পাকিস্তানে হামলার ‘প্রেক্ষাপট’ তৈরির চেষ্টায় ভারত

সীমান্তের নিয়ন্ত্রণরেখায় টানা চতুর্থ রাতে গোলাগুলি

প্রকাশিত: ৪:১৭ অপরাহ্ণ, এপ্রিল ২৯, ২০২৫

ডেস্ক রিপোর্ট:

 

ভারত নিয়ন্ত্রিত কাশ্মীরের পেহেলগামে গত সপ্তাহে হামলার ঘটনার পর ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি ফোনে বিশ্বের এক ডজনের বেশি নেতার সঙ্গে কথা বলেন। বিভিন্ন দেশের শতাধিক কূটনীতিককে ভারতের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ে ডেকে ব্রিফ করা হয়। নয়াদিল্লিতে থাকা অন্তত চারজন কূটনীতিক জানিয়েছেন, এটি করা হয়েছিল চিরপ্রতিদ্বন্দ্বী প্রতিবেশী পাকিস্তানের সঙ্গে মুখোমুখি হওয়ার উত্তেজনা কমানোর জন্য নয়, বরং যাতে সামরিক পদক্ষেপ নেওয়া যায়, সেই প্রেক্ষাপট তৈরির জন্য।

প্রভাবশালী মার্কিন সংবাদমাধ্যম নিউইয়র্ক টাইমসের প্রতিবেদনে এসব তথ্য উঠে এসেছে। রোববার প্রকাশিত প্রতিবেদনে আরও বলা হয়, পাকিস্তানের নাম না ধরে গত বৃহস্পতিবার দেওয়া এক বক্তব্যে ভারতের প্রধানমন্ত্রী মোদি ‘সন্ত্রাসবাদের আখড়া’ ধ্বংসের হুমকিও দিয়েছেন। এ অবস্থায় দুই দেশ নাগরিক বিতাড়নসহ বেশ কিছু পাল্টাপাল্টি পদক্ষেপ নেয়। পাশাপাশি সীমান্তে অব্যাহতভাবে উত্তেজনা চলছে। গত রোববার রাতভর কাশ্মীর সীমান্তে শূন্যরেখায় টানা চতুর্থ দিনের মতো ভারত ও পাকিস্তানের নিরাপত্তা বাহিনীর মধ্যে গোলাগুলি হয়।

মার্কিন গণমাধ্যমটি জানায়, পাকিস্তানের সঙ্গে উত্তেজনার পাশাপাশি ভারতীয় বাহিনী কাশ্মীরে শত শত মানুষকে আটক করছে। সেই সঙ্গে চলছে হামলাকারীদের সন্ধান। ভারতজুড়ে বেড়েছে মুসলিমবিরোধী মনোভাব। যেসব কাশ্মীরি শিক্ষার্থী দেশটির রাজ্যগুলোর বিভিন্ন কলেজ-বিশ্ববিদ্যালয়ে লেখাপড়া করছেন, তারা নানা হেনস্তার শিকার হচ্ছেন। অনেককে কাশ্মীরে ফিরে যেতে বাধ্য করা হচ্ছে।
২২ এপ্রিল পেহেলগামে বন্দুক হামলায় ২৬ জন নিহত হন। ভারত আনুষ্ঠানিকভাবে একটি সংগঠনকে দায়ী করলেও এ ঘটনায় পাকিস্তানের জড়িত থাকার যথেষ্ট প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। এদিকে পাকিস্তান সরকার জড়িত থাকার কথা অস্বীকার করেছে। নয়াদিল্লিতে ব্রিফিংয়ে ভারতীয় কর্মকর্তারা অতীতে সন্ত্রাসী কর্মকাণ্ডে পাকিস্তানের সমর্থনের কথা জানান। তবে শক্ত প্রমাণের অভাব থাকায় বিশ্লেষক ও কূটনীতিকরা মনে করেন, পাকিস্তানে হামলা চালানো বা কোনো পদক্ষেপ নেওয়ার আগে ভারতের উচিত পর্যাপ্ত তথ্য-উপাত্ত জড়ো করা।

তবে পাকিস্তানের প্রতিরক্ষামন্ত্রী খাজা মুহাম্মদ আসিফ রয়টার্সকে বলেছেন, পেহেলগাম হামলার পর তাদের ভূখণ্ডে ভারতের সম্ভাব্য সামরিক আক্রমণ ঘিরে তারা প্রস্তুতি নিয়েছেন। সোমবার ইসলামাবাদে নিজ কার্যালয়ে তিনি বলেন, ‘আমরা বাহিনীগুলোকে নতুনভাবে মোতায়েন করেছি।’

এ অবস্থায় উভয় দেশকে শান্ত থাকার আহ্বান জানিয়েছে যুক্তরাষ্ট্র ও চীন। রয়টার্স জানায়, রোববার মার্কিন পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় বলেছে, তারা ভারত ও পাকিস্তান– উভয় দেশের সংস্পর্শে আছেন। যুক্তরাষ্ট্র চায়, দুই দেশ যেন চলমান উত্তেজনার ‘দায়িত্বশীল সমাধান’ খুঁজে বের করে। চীনও দুই দেশকে ‘সংযম’ দেখাতে বলেছে। সোমবার চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জাইকুন বলেন, দুই পক্ষ সংযম দেখাবে এবং আলোচনার মাধ্যমে সৃষ্ট দূরত্ব কমাবে– এমন প্রত্যাশা করে চীন। তবে রোববার চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়্যাং ই পাকিস্তানের উপপ্রধানমন্ত্রী ইসহাক দারের সঙ্গে ফোনে কথা বলেন এবং পেহেলগামের ঘটনার তদন্তে সহায়তার আশ্বাস দেন। এ অবস্থায় দুই দেশের রাজনীতিকরা বাগ্‌যুদ্ধে মাঠ গরম করছেন।