বিএনপির পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনেও লাঠিসোঁটা নিয়ে মারমুখী

প্রকাশিত: ১০:৪৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ১৯, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:

সরকার পতন আন্দোলনের অংশ হিসেবে দেশজুড়ে বিএনপির দুই দিনব্যাপী পদযাত্রা কর্মসূচি শেষ হয়েছে। কিন্তু শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ ও পদযাত্রা পালনে দেয়া প্রতিশ্রুতি দলটির নেতারা রাখতে পারেননি। মঙ্গলবার রাজধানীসহ দেশের বিভিন্ন জায়গায় সংঘাত-সংঘর্ষে প্রাণ ঝরার পরও নমনীয় হয়নি বিএনপির নেতাকর্মীরা। বুধবার (১৯ জুলাই) পদযাত্রার দ্বিতীয় দিনে লাঠিসোঁটা হাতে রাজপথে নামে তারা। কোথাও কোথাও কর্মসূচি থেকে হামলা-ভাঙচুরের ঘটনাও ঘটেছে।
ঢাকায় ব্যানার ও ফেস্টুনের আড়ালে ‘লাঠিযাত্রা’

বেলা ১১টায় সরকার পতনের একদফা দাবিতে রাজধানীর আব্দুল্লাহপুর থেকে যাত্রাবাড়ী পর্যন্ত বিএনপির দ্বিতীয় দিনের পদযাত্রা শুরু হয়। এটি শেষ হয় যাত্রাবাড়ী (চৌরাস্তা) গিয়ে। তবে মঙ্গলবারের মতো বুধবার কোনো সংঘাত-সংঘর্ষ না হলেও ব্যানার, ফেস্টুন ও জাতীয় পতাকার আড়ালে ‘লাঠিযাত্রা’ করতে দেখা গেছে নেতাকর্মীদের। এছাড়া পুরো পথেই তারা ছিল অনেকটা মারমুখী।
যদিও বিএনপির এ পদযাত্রার বিপরীতে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) দেয়া ২০ নম্বর শর্তে বলা হয়, ‘পদযাত্রায় ব্যানার-ফেস্টুনের আড়ালে কোনো ধরনের লাঠিসোঁটা বা রড ব্যবহার করা যাবে না।’ অথচ বিএনপির বেশিরভাগ নেতাকর্মীর হাতেই দেখা যায় লাঠিসোঁটা, যা দেখে পদযাত্রাকে ‘লাঠিযাত্রা’ বলেও মনে হতে পারে।

শুধু যে কর্মীরা মারমুখী অবস্থানে ছিল, বিষয়টি এমন না। নেতারাও তাদের বক্তব্যে কাউকে ছাড় না দেয়ার হুঁশিয়ারি দিয়েছেন। পদযাত্রা শুরুর আগে আব্দুল্লাহপুরে পদযাত্রাপূর্ব সংক্ষিপ্ত সমাবেশে বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য মির্জা আব্বাস বলেন, ‘ছেড়ে দেয়ার দিন শেষ, এখন খালেদা জিয়ার বাংলাদেশ। আর কাউকে ছাড় দেয়া যাবে না। আমার অধিকার আমাকে রক্ষা করতে হবে। আঘাত আসলে পাল্টা আঘাত করা হবে। জীবন দিয়ে হলেও দাবি আদায় করে নেয়া হবে।’
আব্বাসের এই বক্তব্যই বুঝিয়ে দিচ্ছে, মুখে শান্তিপূর্ণভাবে সভা-সমাবেশ ও পদযাত্রার কথা বললেও তাদের অভ্যন্তরীণ পরিকল্পনা মারমুখী। সংঘাত-সংঘর্ষের মধ্য দিয়েই তারা দাবি আদায় করতে চায়।


এদিকে বিএনপির পদযাত্রার কারণে রাজধানীতে সকাল থেকেই সাধারণ মানুষকে ভোগান্তি পোহাতে হয়েছে। বিএনপির পদযাত্রা আব্দুল্লাহপুরের পলওয়েল মার্কেটের সামনে শুরু হয়ে হজরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দর, কুড়িল বিশ্বরোড, নতুনবাজার, বাড্ডা, রামপুরা ব্রিজ, মালিবাগের আবুল হোটেলের সামনে দিয়ে খিলগাঁও, বাসাবো, মুগদা, সায়েদাবাদ হয়ে যাত্রাবাড়ী চৌরাস্তায় গিয়ে শেষ হয়। পদযাত্রার সময় এই পুরো পথ দিয়ে যান চলাচল বন্ধ হয়ে যায়। এর প্রভাব পড়ে আশপাশের সড়কগুলোতেও। ঘণ্টার পর ঘণ্টা সড়কে গাড়ির মধ্যে বসে থাকতে হয়েছে সাধারণ যাত্রীদের।
চট্টগ্রামে আওয়ামী লীগের প্রার্থীর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর

বুধবার বিকেলে বিএনপির পদযাত্রা কর্মসূচি শেষে ফিরে যাওয়ার সময় নগরীর ওয়াসার মোড়ে চট্টগ্রাম–১০ আসনের উপনির্বাচনে আওয়ামী লীগের প্রার্থী মো. মহিউদ্দিন বাচ্চুর নির্বাচনী কার্যালয় ভাঙচুর করা হয়। এসময় তারা লাঠিসোঁটা নিয়ে কার্যালয়টি ভাঙচুর ও আশপাশের ভবনের গ্লাস লক্ষ্য করে পাথর নিক্ষেপ করে। পরে তারা ওই সড়কে চলাচলরত যানবাহনের ওপরও চড়াও হয়। বেশ কয়েকটি গাড়িও ভাঙচুর করেছে বিএনপি নেতাকর্মীরা।
দিনাজপুরেও মারমুখী বিএনপি

দিনাজপুরে পদযাত্রা কর্মসূচিতে যোগ দিতে সকাল থেকেই রংপুরের ৮ জেলার নেতাকর্মীরা মিছিল নিয়ে শহরে প্রবেশ করে। এ সময় হাজী দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের ভেতরে অবস্থান করা ছাত্রলীগ কর্মীদের ওপর ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে বিএনপি নেতাকর্মীরা। এসময় দু’পক্ষের মধ্যে উত্তেজনা দেখা দেয়, হয় ধাওয়া- পাল্টা ধাওয়া। পুলিশ এলে তাদের সঙ্গেও মারমুখী অবস্থানে থাকতে দেখা যায় বিএনপি নেতাকর্মীদের।

এদিকে, খুলনায় পদযাত্রা কর্মসূচি পালন করে বিএনপি। খণ্ড খণ্ড মিছিল নিয়ে এতে যোগ দেয় নেতাকর্মীরা। সেখানেও নেতাকর্মীদের হাতে লাঠিসোঁটা দেখা যায়।

এছাড়া যশোরসহ বিভিন্ন জেলায় একই কর্মসূচি পালন করে দলটি। বর্তমান সরকারের পদত্যাগ ছাড়া দেশে গণতন্ত্র ফিরবে না বলে মন্তব্য করেন নেতারা। দাবি আদায় না হওয়া পর্যন্ত রাজপথে অনড় থাকার ঘোষণা দেন তারা।