ঢাকার দুই সিটি করপোরেশনে প্রধান দুই দল আওয়ামী লীগ ও বিএনপি কাউন্সিলর প্রার্থী নিয়ে হিসাব মেলাতে পারছে না। দুই সিটিতে আওয়ামী লীগ কাউন্সিলর প্রার্থী ঘোষণা করলেও আলোচনা-সমালোচনার ঝড় বইছে। নানা কারণে এরই মধ্যে পাঁচজন প্রার্থীকে প্রত্যাহার করা হয়েছে। অন্যদিকে তিন দিন চেষ্টা করেও দুই সিটিতে কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি। এ নিয়ে গত রাতেও দলের স্থায়ী কমিটির বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়। রাত সাড়ে ৯টায় এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত প্রার্থী ঘোষণা করেনি বিএনপি। এ নিয়ে প্রার্থীসহ বিএনপির স্থানীয় নেতা-কর্মীরাও ক্ষুব্ধ। আজ কাউন্সিলর প্রার্থীরা নির্বাচন কমিশনে মনোনয়নপত্র জমা দেবেন। ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের ২০ নম্বর ওয়ার্ডে আওয়ামী লীগের সমর্থন পেয়েছেন জাহিদুর রহমান। তার বিরুদ্ধে দখল, মাদক ব্যবসা, জুয়া, চাঁদাবাজি, সন্ত্রাসী বাহিনী সৃষ্টিসহ সন্ত্রাসী কর্মকান্ডের অভিযোগ রয়েছে। তার ভাইদের বিরুদ্ধেও রয়েছে বিস্তর অভিযোগ। ক্যান্সার হাসপাতালে রোগীদের ভর্তিবাণিজ্যের অভিযোগ রয়েছে জাহিদুর রহমান পরিবারের সদস্যদের বিরুদ্ধে। রবিবার আওয়ামী লীগের প্রার্থী তালিকায় তার নাম দেখে বিস্মিত স্থানীয় নেতা-কর্মীরা একাধারে হতাশ ও ক্ষুব্ধ। শুদ্ধি অভিযানের পর এমন ব্যক্তিকে দলের সমর্থন দেওয়ায় যাচাই-বাছাই প্রক্রিয়া নিয়েও প্রশ্ন তুলেছেন তারা। সেখানে অনেক যোগ্য থাকার পরও তাদের বঞ্চিত করে বিতর্কিত ব্যক্তিকে সমর্থন দেওয়া হয়েছে। এ কারণে প্রার্থী পরিবর্তনের জোরালো দাবি করছেন স্থানীয় আওয়ামী লীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের নেতা-কর্মীরা। চিহ্নিত চাঁদাবাজ, মাদক ব্যবসায়ী ও বিতর্কিত বেশ কয়েকজন সমর্থন পাওয়ায় ইতিমধ্যে পাঁচজনের সমর্থন প্রত্যাহার করা হয়েছে। আজ দুপুরের মধ্যে আরও কয়েকজনের সমর্থন প্রত্যাহার করা হতে পারে বলে দলীয় সূত্র জানিয়েছেন। জানা গেছে, গত রবিবার আওয়ামী লীগ সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে দুই সিটির মেয়রসহ কাউন্সিলর প্রার্থীদের তালিকা প্রকাশ করে। রাতে তিনটি ওয়ার্ডে প্রার্থী পরিবর্তন করে। রবিবার দুপুরে ১২ নম্বর ওয়ার্ডে সমর্থন দেওয়া হয় মুরাদ হোসেনকে। রাতে সংশোধন করে মোহাম্মদ ইকবাল হোসেন তিতুকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। আবার গতকাল তা পরিবর্তন করে মুরাদ হোসেনকে মনোনয়ন দেওয়া হয়। ৪১ নম্বর ওয়ার্ডে ঘোষণা করা হয় আবদুল মতিনের নাম। গতকাল সকালে পরিবর্তন করে সমর্থন দেওয়া হয় সফিকুল ইসলামকে। একই সঙ্গে দক্ষিণ সিটির ১২ নম্বর ওয়ার্ডে প্রথমে ঘোষণা করা হয় ম ম মামুন রশিদ শুভ্রর নাম। রাতে পরিবর্তন করে বর্তমান কাউন্সিলর ঢাকা মহানগরী আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক গোলাম আশরাফ তালুকদারের নাম চূড়ান্ত করা হয়েছে। ৩৩ নম্বর ওয়ার্ডে দেওয়া হয়েছিল ইলিয়াস রশীদকে। রাতে পরিবর্তন এনে দেওয়া হয় বর্তমান কাউন্সিলর আউয়াল হোসেনকে। জানা গেছে, চরম বিতর্কিত কয়েকজন দলের সমর্থন পাওয়ায় ক্ষুব্ধ হয়েছেন মহানগরী আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীরা। ইতিমধ্যে ঢাকা উত্তর ও দক্ষিণ সিটিতে পাঁচজনের সমর্থন পরিবর্তন করা হয়েছে। আবার চরম বিতর্কিত কারও কারও সমর্থন প্রত্যাহার না করায় আওয়ামী লীগে মিশ্র প্রতিক্রিয়া সৃষ্টি হয়েছে। আওয়ামী লীগের আরও বিতর্তিকদের মধ্যে সমর্থন পেয়েছেন ঢাকা দক্ষিণে ২ নম্বর ওয়ার্ডের আনিসুর রহমান, ৫ নম্বরে মো. আশ্রাফুজ্জামান (ফরিদ), ২০ নম্বরে ফরিদ উদ্দিন আহমেদ রতন, ২৬ নম্বরে হাসিবুর রহমান মানিক, ৫১ নম্বরে হাবিবুর রহমান (হাবু) ও ৫৬ নম্বরে মোহাম্মদ হোসেন। আর ঢাকা উত্তর সিটির ৩০ নম্বর ওয়ার্ডে আবুল হাসেম (হাসু)। বিএনপিসূত্রে জানা গেছে, গত তিন দিন ধরে বিএনপি দুই সিটিতে সাধারণ ও সংরক্ষিত (মহিলা) কাউন্সিলর প্রার্থী চূড়ান্তকরণে সাক্ষাৎকার নেয়। মো. শাহজাহানের নেতৃত্বে গুলশানে বিএনপি চেয়ারপারসনের কার্যালয়ে এবং নয়াপল্টনে ভাসানী মিলনায়তনে প্রার্থীদের সাক্ষাৎকার নেওয়া হয়। সর্বশেষ গত রাতে এ নিয়ে স্থায়ী কমিটির শরণাপন্ন হন দায়িত্বপ্রাপ্ত নেতারা। এ রিপোর্ট লেখা পর্যন্ত কাউন্সিলর প্রার্থী তালিকা চূড়ান্ত করতে পারেনি বিএনপি।