
নীলফামারী প্রতিনিধি:
চারদিকে থই থই পানি। মাঝে মাথা উঁচু করে আছে দাঁড়িয়েছে কচুরিপানা। সাদামাটা দৃষ্টিতে কচুরিপানা মনে হলেও আদতে অবয়বটি কবরের ওপরে গজিয়ে ওঠা লতাগুল্ম আর ঘাসের। স্থানীয়দের ভাষ্য মতে এভাবেই জোয়ারের টানে ৪০ বছর ধরে ভাসছে কবরটি, ভাটায় মিলিয়ে যায় মাটিতে।
এ নিয়ে এলাকায় প্রচলিত আছে নানা কথা। কবরটি ঘিরে গ্রামবাসীর কৌতুহলের যেন শেষ নেই। কবরটির আশপাশের কবরগুলো পানিতে মিলিয়ে গেলেও এই কবরটি কেন এখনও অক্ষত রয়ে গেছে, কেউ কেউ তার কারণ খোঁজার চেষ্টা করছে। কেউ বা এ ঘটনাকে অলৌকিক বলেই মনে করছে।
রহস্যেঘেরা কবরটি নীলফামারী জেলার কিশোরগঞ্জ উপজেলার ছিট রাজিব সরকারপাড়া গ্রামের তিস্তা প্রধান সেচ খালে অবস্থিত। যার কবর ঘিরে এলাকাবাসীর মনে এত প্রশ্ন জন্ম হয়েছে, তিনি ছিলেন ওই এলাকার স্থানীয় বাসিন্দা দেবার উদ্দীন হাজী। ওই এলাকায় দানশীল ও ধার্মিক ব্যক্তি হিসেবে পরিচিত ছিলেন এই ব্যক্তি।
স্থানীয়ভাবে প্রচলিত আছে, শতবছর আগে পায়ে হেঁটে হজ্ব করেছিলেন। যাওয়ার আগে প্রায় ৮৪ একর জমি দান করে গেছেন। হজ্ব থেকে আসার পর দেবার হাজীর মৃত্যু হয়। পরে তাকে পারিবারিক কবরস্থনে দাফন করা হয়। ওই কবরস্থানে আরও কবর ছিল।
১৯৮৪ সালে ক্যানেল (তিস্তা প্রধান সেচ খাল) খননের জন্য কবরস্থানটি অধিগ্রহণ করে পানি উন্নয়ন বোর্ড। কাজ চলাকালে সবকটি কবর সেখান থেকে সরিয়ে ফেলা হয়। তবে ওই কবরটি সরাতে গেলে ড্রেজার মেশিন নষ্ট হয়ে যায়।
পরে একাধিকবার চেষ্টা করেও কবরটি সরানো যায়নি। পরে পাশ থেকে মাটি সরিয়ে কবরটি অক্ষত রাখা হয়। তখন থেকে এলাকাবাসীর ধারণা ছিল তিস্তা খালের পানিতে কবরটি বিলীন হয়ে যাবে। কিন্তু ৪০ বছর ধরে পানিতে ভাসলেও তা বিলীন হয়নি। এমনকি তিস্তা ক্যানেলের পানি ছাড়া হলে তা ভেসে থাকছে।
ছিট রাজিব গ্রামের স্থানীয় যুবক রাশেদুল ইসলাম জানান, আমরা ছোট বেলা থেকে ক্যানেলের মাঝখানে পানিতে ভাসতে দেখছি কবরটি। পানিতে টইটম্বুর খালের মাঝে প্রায় ৪০ বছর ধরে অক্ষত রয়েছে কবরটি।
দেবার উদ্দিন হাজীর নাতি আমিনুর জানান, ছোট বেলা থেকে শুনে এসেছি কবরটির কথা। আমার দাদার কবরের সঙ্গে অনেক কবর ছিল, সেসব কবরের মাটি ড্রোজার মেশিন দিয়ে সরাতে পারলেও আমার দাদার কবরের মাটি সরাতে পারেনি। কবরটি এখনও অক্ষত রয়েছে।
কিশোরগঞ্জ সদর ইউপি চেয়ারম্যান হোসেন শহীদ সোহারওয়াদী বলেন, কবরটি দেবার হাজী নামে একজন ধার্মিক ও দানশীন ব্যক্তির। তিস্তা প্রধান খাল খননের সময় সেটি সরাতে গেলে মেশিন বন্ধ হয়ে যায়। শতবর্ষী এই কবরটি সেই থেকে প্রায় ৪০ বছর ধরে পানিাতে ভাসছে। এটি নিয়ে স্থানীয়দের মাঝে অনেক কৌতুহল রয়েছে।