জবির রেজিস্ট্রার ছাত্রফ্রন্টের সভাপতিকে বললেন, গেট আউট, একে বের করে দাও

প্রকাশিত: ১০:৫৩ পূর্বাহ্ণ, এপ্রিল ২৪, ২০২৫

সানজিদা মাহবুবা:

 

‘বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কারো পার্সোনাল কিছু চুরি হলে সেটা তার (শিক্ষার্থীর) দায়িত্ব বিশ্ববিদ্যালয়ের না। বিশ্ববিদ্যালয় পার্কিংয়ের জায়গা না। বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি ভাত-রুটির ব্যবস্থা করা? গেট আউট, একে বের করে দাও।’ রেগে-মেগে এভাবেই নিজ কক্ষ থেকে জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দিন বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী ও এক ছাত্রনেতাকে বের করে দেন। ভুক্তভোগী ওই ছাত্রনেতার নাম ইভান তাহসীব। তিনি বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সভাপতি।

গত সোমবার বিশ্ববিদ্যালয় থেকে সাইকেল চুরির ঘটনায় যথাযথ ব্যবস্থা যাতে কর্তৃপক্ষ নেয় সেজন্য ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীকে সঙ্গে নিয়ে রেজিস্ট্রার বরাবর লিখিত অভিযোগ দিতে যান ইভান। তখন এ ঘটনা ঘটে, যার একটি রেকর্ডিং (ধারণ) এ প্রতিবেদকের হাতে এসেছে। রেকর্ডিংয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ও ছাত্রনেতা ইভানকে নানা বিষয়টি নিয়ে কথা বলতে শোনা যায়।

সম্প্রতি বিশ্ববিদ্যালয় ও গ্যারেজ থেকে নিয়মিত সাইকেল চুরির সুরাহার জন্য রেজিস্ট্রারের নিকট লিখিত অভিযোগ ও নিরাপত্তা বাড়াতে আবেদন করতে যান সমাজতান্ত্রিক ছাত্রফন্টের সভাপতি ইভান তাহসীব। তবে বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কোনো শিক্ষার্থীর কিছু হারালে সে দায় প্রশাসনের না বলে জানান ভারপ্রাপ্ত রেজিস্ট্রার ড. শেখ গিয়াসউদ্দিন। এ সময় তিনি বলেন, ‘আন্ডারগ্রাউন্ডে শুধু বিশ্ববিদ্যালয়ের গাড়ি রাখা হয়। কিন্তু আপনারা এখানে রাখেন এটা অবৈধ।’

তখন ওই শিক্ষার্থী জানতে চান, ‘তাহলে স্যার এই স্টুডেন্টদের দায়িত্ব কে নিচ্ছে? এই জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, ডাজনট ম্যাটার।

ইভান বলেন, ‘তাহলে সাইকেল নিয়ে ক্যাম্পাসে না আসতে পারলে টিউশনে যাবে কিভাবে সে?’ জবাবে রেজিস্ট্রার বলেন, এটা তার ব্যক্তিগত ব্যাপার। আপনি কি খাবেন, না খাবেন এটা কি বিশ্ববিদ্যালয়ের দায়িত্ব?

ইভান বলেন, ‘এই ছেলেটি শুধু নিজে রোজগার করে খায় না, সে বাসায়ও টাকা পাঠায়, আপনারা শিক্ষার্থীদের সুবিধা দেখবেন না?’

তখন রেগে গিয়ে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘বিশ্ববিদ্যালয়ের কাজ কি ভাত-রুটি ব্যবস্থা করা?’

জবাবে ইভান বলেন, ‘আমি ভাত-রুটির কথা বলছি না। ওর সাইকেল হারিয়েছে, তার নিরাপত্তার কথা বলছি। বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীর জান-মালের নিরাপত্তার দায়িত্ব প্রশাসনের।’ এ সময় রেজিস্ট্রার বলেন, ‘নেভার।’

ইভান বলেন, ‘আমরা এখানে থাকি গ্রাম থেকে আসছি, টিউশনি না করলে চলব কিভাবে?’

উত্তেজিত হয়ে তখন রেজিস্ট্রার বলেন, ‘এটা আপনার আগে ভাবা উচিৎ ছিল। ওখানে স্কুল-কলেজ নাই, আর বিশ্ববিদ্যালয় নাই? ওখানে ভর্তি হতেন।’

ইভান বলেন, ‘স্যার আপনি কথা গুলো পাবলিকলি বলতে পারবেন শিক্ষার্থীদের?’

উত্তরে রেজিস্ট্রার বলেন, ‘আমি বলি না। আমি লিখে দেই। ভর্তি বিজ্ঞপ্তিতে লেখা থাকে এটা অনাবাসিক বিশ্ববিদ্যালয়, আপনি কত সালে ভর্তি হয়েছেন?’

এ সময় রেজিস্ট্রার ইভানকে বলেন, ‘গেট আউট।’ এবং পাশে থাকা কর্মকর্তাদের তিনি আরও বলেন, ‘একে বের করে দাও।’

এ বিষয়ে কথা বলতে রেজিস্ট্রার অধ্যাপক ড. শেখ গিয়াসউদ্দীনের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি রিসিভ করেননি।

এদিকে শিক্ষার্থীর সাথে দুর্ব্যবহারের নিন্দা জানিয়েছেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অন্যান্য ছাত্র সংগঠনের নেতারা। নিন্দা জানিয়ে বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনের আহ্বায়ক মাসুদ রানা বলেন, ‘৫ আগস্টে ফ্যাসিস্ট সরকারের বিরুদ্ধে সাহসী আন্দোলনের মাধ্যমে ছাত্রসমাজ যে ঐতিহাসিক বিজয় অর্জন করেছিল, তা ছিল একটি সহযোগিতাপূর্ণ, অংশগ্রহণমূলক প্রশাসনিক পরিবেশ গড়ে তোলার প্রত্যাশায়। কিন্তু অত্যন্ত দুঃখজনকভাবে বলতে হয়, বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন এখনও সেই প্রত্যাশা পূরণে ব্যর্থ। বিশেষ করে রেজিস্ট্রারের আচরণ পূর্ববর্তী ফ্যাসিস্ট প্রশাসনের প্রতিচ্ছবি হয়ে উঠেছে, এটি আমাদের গভীরভাবে উদ্বিগ্ন করে তোলে। আমরা তার দমনমূলক ও অসহযোগিতামূলক আচরণের বহিঃপ্রকাশ প্রত্যক্ষ করছি। এই পরিস্থিতি আর সহ্য করা যায় না। আমরা তার পদত্যাগ দাবি করছি, এটাই এখন সময়ের দাবি।’

জবি ছাত্রঅধিকার পরিষদের সভাপতি এ কে এম রাকিব বলেন, ‘আমরা এর আগেও স্যারের এমন দুব্যবহারের শিকার হয়েছি। শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের ফলেই তিনি ওই চেয়ারে বসেছেন।’

বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. রেজাউল করিম বলেন, ‘ঘটনা শুনেছি। এই ধরনের ঘটনা কাম্য নয়। আমি রেজিস্ট্রার ও ভুক্তভোগী ইভানের সঙ্গে কথা বলেছি। এ নিয়ে আলোচনা হবে।’