ভৈরবে অরক্ষিত মেঘনার দুই রেলসেতু, অবাধে ঘুরছে দর্শনার্থীরা

প্রকাশিত: ১০:৪৫ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ৯, ২০২৫

কিশোরগঞ্জ প্রতিনিধি:

 

কিশোরগঞ্জের ভৈরবে সম্পূর্ণ অরক্ষিত অবস্থায় পড়ে আছে মেঘনা নদীর ওপর নির্মিত কেপিআইভুক্ত দুইটি রেলসেতু। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের উদাসীনতার কারণে জীবনের ঝুঁকি নিয়ে দুই সেতুতেই অবাধে যাতায়াত করছে দর্শনার্থীরা ও দুষ্কৃতকারীরা। প্রতিনিয়ত হচ্ছে চুরি, ছিনতাই ও ঘটছে নানা অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা।

স্থানীয়দের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, ভৈরবের একটি ঐতিহ্যবাহী বিনোদনকেন্দ্র মেঘনার ত্রিবেণী সেতু এলাকা। এখানে রয়েছে ব্রাহ্মণবাড়িয়ার আশুগঞ্জ ও ভৈরবে মেঘনা নদীর মধ্যে সংযোগস্থাপনকারী সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতু ও মধ্যখানে শহিদ আবদুল হালিম রেলসেতু এবং জিল্লুর রহমান রেলসেতু। এই এরিয়াটি কেপিআইভুক্ত হলেও দর্শনার্থীদের জন্য ব্রিজগুলোর নিচে ও সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুটি উন্মুক্ত রাখা হয়েছে। তবে দুই রেলসেতুতে চলাচলে রয়েছে কঠোর নিষেধাজ্ঞা। কিন্তু সারা দিন তেমন মানুষ না থাকলে বিকাল হলেই ত্রিবেণী এলাকাতে দেখা যায় উপচে পড়া ভিড়।

ঘুরতে গিয়ে দর্শনার্থীরা দুইটি রেলসেতুতে উঠে ঘুরে বেড়ান। কেউ সেলফি তোলেন, কেউ বসে থাকেন। নিয়মিত ট্রেন চলাচল করলেও জীবনের ঝুঁকি নিয়েই দাঁড়িয়ে থাকে দর্শনার্থীরা। এদিকে সুযোগ বুঝে দুই রেলসেতুতেই ঘটছে চুরি ছিনতাই ও ডাকাতির মতো অপরাধ। কোনো কোনো অপরাধী চলন্ত ট্রেন থেকে ছিনিয়ে নিচ্ছে সাধারণ যাত্রীদের মোবাইল ও ব্যাগসহ প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র।

আরও জানা যায়, প্রতি বুধবার সৈয়দ নজরুল ইসলাম সড়ক সেতুর পাশে পশুর হাট বসে। ভৈরবসহ আশপাশের উপজেলার মানুষজন গরু ছাগল নিয়ে আসে হাটে বেচার জন্য। আশুগঞ্জ থেকে রেলসেতু হয়ে জনসাধারণের পাশাপাশি বুধবার হাটে বিক্রির জন্য গরু-ছাগল নিয়ে আসে বিক্রেতারা। কিছুদিন আগে এই রেলসেতুতে আটকে ছিল গরু। এ বিষয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে নানা আলোচনা-সমালোচনা ও বিভিন্ন নিউজও হয়েছে।

রেল ব্রিজ এলাকায় সরেজমিনে ঘুরে দেখা যায়, দর্শনার্থীরা যে যার মতো করে দুই রেলসেতুতে অবস্থান করছেন। কেপিআইভুক্ত এলাকা হলেও নেই নিষিদ্ধকরণ সাইনবোর্ড, নেই প্রশাসনিক কোনো পাহারাদারির ব্যবস্থা। অথচ একসময় এই কেপিআই এলাকা জুড়ে ছিল কঠোর নিরাপত্তাব্যবস্থা। ছিল জেলা পুলিশের একটি ফাঁড়ি থানা। থানাটি বর্তমানে ভূতুড়ে অবস্থায় পড়ে রয়েছে।

ব্রিজের নিচে কথা হয় কর্তব্যরত পুলিশ কর্মকর্তা ভৈরব রেলওয়ে থানার উপ-পরিদর্শক আফজাল হোসেনের সঙ্গে। তিনি বলেন, রেলওয়ে এলাকাটি ঝুঁকিপূর্ণ। প্রতিদিন বিকালে এই ব্রিজের নিচে এসে দর্শনার্থীসহ সর্বসাধারণকে ব্রিজে উঠতে নিরুৎসাহিত করি। কিন্তু কিছু বখাটে ছেলে ও কিছু সাধারণ মানুষ তাদের পরিবার নিয়ে ব্রিজে ওঠে। আমরা বাধা দিলে আমাদের ওপর চড়াও হয়।

রেলওয়ে নিরাপত্তা বাহিনী আরএনবির অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ হাসান বলেন, আমাদের রেল ব্রিজের সঙ্গে তেমন সংশ্লিষ্টতা নেই। তবু রেলওয়ে সম্পদ রক্ষা করা আমাদের দায়িত্ব। মেঘনায় দুইটি রেলসেতু কেপিআইভুক্ত এলাকায় অবস্থিত। এখানে কারোরই যাওয়ার অধিকার নেই। আমরা মাঝেমধ্যে নিজ দায়িত্বে ঐ এলাকাগুলোতে টহল দিই। আমাদের বাঁশির শব্দে সবাই ব্রিজ থেকে নেমে যায়। আবার চলে এলে ব্রিজে ওঠে। একসময় মেঘনার ব্রিজের নিচে জেলা পুলিশের একটি ফাঁড়ি ছিল। কী কারণে এটি এখন নেই, সে বিষয়টা আমাদের জানা নেই। তবে রেল ব্রিজ এলাকা রক্ষার্থে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি প্রয়োজন।

ভৈরব রেলওয়ে থানা ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) সাইদ আহমেদ বিপিএম বলেন, সংরক্ষিত এলাকা হওয়ার পরও মানুষ অবাধে ব্রিজে ওঠানামা করে। ফলে অনেক অনাকাঙ্ক্ষিত ঘটনা ঘটে। প্রতিদিন বিকালে একজন এসআইসহ চার জন পুলিশ সদস্য দায়িত্ব পালন করে। কেপিআইভুক্ত এলাকায় দুইটি রেল ব্রিজে বিকালের পর বেশি নজরদারি করা হয়। সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ ছাড়া রেল ব্রিজের উপরে ওঠার কারোই কোনো অধিকার নেই। এই রেল ব্রিজ দিয়ে আশুগঞ্জ থেকে ভৈরবে বিদ্যুৎ সরবরাহ হয়। এজন্য এটি একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। এই এলাকাটিকে সিসিটিভির আওতাভুক্ত করা প্রয়োজন। রেলওয়ের পাশে বেড়া নির্মাণ করা দরকার। বাতি স্থাপন করা প্রয়োজন। রেল ব্রিজের নিরাপত্তার স্বার্থে একটি স্থায়ী পুলিশ ফাঁড়ি স্থাপন প্রয়োজন।