ট্রাম্পের শুল্ক: অস্ট্রেলিয়ার গোমাংস রপ্তানি খাতে ‘শাপে বর’

প্রকাশিত: ৩:৫৩ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১০, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

নানা দেশের নানা পণ্যে শুল্ক আরোপ করেছেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডনাল্ড ট্রাম্প। তবে অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংসে শুল্ক তেমন কোনো প্রভাব ফেলছে না, বরং অনেক ক্ষেত্রে লাভের সুযোগ দেখা দিয়েছে।বাড়তি শুল্ক আরোপের ঘোষণায় আলাদা করে উল্লেখ করেন অস্ট্রেলিয়া থেকে আমদানি করা গরুর মাংসের কথা। ট্রাম্প অভিযোগ করেন, “অস্ট্রেলিয়া আমাদের গরুর মাংস নেয় না।” ম্যাড কাউ রোগের প্রাদুর্ভাব ঠেকাতে ২০ বছর আগেই অ্যামেরিকা থেকে কার্যত গরুর মাংস আমদানি বন্ধ রেখেছে অস্ট্রেলিয়া।

ট্রাম্প বলেছিলেন, “আমি ওদের দোষ দেই না। কিন্তু এখন আমরা একই জিনিস করবো, আজ মধ্যরাত থেকেই শুরু।”

তবে তথ্য বিশ্লেষণ করলে দেখা যায়, ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত এর আগের ছয় মাসে যুক্তরাষ্ট্রে অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংস রপ্তানি রেকর্ড পর্যায়ে পৌঁছেছে। রপ্তানি করা এই গোমাংসের মাসিক গড় মূল্য প্রায় ২৭৫ মিলিয়ন ডলার (এক ডলার = ১২০ বাংলাদেশি টাকা প্রায়)।

অস্ট্রেলিয়ার বিংডারি ফুড গ্রুপের প্রধান এন্ড্রু ম্যাকডনাল্ড বার্তাসংস্থা রয়টার্সকে বলেন, “১০ শতাংশ শুল্ক নিয়ে আমি খুব বেশি চিন্তিত নই। অস্ট্রেলিয়ার জন্য বরং ভালোই হয়েছে।”

 

চীনের পাল্টা শুল্ক আরোপ এবং চীনে অবস্থিত শত শত মার্কিন মাংস প্রক্রিয়াকরণ প্রতিষ্ঠানের নিবন্ধন বাতিল করায় যুক্তরাষ্ট্র থেকে গোমাংস রপ্তানি হুমকির মুখে পড়েছে। চীনে যুক্তরাষ্ট্র থেকে প্রতি মাসে গড়ে প্রায় ১২৫ মিলিয়ন ডলারের মাংস রপ্তানি হয়। এর ফলে চীনে গরুর মাংসের বাজারে যে ঘাটতি তৈরি হয়েছে, সে সুযোগ কাজে লাগিয়ে ঘাটতি পূরণে এগিয়ে এসেছে অস্ট্রেলিয়া, ব্রাজিল এবং আর্জেন্টিনার মতো দেশগুলো।

রাবোব্যাংকের বিশ্লেষক আংগুস গিডলি-বেয়ার্ড জানান, শুল্ক আরোপের আগে যুক্তরাষ্ট্রে রপ্তানি করা অস্ট্রেলিয়ার চর্বিমুক্ত গরুর মাংসের দাম ছিল প্রতি পাউন্ড প্রায় তিন দশমিক ১২ ডলার। শুল্ক আরোপের পর সেটা বেড়ে দাঁড়িয়েছে তিন দশমিক ৪৩ ডলারে। এখনো এই দাম যুক্তরাষ্ট্রের স্থানীয় গরুর মাংসের (প্রতি পাউন্ড তিন দশমিক ৮০ ডলার) দামের তুলনায় কম।

তিনি জানান, শুল্ক বাড়ানোর ফলে অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংস দিয়ে তৈরি কোয়ার্টার-পাউন্ডার বার্গারের খরচ মাত্র আড়াই সেন্ট বেড়েছে।

কমনওয়েলথ ব্যাংকের বিশ্লেষক ডেনিস ভোজনেসেনস্কি জানান, ট্রাম্পের শুল্কের আওতায় পড়েনি এমন গোমাংস রপ্তানিকারক দেশ কানাডা ও মেক্সিকো। তবে স্বল্পমেয়াদে উল্লেখযোগ্যভাবে রপ্তানি বাড়ানোর সক্ষমতা এই দুই দেশ রাখে না।

যুক্তরাষ্ট্রের গরুর সংখ্যা ১৯৫০ এর দশকের পর সর্বনিম্ন হওয়ায় দেশটিতে উৎপাদন কমেছে ও দাম বেড়েছে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, মার্কিন ডলারের বিপরীতে অস্ট্রেলিয়ান ডলারের মান কমে যাওয়ায় রপ্তানিকারকেরা বেশি মুনাফা পাচ্ছেন। অস্ট্রেলিয়ান গরুর মাংস তুলনামূলক সস্তা এবং বাড়তি শুল্ক আরোপের পরেও প্রতিযোগিতামূলক অবস্থানেই রয়েছে।

প্রসঙ্গত, গতকাল বুধবার চীন ব্যতীত সব দেশের ওপর বর্ধিত শুল্ক তিন মাসের জন্য স্থগিত করেছেন ট্রাম্প। তবে তিনি বলেছেন, ১০ শতাংশ শুল্ক যাকে বেসলাইন বা প্রাথমিক শুল্ক বল হচ্ছে, তা সব দেশের ওপর কার্যকর থাকবে।