নিজস্ব প্রতিবেদক:
শপথ গ্রহণ করেছেন গাজীপুর সিটি করপোরেশনের নব নির্বাচিত মেয়র জায়েদা খাতুন। গত সোমবার (৩ জুলাই) প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মেয়র জায়েদা খাতুনকে শপথবাক্য পাঠ করান। কিন্তু শপথ গ্রহণের পর দিন মঙ্গলবার গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা করেছেন পরাজিত মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলাম। জেলার সিনিয়র সহকারী জজ ১ নম্বর আদালত ও নির্বাচনী ট্রাইব্যুনালে তিনি ওই মামলা দায়ের করেন।
মামলার বাদী আতিকুল ইসলাম গণফ্রন্ট মনোনীত মেয়র প্রার্থী ছিলেন এবং মাছ প্রতীকে অংশ নিয়ে নির্বাচন করেছেন। তবে প্রয়োজনীয় সংখ্যক ভোট না পাওয়ায় তার জামানত বাজেয়াপ্ত হয়। মামলায় জায়েদা খাতুনের মনোনয়নপত্র অবৈধ ঘোষণা, বাতিল এবং ২৫ মে মেয়র হিসেবে নির্বাচিত প্রার্থীর নির্বাচন বাতিলের আবেদন করা হয়েছে।
মামলায় মেয়র জায়েদা খাতুনকে ১ নম্বর বিবাদী এবং প্রধান নির্বাচন কমিশনার কাজী হাবিবুল আউয়াল, নির্বাচন কমিশনার মো. আলমগীর, বাংলাদেশ নির্বাচন কমিশনের সচিব মো. জাহাঙ্গীর আলম, গাজীপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসার মো. ফরিদুল ইসলামকে মোকাবিলা বিবাদী করা হয়েছে।
মামলার আবেদনে বলা হয়েছে, ১ নম্বর বিবাদী জায়েদা খাতুন তার নির্বাচনী হলফনামায় স্বামীর নামের বিষয়ে অসত্য তথ্য প্রদান করেছেন। একইসঙ্গে নির্বাচনী হলফনামার ১ নম্বর শর্ত অনুযায়ী শিক্ষাগত যোগ্যতার সার্টিফিকেটের সত্যায়িত কপি সংযুক্ত না করে প্রতারণামূলকভাবে মেয়র পদে প্রার্থী হয়েছেন। হলফনামার এই শর্ত পূরণ করতে না পারায় জায়েদা খাতুনের মনোনয়ন অবৈধ ছিল। এ ছাড়া নির্বাচনী হলফনামায় ৪ নম্বর অংশও পূরণ করেননি তিনি। আয়কর নিয়েও দিয়েছেন আংশিক ও অসত্য তথ্য। এ ছাড়া তার বিরুদ্ধে আরও কয়েকটি অভিযোগ আনা হয়েছে।
এ বিষয়ে আতিকুল ইসলাম গণমাধ্যমকে বলেন, আমি গত ১১ মে নির্বাচনের রিটার্নিং অফিসারের কাছে লিখিত অভিযোগ দাখিল করেছিলাম। কিন্তু আজ পর্যন্ত কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয়নি। তাই আদালতের দ্বারস্থ হয়েছি। এদিকে, মেয়র জায়েদার শপথের পরদিনই গাজীপুর সিটি নির্বাচন বাতিল চেয়ে মামলা দায়ের করার বিষয়টি এখন টক অব দ্য গাজীপুর। মেয়র জাহাঙ্গীরের মতো তার মাকেও চেয়ার থেকে সরানো হবে কিনা এমন প্রশ্ন ঘুরছে গাজীপুরজুড়ে।
এ প্রসঙ্গে আতিকুল ইসলামের আইনজীবী মো. নুর নবী সরদার গণমাধ্যমকে ট্রাইব্যুনাল মামলাটি গ্রহণ করে বিবাদীদের প্রতি সমনের আদেশ দিয়েছেন। আইন অনুযায়ী এই মামলা ১৮০ দিনের মধ্যে নিষ্পত্তির বিধান রয়েছে। এ বিষয়ে পরবর্তী শুনানির জন্য আগামী ২ আগস্ট দিন ধার্য করেছেন আদালত। ওই দিন আদালত কী সিদ্ধান্ত দেবেন তার ওপর নির্ভর করবে জায়েদা খাতুনের ভাগ্য।
প্রসঙ্গত, ২০২৩ সালের ২৫ নভেম্বর তৎকালীন মেয়র জাহাঙ্গীর আলমকে বরখাস্ত করে প্রজ্ঞাপন জারি করে স্থানীয় সরকার বিভাগ। প্রজ্ঞাপনে জাহাঙ্গীর আলমের বিরুদ্ধে ভুয়া দরপত্র, নির্দিষ্ট কোম্পানিকে দর দেওয়ার অনুরোধসংক্রান্ত (আরএফকিউ) দরপত্রে অনিয়ম, বিভিন্ন পদে অযৌক্তিক লোকবল নিয়োগ, বিশ্ব ইজতেমা উপলক্ষে ভুয়া বিল–ভাউচারের মাধ্যমে ও একই কাজ বিভিন্ন প্রকল্পে দেখিয়ে অর্থ আত্মসাৎ, প্রতিবছর হাটবাজার ইজারার টাকা যথাযথভাবে নির্ধারিত খাতে জমা না রাখাসহ নানাবিধ অভিযোগ উল্লেখ করা হয়। তার আগে ১৯ নভেম্বর আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী কমিটির বৈঠকে জাহাঙ্গীর আলমকে দল থেকে বহিষ্কার করা হয়। তার বিরুদ্ধে দলীয় শৃঙ্খলা ভঙ্গের অভিযোগ আনা হয়।