রাস্তা কেটেছে ডিপিডিসি দেড় ঘণ্টায় তেজগাঁও পাড়ি, তীব্র যানজট-গরমে সড়কে হাঁসফাঁস মানুষের

প্রকাশিত: ৪:৪৪ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ১৫, ২০২৫

নিজস্ব প্রতিবেদক:

কোলে দুই বাচ্চা, সঙ্গে স্ত্রীকে নিয়ে হাসপাতাল যাচ্ছিলেন সিএনজি যাত্রী আশিকুর রহমান। তেজগাঁও ফ্লাইওভার থেকে নামার পরেই পড়েন যানজটের মুখে। আর বের হওয়ার কোনো পথ নেই। বুটেক্স পার হতেই আধা ঘণ্টা। সময় তড়তড়িয়ে আগালেও যানজট যেন কমছিলই না সড়কে। সাড়ে ১১টা থেকে পৌনে ১টা বেজে যায় সাতরাস্তা মোড় পাড় হতে।সাতরাস্তার মোড়ে সিগন্যালে আটকে থাকা অবস্থায় এ সিএনজি যাত্রী ঢাকা পোস্টকে বলেন, কারণ তো কিছু জানি না। আটকে আছি তো আছিই। ১০ থেকে ১৫ মিনিট পর একটু আগায়। আবার বন্ধ, আর আগায় না। ট্রাফিক পুলিশের উচিত এই সড়কে সমস্যা থাকলে তা নগরবাসীকে জানানো। এতো গরমের মধ্যে যানজটে সড়কে আটকে থাকা মানুষের ভোগান্তি সীমাহীন। অসুস্থ বাচ্চাকে নিয়ে ঢাকা মেডিকেলে যাচ্ছি। এখন নিজেরই কাহিল লাগছে।

কয়েকদিন ধরেই এই সড়কে যানজট সীমাহীন আকার ধারণ করেছে বলে অভিযোগ তুলেছেন চলাচলকারী যাত্রীরা

ট্রাফিক পুলিশ বলছে, ভূ-গর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইনের কাজের কারণে রাস্তা কেটেছে ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি)। মগবাজার ফ্লাইওভারে ওঠার মুখে ভূমি অফিসের সামনে থেকে বাম বরাবর এফডিসি মোড় পর্যন্ত সড়ক কাটা হয়েছে। যে কারণে গতি কমে গেছে সড়কে। তার মধ্যে সাতরাস্তার পূর্ব ও পশ্চিম দুদিকে রিকশা চলাচল বৈধ থাকার কারণে গতি হারিয়েছে সড়কে যান চলাচলে। যার প্রভাবে এতো যানজট।

আজ মঙ্গলবার (১৫ এপ্রিল) বেলা সাড়ে ১১টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত সরেজমিনে দেখা যায়, তেজগাঁও লাভ রোডের মুখ থেকে বাংলাদেশ টেক্সটাইল ইউনিভার্সিটির সামনে দিয়ে সাতরাস্তার মোড় পর্যন্ত তীব্র যানজট। লাভ রোড, তেজগাঁও শিল্পাঞ্চলের ভেতরের সড়ক, দৈনিক আমাদের সময় পত্রিকার পাশের সড়কেও যানজট। লাভ রোডের মুখ থেকে মগবাজারমুখী মূল সড়কে তীব্র যানজটের কারণে পরিস্থিতি সকাল থেকেই বেসামাল অবস্থা। তীব্র রোদ আর গরমের কারণে যানজটে আটকা যাত্রীদের জনভোগান্তি চরমে উঠলেও সাতরাস্তা মোড় গতিশীল করতে পারছিল না ট্রাফিক পুলিশ।

মোটরসাইকেল যাত্রী আতিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, গত রোববার অফিসের সময়ে আরও খারাপ অবস্থা ছিল। আজকে একটু দেরি করে বের হয়েও রক্ষা হলো না। সড়ক কাটা। এই কাটা রাস্তা এখন বিষফোঁড়ার মতো যন্ত্রণা দিচ্ছে যাত্রীদের।বাস যাত্রীদের অনেককে বাস থেকে নেমে হেঁটে গন্তব্যের উদ্দেশ্যে রওনা হতে দেখা যায়। তাদের একজন রেজাউল ইমলাম নামে বাস যাত্রী বলেন, তীব্র গরম। বাস যেন এগোচ্ছে না। কতক্ষণ আর বসে থাকা যায়! সামনে যানজট পেছনেও যানজট। কতক্ষণে এটা কাটবে? তাই সেই অপেক্ষায় বসে না থেকে হাঁটা দিলাম।

