ঢাকা সিটি নির্বাচনে আনুষ্ঠানিকভাবে প্রচারণা শুরুর আগেই রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নানা অভিযোগ তুলে ধরলেন ঢাকা দক্ষিণে বিএনপি’র প্রার্থী ইশরাক হোসেন। নির্বাচনের আগ পর্যন্ত প্রার্থীদের গ্রেপ্তার কিংবা আটক না করতে ইসির সহযোগিতাও চান তিনি।
রিটার্নিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে দুটি অভিযোগ জানিয়েছেন তিনি। শুক্রবার দুপুরে রাজধানীর গোপীবাগে সাদেক হোসেন খোকা কমিউনিটি সেন্টারে অবস্থিত ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন নির্বাচনের রির্টানিং কর্মকর্তার কার্যালয়ে গিয়ে অভিযোগ জানান তিনি।
এ সময় সাংবাদিকদের ইশরাক হোসেন বলেন, গ্রেপ্তারি পরোয়না ছাড়াই সাদা পোশাকের পুলিশ বৃহস্পতিবার বিকেলে বিএনপি সমর্থিত ৩২ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী তাজউদ্দিন আহমেদ তাজুকে গ্রেপ্তার করে। একই সঙ্গে সন্ধ্যায় ৪৪ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর প্রার্থী মো. আব্দুস সাহেদ মন্টুর কার্যালয়ে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর সমর্থক হুমকি দেয়। এ দুই অভিযোগ আমরা মৌখিকভাবে রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে জানিয়েছি। শনিবার আমরা লিখিতভাবে অভিযোগ দায়ের করবো।
তিনি আরও বলেন, এসব করে সরকার আমাদেরকে নির্বাচনের মাঠ থেকে সরিয়ে দিতে চাইছে। আমরা কোনভাবেই নির্বাচনী মাঠ থেকে সরে যাবো না। জনগণের অধিকার আদায়ের জন্য শেষ নিঃশ্বাস পর্যন্ত কাজ করে যাবো।
এ সময় রিটার্নিং কর্মকর্তার কাছে নির্বাচন পর্যন্ত বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থীদের গ্রেপ্তার না করার অনুরোধ জানান ইশরাক।
তিনি বলেন, ঢাকায় যারা বিএনপি সমর্থিত কাউন্সিলর প্রার্থী, তারা কেউ পালিয়ে যাওয়ার মতো নন। কিন্তু রাজনৈতিক মামলার মাধ্যমে তাদেরকে গ্রেফতার করে হয়রানি করা হচ্ছে। এটা কোনোভাবেই কাম্য নয়।
অভিযোগের বিষয়ে রিটার্নিং কর্মকর্তা আব্দুল বাতেন বলেন, তারা মৌখিকভাবে অভিযোগ দিয়েছেন। আমরা এটাকে নোট করেছি। তারা লিখিতভাবেও অভিযোগ দেবেন বলেছেন। আমরা নির্বাচনী বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেবো।
রিটার্নিং কর্মকর্তা সুনির্দিষ্ট অভিযোগ ছাড়া প্রার্থীদের আটক না করার নির্দেশ দিয়ে, অতি উৎসাহী হয়ে কেউ অন্যায় করলে ব্যবস্থা নেয়ার হুঁশিয়ারিও দেন।
এদিকে দক্ষিণের আওয়ামী লীগ প্রার্থী ফজলে নূর তাপস ও উত্তরের প্রার্থী আতিকুল ইসলাম জুমার নামাজের আগে-পরে মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন।
জুমার দিন হওয়ায় বায়তুল মোকাররম মসজিদে নামাজ আদায় করতে আসেন ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের আওয়ামী লীগের মেয়র প্রার্থী শেখ ফজলে নূর তাপস। সাংবাদিকদের মুখোমুখি হয়ে তিনি বলেন, নগরপিতা নির্বাচিত হলে এখানকার মানুষের সব ধরনের নাগরিক সুবিধা নিশ্চিত করা হবে।
তিনি বলেন, আমার পূর্বের যে অভিজ্ঞতা আমার এলাকার জনগণের জন্য করার। সে অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগিয়ে আমি জনগণের প্রত্যাশা পূরণ করবো। আগামী পাঁচ বছরের জন্য মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হতে পারি, একজন সেবক হিসেবে জনগণের জন্য কাজ করবো। কারো কাছে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন জিম্মি থাকবে না।
উত্তরের মেয়র প্রার্থী আতিকুল ইসলামও মুসল্লিদের সঙ্গে কুশল বিনিময় করেন। নির্বাচনী পরিবেশ সৌহার্দ্যপূর্ণ থাকার আশা প্রকাশ করে, বিএনপি প্রার্থীর সঙ্গে কাঁধে কাঁধ মিলিয়ে মাঠে থাকার অঙ্গীকার করেন তিনি।
তিনি বলেন, আমর দুজন মিলে চা খেতে পারি গল্প করতে পারি। উনার নির্বাচন কৌশল উনার কাছে আমার নির্বাচন কৌশল আমার কাছে। আমাদের চা খেতে সামনা-সামনি কথা বলতে কোনো অসুবিধা নাই।
একইভাবে জুমার নামাজের পর মুসল্লিদের দোয়া চান দক্ষিণে বিএনপি’র মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। এর আগে শুক্রবার সকালে গোপিবাগে ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের রিটার্নিং কার্যালয়ে গিয়ে নানা অভিযোগ তুলে ধরেন বিএনপি’র মেয়রপ্রার্থী ইশরাক হোসেন। নির্বাচনের আগে কাউন্সিলর প্রার্থীদের গ্রেপ্তার বা হয়রানি এড়াতে নির্বাচন কমিশনের সহযোগিতা চান তিনি।
ইশরাক হোসেন বলেন, এখন থেকে নির্বাচন পর্যন্ত যারা কাউন্সিলর প্রার্থী রয়েছেন তাদেরকে গ্রেপ্তারের বিষয়ে একটি সুনির্দিষ্ট নির্দেশনা ইলেকশন কমিশন থেকে আসুক। প্রতি নির্বাচনের আগে বিএনপির প্রার্থীদের হয়রানি করা হয়। আমরা দেখবো ইসি কোন পদক্ষেপ নেয় কিনা।
নির্বাচন প্রশ্নবিদ্ধ করতে পারে এমন কর্মকাণ্ড থেকে অতি উৎসাহীরা বিরত না থাকলে, তাদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়া হবে বলে জানান দক্ষিণের রিটার্নিং কর্মকর্তা। তিনি বলেন, কেউ অতি উৎসাহী হয়ে কোনো ধরণের প্রতিবন্ধকতা সৃষ্টি করে তবে অবশ্যই তার ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়া হবে।
১০ই জানুয়ারির আগে কোনো প্রকার প্রচারণা না চালানোর আহ্বান জানিয়ে উত্তরের রিটার্নিং কর্মকর্তা বলেন, নির্দিষ্ট সময়ের আগে কেউ প্রচারণা চালালে ব্যবস্থা নেয়া হবে। সিটি নির্বাচন সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ করতে সব প্রার্থীর সহযোগিতা চান রিটার্নিং কর্মকর্তা।