লাখ টাকা দামের মোবাইল ফোন চুরির ঘটনায় ভুক্তভোগী থানায় জিডি করেছেন। জিডির সূত্র ধরে সিআইডি বা গোয়েন্দা পুলিশ তাদের মোবাইল ট্র্যাকারে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনের আইএমইআই (ইন্টারন্যাশনাল মোবাইল ইকুইপমেন্ট আইডেনটিটি) নম্বর বসিয়ে দেয়। সপ্তাহ দুয়েক ধরে ট্র্যাকারে তদন্ত হলেও এর কোনো হদিস মিলে না। তদন্তকারী সংস্থা ভুক্তভোগীকে জানিয়ে দেয় যে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনটি বন্ধ রয়েছে। তাই আইএমইআই নম্বর শনাক্ত করতে পারেননি তারা। পরবর্তীতে পুলিশের এক অভিযানে চুরি হওয়া মোবাইল ফোনটি উদ্ধার হয়। ঐ মোবাইল ফোনটি পরীক্ষা করে গোয়েন্দা পুলিশ দেখতে পায় যে ফোনসেটের আইএমইআই নম্বর বদল করা হয়েছে। এরপর এটি চোরাই বাজারে বিক্রি করার জন্য আনা হয়েছে।
ঢাকা মহানগর গোয়েন্দা পুলিশের উপ-কমিশনার (দক্ষিণ) রাজীব আল মাসুদ বলেন, চক্রের সদস্যরা কয়েক ধাপে কাজটি করে। তাদের একটি অংশ শুধু মোবাইল ফোন চুরির কাজটি করে। এরপর আইএমইআই নম্বর বদলের ব্যবস্থা করে অন্যরা। তারপর চোরাই ফোনগুলো বিক্রির দায়িত্ব পালন করে আরেকটি অংশ। তবে বিক্রি করে পাওয়া টাকা সবাই ভাগ করে নেয়।
মোবাইল ফোন চুরিতে জড়িত একটি চক্রের ১৪ সদস্যকে গত বছরের ২৭ নভেম্বর রাজধানীর পশ্চিম ধানমন্ডি এলাকা থেকে গ্রেফতার করে ডিবির একটি টিম। একই অভিযানে হাতিরপুলের মোতালেব প্লাজা ও গুলিস্তানের পাতাল মার্কেট থেকে গ্রেফতার করা হয় আরো দুই জনকে, যারা চোরাই ফোনগুলোর আইএমইআই নম্বর বদলে দিতেন। এ সময় তাদের কাছ থেকে আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনে ব্যবহৃত যন্ত্র, ল্যাপটপ ও ডেক্সটপ জব্দ করা হয়।
এর আগে ২০১৮ সালের ২৭ আগস্ট চট্টগ্রামের রিয়াজ উদ্দিন বাজারের রিজুয়ান কমপ্লেক্সের একটি দোকান থেকে নাছির উদ্দিন মাহমুদ (৩৮) নামের এক ব্যক্তিকে গ্রেফতার করে চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন পুলিশের কোতোয়ালি থানা পুলিশ। তার কাছ থেকে বিভিন্ন ব্র্যান্ডের ৪৪টি চোরাই মোবাইল ফোন সেট, দুটি ল্যাপটপ এবং আইএমইআই পরিবর্তনের কাজে ব্যবহৃত আরো কিছু সরঞ্জাম উদ্ধার করা হয়। ঐ ৪৪টি মোবাইল ফোনসেটের আইএমইআই নম্বর পরিবর্তন করা হয়েছিল। গ্রেফতারকৃত নাছির জানান, আইএমইআই পরিবর্তনের কাজে যেসব সরঞ্জাম ব্যবহার করা হয় তা ঢাকার মোতালেব প্লাজার এক ব্যবসায়ী চীন থেকে আমদানি করেন। তারা সেখান থেকে প্রযুক্তিটি কিনে আনেন। এরপরই ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশ মোতালেব প্লাজার ঐ ব্যবসায়ীকে খুঁজতে থাকে।
ঢাকার গোয়েন্দা পুলিশের হাতে গ্রেফতারকৃতরা জানান, তিন থেকে চার জন সদস্য মিলে একটি করে ছোটো দল গঠন করে তারা। প্রতিটি দল আলাদাভাবে রাজধানীর বিভিন্ন স্থান থেকে চুরি বা ছিনতাই করা মোবাইল ফোনসেটগুলো বাকিতে অল্প দামের চুক্তিতে কিনে নেয়। তারা চোরাই ফোনসেটগুলো আনলক ও আইএমইআই নম্বর পরিবর্তনের জন্য মোতালেব প্লাজায় আকিবুল ইসলাম ও আরমান হোসেনের কাছে নিয়ে যান। আইএমইআই পরিবর্তনকারীরা দঙ্গল নামে একটি ডিভাইস ব্যবহার করে। এর সঙ্গে আরো কিছু সফটওয়্যার ব্যবহৃত হয়। দঙ্গল নামের ডিভাইসে অসংখ্য ১৪ ডিজিটের আইএমইআই সংযুক্ত থাকে। সফটওয়্যারের মাধ্যমে আইএমইআই নম্বর বদলে তাদের দিয়ে দেয়। এজন্য সেট প্রতি দেড় হাজার থেকে আড়াই হাজার টাকা পর্যন্ত দিতে হয়। এরপর চোরাই মোবাইল ফোনগুলো বিক্রি করা হয়।
ডিবির এক কর্মকর্তা জানান, আইএমইআই নম্বর ঠিক থাকলে প্রযুক্তির সাহায্যে ফোনের অবস্থান শনাক্ত করা যায়। চোরাই ফোন উদ্ধারসহ বিভিন্ন অপরাধমূলক ঘটনার রহস্য উদঘাটনে এটা খুবই দরকারি। তবে আইএমইআই নম্বর বদলে ফেললে এটা সম্ভব হয় না। উদ্ধার হওয়া ফোনগুলোর মধ্যে কয়েকটির মালিকের সন্ধান পাওয়া গেছে। তারা নিজে থেকেই ডিবির সঙ্গে যোগাযোগ করেছেন। যাচাই-বাছাই শেষে আদালতের অনুমতিক্রমে তাদের কাছে ফোন হস্তান্তর করা হবে।
সূত্র ইত্তেফাক।