সম্মতি ছাড়া রাজধানীর কোনো রাস্তা কাটাকাটি ও খোঁড়াখুঁড়ি করা যাবে না বলে গত ১২ মার্চ জানিয়েছিল ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি)। তখন ডিএমপি থেকে বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে জানানো হয়েছিল, কোনো প্রতিষ্ঠান যদি রাস্তা কাটাকাটি, খোঁড়াখুঁড়ির শর্ত ভঙ্গ করে মহানগরীতে যান চলাচলে বিঘ্ন ঘটায়, তাহলে সংশ্লিষ্ট কাজ বন্ধ করাসহ ঠিকাদার ও সংশ্লিষ্টদের বিরুদ্ধে যথাযথ আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।

খোঁজ নিয়ে জানা যায়, গত রমজানের আগেই এই সড়কে জিটুজি প্রজেক্টের অধীনে ভূ-গর্ভস্থ বৈদ্যুতিক লাইনের কাজ শুরু করার কথা ছিল ডিপিডিসির। কিন্তু নির্ধারিত সময়ে কাজ শেষ না হলে ও রমজানে জনভোগান্তির শঙ্কায় কাজ বন্ধ করতে বলেছিল ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ। সেই কাজ আবার গত ৬ এপ্রিল থেকে শুরু করেছে ডিপিডিসি। এফডিসির হাতিরঝিল মোড় থেকে ভূমি অফিসের সামনে পর্যন্ত রাস্তা কাটা সম্পন্ন হওয়ার পরই শুরু হয় যানজট ভোগান্তি। মাঝে তিনদিন কাজ বন্ধও করে দিয়েছিল ডিএমপির ট্রাফিক বিভাগ।ডিপিডিসির কাজের কারণে তেজগাঁও-মগবাজার সড়কে চলাচল করা যাত্রীদের জনভোগান্তি চরমে। কিন্তু বিকল্প রাস্তা না থাকায় কিছুই করা যাচ্ছে না বলে জানিয়েছেন ডিএমপির তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের তেজগাঁও জোনের অতিরিক্ত উপ-কমিশনার(এডিসি) তানিয়া সুলতানা ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিপিডিসির কাজ চলছে। তারা রাস্তা কাটছে। ভূমি অফিসের কাছেই রাস্তা কাটা পড়েছে। সঙ্গত কারণে ফ্লাইওভারে উঠতে যানবাহনগুলোকে বেগ পেতে হচ্ছে। যানজট দীর্ঘ হচ্ছে। বিকল্প রাস্তা নেই। যে কারণে যানজট হলে অবস্থা বেসামাল হচ্ছে। একদিকে বন্ধ করলে আরেকদিকে প্রভাব পড়ছে। আবার একদিকের যানবাহন আরেকদিকে চালালে সেখানে চাপ বেড়ে যাচ্ছে।

ট্রাফিক-তেজগাঁও জোনের সহকারী পুলিশ কমিশনার (তেজগাঁও) অনীশ কীর্ত্তনীয়া ঢাকা পোস্টকে বলেন, ডিপিডিসি সরকারি প্রতিষ্ঠান। তারা ভূ-গর্ভস্থ লাইনের কাজের কারণে রাস্তা কেটেছে। আমরা সেখানে পাটাতন দিয়ে রাস্তা সচল রাখার চেষ্টা করতেছি। কিন্তু চাপ থেকে যাচ্ছে।

যোগাযোগ করা হলে তেজগাঁও ট্রাফিক বিভাগের উপ-কমিশনার(ডিসি) রফিকুল ইসলাম ঢাকা পোস্টকে বলেন, এখানে ডিপিডিসির কাজ করার কথা রমজানের আগে। সেটা তারা শুরু করতে পারেনি। রমজানে ডিএমপি খোঁড়াখুঁড়ি আটকে দিয়েছিল। এখন তারা আবার কাজ শুরু করেছে। যেখানে তারা কাটছে সেখানে বিকল্প সড়ক তো নেই, বরং সরু জায়গা কাটায় আরও সরু হয়েছে সড়ক। সেই চাপ সাতরাস্তা থেকে লাভ রোড নাবিস্কো পর্যন্ত চলে যাচ্ছে। সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনায় আজকে সকালে অফিস টাইমে পরিস্থিতি কী হয়, তা দেখার জন্য সরেজমিন পরিদর্শন করেছেন ডিএমপির অতিরিক্ত কমিশনার (ট্রাফিক) মো. সারওয়ার। আমরা চেষ্টা করছি বিকল্প কিছু করার জন্য।

যোগাযোগ করা হলে জিটুজি প্রজেক্টের ইঞ্জিনিয়ার সামিউল আহসান বলেন, এই কাজ আপাতত ২ থেকে ৩ দিন স্থগিত আছে। আগামী ২৫ এপ্রিলের মধ্যে এই অংশের কাজ শেষ করার কথা। এটা আবার সামনে যাবে। বুটেক্সের সামনে গিয়ে বিজয় সরণি গিয়ে শেষ হবে। যানজট হচ্ছে। পরিস্থিতি অনুযায়ী যতোটুকু কাটা হয়েছে, ততটুকু দ্রুত শেষ করার চেষ্টা চলছে