
ক্রীড়া ডেস্ক:
জাতীয় দলের ক্রিকেটারদের সঙ্গে দুর্ব্যবহার এবং চুক্তির শর্ত ভঙ্গের অভিযোগে প্রধান কোচের দায়িত্ব হারান চান্দিকা হাথুরুসিংহে। দীর্ঘ সময় পেরিয়ে সেই অধ্যায়ের পর্দা একটু খুললেন শ্রীলঙ্কান এই কোচ। তিনি দাবি করেন, বাংলাদেশ ছাড়ার সময় তিনি প্রাণনাশের ভয় পর্যন্ত পেয়েছিলেন। জনরোষের মুখে পড়তে পারেন, এমন ভয়ও নাকি জেগেছিল তার মনে।
২০২৪ সালের জুলাই-আগস্টে দেশে রাজনৈতিক অস্থিরতা চূড়ায় ওঠে। গণঅভ্যুথানে সরকার পরিবর্তনের পর গত আগস্টে পরিবর্তন আসে বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডেও। সভাপতি হিসেবে দায়িত্ব নেন ফারুক আহমেদ। দায়িত্ব পেয়ে গত অক্টোবরের মাঝামাঝিতে প্রধান কোচের দায়িত্ব থেকে হাথুরুসিংহেকে সরিয়ে দেন তিনি।
বিশ্বকাপে স্পিনার নাসুম আহমেদকে হেনস্তা করার অভিযোগ ছিল হাথুরুসিংহের বিরুদ্ধে। আরও কিছু আচরণগত অভিযোগে তাকে ‘কারণ দর্শানোর’ নোটিশ দিয়েছিল বোর্ড। মাত্র একদিনেই তার জবাব পাঠান হাথুরুসিংহে। কিন্তু সেটিকে ‘অগ্রহণযোগ্য’ আখ্যা দিয়ে বিসিবি চুক্তি বাতিল করে দেয়।
সম্প্রতি ‘কোড স্পোর্টস’-এর সঙ্গে এক সাক্ষাৎকারে বাংলাদেশ ছাড়ার সেই সময়কার ভয়ের কথা বলেন হাথুরুসিংহে। তার দাবি, বিসিবির সিইও নিজামউদ্দিন চৌধুরীর কাছ থেকে তিনি সতর্কবার্তা পেয়েছিলেন- ‘আপনার যাওয়া উচিত, আপনি কি টিকিটের ব্যবস্থা করেছেন?’
হাথুরুসিংহে বলেন, ‘তখনই টের পাই, আমার নিরাপত্তা ঝুঁকিতে আছে। সাধারণত আমার সঙ্গে একজন ড্রাইভার ও একজন সশস্ত্র নিরাপত্তারক্ষী থাকতেন। সেদিন কেবল ড্রাইভার এসেছিলেন।’
এরপর ব্যাংকে টাকা তুলতে গেলে টিভির ব্রেকিং নিউজে জানতে পারেন, তাকে চাকরিচ্যুত করা হয়েছে এবং একজন ক্রিকেটারকে হেনস্তার অভিযোগ রয়েছে তার বিরুদ্ধে। ‘ব্যাংকের ব্যবস্থাপক তখন বললেন, ‘কোচ, আপনাকে আমি বাড়ি পৌঁছে দেব, কারণ আপনি রাস্তায় নিরাপদ নন।’ তখন সত্যিই ভয় পেয়ে যাই।’ যোগ করেন হাথুরুসিংহে।
পরিস্থিতি এতটাই ভয়াবহ ছিল যে, হুডি ও ক্যাপ পরে তিনি মধ্যরাতের একটি ফ্লাইটে দেশ ছাড়েন। বিমানবন্দরে কোনো আনুষ্ঠানিক নিরাপত্তা ছিল না। প্রবেশপথে এক বিমানবাহিনীর কর্মকর্তার আবেগমাখা বিদায়বাক্যও তাকে নাড়িয়ে দেয়, ‘আমি দুঃখিত কোচ, আপনি আমাদের দেশের জন্য অনেক কিছু করেছেন।’
রাজনৈতিক অস্থিরতার সেই সময় গ্রেপ্তার আতঙ্কেও ভুগছিলেন হাথুরুসিংহে। জানান, ‘সাবেক সরকারের একজন মন্ত্রী দেশ ছাড়ার সময় রানওয়েতে তার বিমান থামিয়ে গ্রেপ্তার করা হয়েছিল। আমিও আশঙ্কায় ছিলাম, যদি আমাকে থামিয়ে দেওয়া হয়।’
যদিও তবে সাক্ষাৎকারে হাথুরুসিংহের বক্তব্যে যে আতঙ্কের কথা এসেছে, সেটা একটু অমূলকই। তার জন্য ওই সময়ের পরিস্থিতি যতটা ভীতিকর ছিল বলে তিনি বর্ণনা করেছেন, আসলে সে রকম কিছুই ছিল না। বরং বাংলাদেশ দলের সমর্থকদের অনেকে যেমন চেয়েছিলেন হাথুরুসিংহকে বিদায় করা হোক, অনেকে আবার তার পক্ষেও ছিলেন। হাথুরুসিংহেকে রেখে দিলেই বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য ভালো হবে, এমনটা মনে করা মানুষেরও অভাব ছিল না তখন।