ভূমিকম্পে কাঁপল ক্যালিফোর্নিয়া, আগেই সতর্কবার্তা দিলো ইউএসজিএস
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি

ডেস্ক রিপোর্ট:
যুক্তরাষ্ট্রের ক্যালিফোর্নিয়ার কাছে শক্তিশালী ভূমিকম্প আঘাত হেনেছে। ভূমিকম্পের মাত্রা ছিল রিখটার স্কেলে ৫ দশমিক ২। ভূমিকম্পের কেন্দ্র ছিল জুলিয়ান শহরে। কম্পনের পর এখনও কোনও বড় ধরনের ক্ষয়ক্ষতি বা হতাহতের খবর পাওয়া যায়নি।
মূলত ভূমিকম্পের আগেই মার্কিন ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা কম্পনের বিষয়ে সতর্কবার্তা দিয়েছিল এবং এতে অনেকেই নিরাপদ স্থানে আশ্রয় নিয়েছেন। এছাড়া কম্পনের পর পরবর্তী আফটারশকও রেকর্ড করা হয়েছে।
মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে ব্রিটিশ সংবাদমাধ্যম বিবিসি।
সংবাদমাধ্যমটি বলছে, ক্যালিফোর্নিয়ার সান ডিয়েগো ও তার আশপাশের এলাকায় স্থানীয় সময় সোমবার ৫.২ মাত্রার একটি ভূমিকম্প অনুভূত হয়েছে বলে জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভূতাত্ত্বিক জরিপ সংস্থা ইউএস জিওলজিক্যাল সার্ভে (ইউএসজিএস)।
স্থানীয় সময় সকাল ১০টা ৮ মিনিটে এই কম্পন অনুভূত হয়। ভূমিকম্পটির কেন্দ্র ছিল জুলিয়ান শহরে। এটি সান ডিয়েগোর উত্তর-পূর্বে কুয়ামাকা পাহাড়ে অবস্থিত একটি ছোট পর্যটন শহর।দুই ঘণ্টা পর সান ডিয়েগো শহর কর্তৃপক্ষের মুখপাত্র পেরেট গডউইন বিবিসিকে জানান, কোনও ধরণের বড় ক্ষয়ক্ষতি বা আহতের খবর এখনও পাওয়া যায়নি। একই কথা জানিয়েছে সান ডিয়েগো শেরিফের দপ্তরও। তারা একে “চলমান পরিস্থিতি” বলে উল্লেখ করেছেন।
ক্যালিফোর্নিয়ার গভর্নর গ্যাভিন নিউসম ভূমিকম্পের পরপরই বিষয়টি নিয়ে অবহিত হয়েছেন বলে এক্স (সাবেক টুইটার)-এ জানিয়েছে তার দপ্তর। ভূমিকম্পের পর ইউএসজিএস একাধিক ছোট আফটারশকও রেকর্ড করেছে। তবে ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস জানিয়েছে, এই ভূমিকম্পের কারণে সুনামির কোনও আশঙ্কা নেই।
এদিকে ভূমিকম্পের আগমুহূর্তে ইউএসজিএস-এর জরুরি বার্তায় লস অ্যাঞ্জেলেস পর্যন্ত মানুষকে সতর্ক থাকতে বলা হয়েছিল। সতর্কবার্তায় লেখা ছিল, “ড্রপ, কভার, হোল্ড অন। নিজেকে রক্ষা করুন।”
কেভিন মানো নামে এক স্থানীয় ব্যক্তি বলেন, “আমি নাশতা করছিলাম, তখনই ফোনে সতর্কবার্তা আসে— এবং আমি দরজার ফ্রেমের নিচে চলে যাই। কিছুক্ষণের মধ্যেই ভূকম্পন শুরু হয়। সবকিছু কাঁপছিল। জীবনে প্রথম এতটা শক্তিশালী ভূমিকম্প অনুভব করলাম।”
তিনি জানান, তার বাড়িতে কোনও ক্ষতি হয়নি, তবে ভবিষ্যতের জন্য প্রস্তুত থাকার চিন্তা করছেন। তিনি বলেন, “এই ভূমিকম্প আর লস অ্যাঞ্জেলেসের দাবানল একত্রে আমাকে ভাবিয়েছে—শুধু হয়তো এখন একটা ইমারজেন্সি ব্যাগ গুছিয়ে রাখা উচিত।”
এই সতর্কতা কীভাবে কাজ করে?
বিবিসি বলছে, এই সতর্কবার্তা পাঠানোর পেছনে কাজ করে ইউএসজিএস-এর শেকঅ্যালার্ট (ঝযধশবঅষবৎঃ) নামের একটি বিশেষ সিস্টেম। এটি সারা ক্যালিফোর্নিয়ায় মাটির নিচে বসানো সিসমোগ্রাফ ও সেন্সর ব্যবহার করে তাৎক্ষণিকভাবে ভূমিকম্প শনাক্ত করে।
এই শেকঅ্যালার্ট টিমের প্রধান রবার্ট ডি গ্রুট বলেন, “আমরা প্রায় এক সেকেন্ডের তথ্য বিশ্লেষণ করেই বুঝতে পারি কী ঘটছে। এরপর সেই তথ্য গুগলসহ বিভিন্ন অ্যাপে পাঠানো হয়, যেন মানুষ আগেই সতর্ক হতে পারে।”
বড় ভূমিকম্পের ক্ষেত্রে ওয়্যারলেস ইমার্জেন্সি অ্যালার্ট সিস্টেম ব্যবহার করে পুরো অঞ্চলে বার্তা পাঠানো হয়। এইবারও সেটি করা হয়েছিল।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো শেকঅ্যালার্ট টিমের প্রধান রবার্ট ডি গ্রুট নিজেও ভূমিকম্পটি অনুভব করেন, যদিও তিনি ছিলেন প্যাসাডিনায়, যা ভূমিকম্পের কেন্দ্রস্থল থেকে প্রায় ১৩০ মাইল দূরে। কম্পনের বার্তা পেয়েই তিনি দ্রুত টেবিলের নিচে আশ্রয় নেন।
তিনি বলেন, “আমি প্রতিদিন ভূমিকম্প নিয়ে কাজ করি, কিন্তু যখন মাটি নড়ে ওঠে—সে অভিজ্ঞতা মোটেও সুখকর নয়।”