যুক্তরাজ্যের কাছে বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণা ও প্রযুক্তিগত সহায়তা চাইলেন টিপু মুনশি

প্রকাশিত: ৯:২৭ অপরাহ্ণ, জুলাই ৫, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

দেশীয় পণ্যের বৈচিত্র্যকরণে প্রযুক্তিগত সক্ষমতা বৃদ্ধি এবং বাণিজ্য সম্পর্কিত গবেষণায় সহযোগিতা করার জন্য যুক্তরাজ্যের প্রতি আহবান জানিয়েছেন বাণিজ্য মন্ত্রী টিপু মুনশি।
বুধবার রাজধানীর একটি পাঁচতারকা হোটেলে বাংলাদেশে সফররত যুক্তরাজ্যের বিজনেস এন্ড ট্রেড স্টেট মিনিস্টার নাইজেল হাডলস্টোনের নেতৃত্বে একটি প্রতিনিধিদলের সাথে বৈঠকে তিনি এ আহবান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী বলেন, বাংলাদেশ ২য় বৃহত্তম পোশাক রপ্তানিকারক দেশ, ৩য় বৃহত্তম সবজি উৎপাদনকারী, বিশ্বের ৪র্থ বৃহত্তম ধান উৎপাদক এবং অভ্যন্তরীণ মিষ্টি জলের মৎস্য চাষের ৫ম বৃহত্তম উৎপাদনকারী দেশ। এছাড়া বাংলাদেশ উচ্চ মানের ওষুধ, জেনেরিক ওষুধ, অনন্য পাটজাত পণ্য, চামড়াজাত পণ্য, হোম টেক্সটাইল, হিমায়িত খাদ্য, সিরামিক, আসবাবপত্র, খেলনা এবং ইলেকট্রনিক পণ্যসহ অনেক বৈচিত্র্যময় পণ্য উৎপাদন করছে। বাংলাদেশ থেকে এসব পণ্য আমদানির জন্য অনুরোধ জানান তিনি।
যুক্তরাজ্য বর্তমানে বাংলাদেশের ৩য় বৃহত্তম রপ্তানি গন্তব্য উল্লেখ করে টিপু মুনশি জানান, ২০২২-২০২৩ অর্থবছরে বাংলাদেশ সেদেশে ৫.৩১ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের পণ্য রপ্তানি করেছে এবং যুক্তরাজ্য থেকে ৪৫০ মিলিয়ন ডলার মূল্যের পণ্য আমদানি করেছে।
তিনি বলেন, উভয় দেশের বাণিজ্য, বিনিয়োগ এবং অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার করার অনেক সুযোগ রয়েছে। তিনি দুই দেশের পারস্পরিক স্বার্থ অক্ষুন্ন রেখে অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ককে নতুন উচ্চতায় উন্নীত নিয়ে যেতে একযোগে কাজ করার উপর গুরুত্বারোপ করেন।
বাংলাদেশ বর্তমানে বিনিয়োগের উত্তম জায়গা উল্লেখ করে টিপু মুনশি বলেন, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে পদ্মা সেতু নির্মাণ, ঢাকা মেট্রো রেলের উদ্বোধন, ঢাকা বিমানবন্দরের তৃতীয় টার্মিনাল, কক্সবাজারে নতুন আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর এবং ১০০টি বিশেষ অর্থনৈতি অঞ্চল নতুন মাত্রা যোগ করেছে। বিদেশী বিনিয়োগ বাড়াতে দেশভিত্তিক আলাদা অর্থনৈতিক জোন বরাদ্দ দেয়া হচ্ছে। তিনি এসব অর্থনৈতিক অঞ্চলে বিনিয়োগের জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের প্রতি আহবান জানান।
বাণিজ্যমন্ত্রী জানান, দুই দেশের অর্থনৈতিক ও বাণিজ্যিক সম্পর্ক সম্প্রসারণে জয়েন্ট ওয়ার্কিং গ্রুপ ইতোমধ্যে দুই দফা বৈঠক করেছে এবং খুব শিগগির তৃতীয় বৈঠকে বসবে। ঢাকায় ১ম ও ২য় বাংলাদেশ-ইউনাইটেড কিংডম ট্রেড অ্যান্ড ইনভেস্টমেন্ট ডায়ালগ অনুষ্ঠিত হবে। এই নিয়মিত সংলাপ আমাদের যৌথ মূল্যবোধ ও মানদন্ডের ভিত্তিতে বাংলাদেশ ও যুক্তরাজ্যের মধ্যে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্যিক ও অর্থনৈতিক সম্পর্ক জোরদার ও বিনিয়োগ শক্তিশালী করবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
ডেভেলপিং কান্ট্রি ট্রেডিং স্কিম-ডিসিটিএস এর অধীনে ২০২৯ সাল পর্যন্ত ডিউটি ফ্রি ও কোটা ফ্রি সুবিধা অব্যাহত রাখার জন্য যুক্তরাজ্যকে সরকারকে ধন্যবাদ জানান তিনি।
টিপু মুনশি বলেন,আমরা দীর্ঘতম সম্ভাব্য সময় পর্যন্ত ডিউটি ফ্রি-কোটা ফ্রি সুবিধার স্থিতি অব্যাহত রাখতে চাই। তিনি ২০২৬ সালে এলডিসি থেকে বাংলাদেশের উত্তরণের পর পরবর্তী আরও ছয় বছর শুল্কমুক্ত কোটামুক্ত সুবিধা অব্যাহত রাখতে পাশে থাকারও আহবান জানান।
বৈঠকে সফররত যুক্তরাজ্যের বিজনেস এন্ড ট্রেড স্টেট মিনিস্টার নাইজেল হাডলস্টোন বলেন, তাঁর দেশ বাংলাদেশে ব্যবসা-বাণিজ্যের পাশাপাশি এভিয়েশন, শিক্ষা ও প্রতিরক্ষার বিষয়ে সহযোগিতা করতে আগ্রহী।
বাংলাদেশ-যুক্তরাজ্যের মধ্যকার চমৎকার বন্ধত্বপূর্ণ সম্পর্কের কথা উল্লেখ করে প্রতিমন্ত্রী বলেন, দুই দেশের বাণিজ্য সম্পর্ক ক্রমশ বৃদ্ধি পাচ্ছে। যুক্তরাজ্যে পোশাক ছাড়াও বাংলাদেশী পণ্যের বিশাল বাজার রয়েছে। ভবিষ্যতে এ বাজার বহুগুণ বৃদ্ধি পাবে বলে তিনি আশাবাদ ব্যক্ত করেন।
এসময় তিনি বাংলাদেশে যুক্তরাজ্যের ব্যবসায়ীরা বিভিন্ন ধরণের সমস্যা মোকাবেলা করছেন বলে বাণিজ্যমন্ত্রীকে অবহিত করেন এবং সেগুলো সমাধানের জন্য অনুরোধ জানান। সুনির্দিষ্ট আকারে সমস্যার কথা জানালে তা দ্রুত সমাধানের উদ্যোগ নেয়া হবে বলে আশ্বস্ত করেন বাণিজ্যমন্ত্রী।
বৈঠককালে বাংলাদেশে নিযুক্ত যুক্তরাজ্যের হাইকমিশনার সারাহ ক্যাথেরিন কুক এবং বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. আব্দুর রহিম খানসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাগণ উপস্থিত ছিলেন।