চুরির অভিযোগে ২ কিশোরকে বেঁধে অমানবিক নির্যাতন, গ্রেপ্তার ২

প্রকাশিত: ৮:২৩ অপরাহ্ণ, জুলাই ২১, ২০২৩

মৌলভীবাজার প্রতিনিধি:
মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় একটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে কোমল পানীয়র বোতল চুরির অভিযোগ এনে হাত-পা বেঁধে রুবেল মিয়া (১৫) ও জিবান আহমদ (১৬) নামের দুই কিশোরের ওপর মধ্যযুগীয় কায়দায় শারীরিক নির্যাতনের ঘটনা ঘটেছে। এরমধ্যে রুবেল মিয়া নামের কিশোর একজন মানসিক প্রতিবন্ধী। নির্যাতনের শিকার দুই কিশোরের বাড়ি উপজেলার কর্মধা ইউনিয়নের বাড়ুয়াকান্দি গ্রামে।

এ ঘটনায় গতকাল বৃহস্পতিবার দিবাগত রাতে ভুক্তভোগী রুবেলের ভাই রাসেল মিয়া বাদী হয়ে দোকান মালিক খালিদ হাসান রুমেলকে প্রধান আসামি করে ও আরো ৩-৪ জনকে অজ্ঞাতনামা আসামি উল্লেখ করে থানায় মামলা দায়ের করেন।

পরে কুলাউড়া থানার এসআই হারুনুর রশীদ ওই দোকান মালিক খালিদ হাসান ও কর্মচারী পাপ্পু পালকে গ্রেপ্তার করেন। আজ শুক্রবার বিকেলে খালিদ ও পাপ্পুকে আদালতে প্রেরণ করে পুলিশ।
মামলার এজাহার ও স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, গত বুধবার (১৯ জুলাই) বিকেলে বেঙ্গল ফুডের পরিবেশক খালিদ হাসান রুমেলের দোকানের সামনে দিয়ে যাওয়ার সময় খালিদ প্রতিবন্ধী কিশোর রুবেল মিয়াকে দিয়ে মালবাহী গাড়ি থেকে পণ্য নামানোর কাজ করান। এ সময় প্রতিবন্ধী ওই কিশোর কোমল পানীয় একটি ‘টাইগার’ নিয়ে যায়।

বিষয়টি দেখে দোকান মালিক খালিদ হাসান তার দোকানের কয়েকজন কর্মচারীসহ রুবেল মিয়াকে আটক করে। এই সময় রুবেলের চাচাতো ভাই জিবান আহমদ এগিয়ে আসলে তাদের দুজনকে আটক করে বেঙ্গল ফুডের উপরে একটি জিমনেশিয়াম সেন্টারে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রাত সাড়ে ৮টা পর্যন্ত নির্যাতন চালিয়ে মারপিট করে জখম করে।
নির্যাতনের পর চুরির অভিযোগে রবিরবাজার ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির অফিসে উল্লেখিত দুই কিশোরকে নেওয়া হলে সমিতির নেতারা সাদা কাগজে নির্যাতিত দুই কিশোরের অভিভাবকদের স্বাক্ষর নিয়ে দুই শ টাকা জরিমানা করে তাদেরকে ছেড়ে দেয়।

এ সময় ব্যবসায়ী কল্যাণ সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. বদরুল ইসলাম, সিনিয়র সহসভাপতি আব্দুল হাই, কোষাধ্যক্ষ খলিল মিয়াসহ সমিতির অন্যরা উপস্থিত ছিলেন।

পরে আহত দুই কিশোরকে উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সে চিকিৎসা চিকিৎসা করানো হয়।
নির্যাতনের শিকার দুই কিশোরের বরাত দিয়ে রুবেলের বড় ভাই রাসেল বলেন, ‘প্রচণ্ড গরমের মধ্যে কাজ শেষের দিকে আমার ভাই রুবেল তৃষ্ণা মেটাতে গাড়ি থেকে কোমল পানীয়র একটি বোতল নিয়ে যায়। এ সময় খালিদ ও তার দোকানের কর্মচারীরা চুরির অভিযোগ এনে তাকে আটক করেন। পরে আমার ভাই ও চাচাতো ভাই জিবানকে ব্যবসায়ী খালিদ তার জিমনেশিয়ামের ভেতরে নিয়ে হাত-পা বেঁধে রড এবং ইলেকট্রিক ক্যাবল দিয়ে এলোপাথাড়ি আঘাত করে নির্যাতন চালান।’

অভিযুক্ত খালিদ হাসান রুমেল আটক হওয়ার আগে জানান, তার বিরুদ্ধে আনা অভিযোগ সঠিক নয়। তিনি ষড়যন্ত্রের শিকার।

কুলাউড়া থানার এসআই হারুনুর রশীদ বলেন, ‘প্রাথমিক তদন্তে দুই কিশোরের ওপর নির্যাতনের সত্যতা পাওয়া গেছে। চুরির অভিযোগে দুই কিশোরকে এভাবে মারধর না করে বিষয়টি আগেই প্রশাসনকে জানানো উচিৎ ছিল।’

কুলাউড়া উপজেলা স্বাস্থ্য কমপ্লেক্সের জরুরি বিভাগের চিকিৎসা কর্মকর্তা ডা. নাজমুস সিয়াম রাফি বলেন, ‘দুই কিশোরের মধ্যে মানসিক প্রতিবন্ধী কিশোর রুবেলের পিঠ ও বুকে বেশি আঘাতের চিহ্ন ছিল। দুই কিশোরকে প্রাথমিক চিকিৎসা দেওয়া হয়েছে।’

কুলাউড়া থানার ওসি মো. আব্দুছ ছালেক বলেন, ‘প্রতিবন্ধী কিশোর রুবেল মিয়ার ভাই রাসেল বাদী হয়ে থানায় লিখিত অভিযোগ দায়ের করলে শিশু আইনে মামলা রুজু করা হয়। গ্রেপ্তার খালিদ ও পাপ্পুকে মৌলভীবাজারের আদালতে পাঠানো হয়েছে। অপর আসামিদের গ্রেপ্তারের চেষ্টা চলছে।’