেপ করে।
বিবিসি জানায়, বিক্ষোভ ফ্রান্স থেকে বেলজিয়াম পর্যন্ত ছড়িয়ে গেছে। ব্রাসেলসে ১৫ জনকে গ্রেপ্তার করা হয়েছে।
রয়টার্স জানায়, পুলিশের গুলিতে নিহতের ঘটনা ফ্রান্সে এই প্রথম নয় এবং এর শিকার বেশিরভাগ ক্ষেত্রেই কৃষ্ণাঙ্গ বা আরব বংশোদ্ভূত। এ বছর ফ্রান্সে ট্রাফিক পুলিশের গুলিতে দ্বিতীয় মৃত্যুর ঘটনা এটি। গত বছর ফ্রান্সে পুলিশের গুলিতে রেকর্ডসংখ্যক ১৩ জনের মৃত্যু হয়েছে।
পুলিশের গুলি এবং দেশজুড়ে ক্রমবর্ধমান বিক্ষোভের ঘটনায় ফরাসি প্রেসিডেন্ট এমানুয়েল ম্যাখোঁ গভীর উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন। তিনি রাজপথে সহিংসতাকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ বলে আখ্যায়িত করে সবাইকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছেন।