ছুটি না নিয়ে আমেরিকায় দুই শিক্ষিকা: জানে না স্কুল কর্তৃপক্ষ
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
মানিকগঞ্জ প্রতিনিধি:
মানিকগঞ্জের ঘিওরে প্রাথমিক বিদ্যালয়ের শিক্ষিকা দুই বোনের বিরুদ্ধে বিনা অনুমতিতে দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় বসবাসের অভিযোগ উঠেছে। বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি স্বীকার করলেও স্কুল কর্তৃপক্ষ বলছেন, শিক্ষিকারা কোথায় আছেন তা তারা জানেন না। বিনা ছুটিতে অনুপস্থিত থাকার বিষয়টি ফাঁস হওয়ার পর ওই দুই শিক্ষিকার বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা হয়েছে। শিক্ষিকা দুই বোন হলেন- ঘিওর উপজেলার বড়টিয়া ইউনিয়নের ২২নং হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাছরিন আক্তার ও ৬৯নং হিজুলিয়া পশ্চিমপাড়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নার্গিস আক্তার।
সরেজিমন গিয়ে দেখা গেছে, সহকারী ওই দুই শিক্ষিকার গ্রামে এক কিলোমিটার দূরত্বের মধ্যেই বিদ্যালয় দুটি অবস্থিত। ২২নং হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়ের হাজিরা খাতাসহ অন্যান্য নথিপত্র ঘেটে জানা গেছে, সহকারী শিক্ষিকা নাছরিন আক্তার ২০০০ সালের ২১ অক্টোবর চাকরিতে যোগদান করেন। গত বছরের ১০ অক্টোবর থেকে তিনি বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত রয়েছেন।
বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষিকা অনীতা রাণী তরফদার বলেন, নাছরিন আক্তার কোনো ছুটির আবেদনও দেননি। একাধিকবার নোটিশ করার পরও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। তার বাড়িতেও লোকজন নেই। ওই শিক্ষিকা কোথায় আছেন সেটাও তিনি জানেন না বলে দাবি করেন।
এক কিলোমিটার দূরেই ৬৯নং হিজুলিয়া সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয়। এই বিদ্যালয়ের সহকারী শিক্ষিকা নাছরিনের ছোট বোন নার্গিস আক্তার। তিনিও বিদ্যালয়ে দীর্ঘদিন ধরে অনুপস্থিত।
বিদ্যালেয়ের ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা রুপা আক্তার জানান, তিনি অল্প কিছুদিন হলো ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষকের দায়িত্ব পেয়েছেন। তবে নথিপত্র ঘেটে জেনেছেন নার্গিস আক্তার ২০২১ সালের ১৭ সেপ্টেম্বর এই স্কুলে যোগদান করেন। যোগদানের পরপরই তিনি এক মাস করে চার দফায় অসুস্থতাজনিত কারণ দেখিয়ে ছুটি নেন। কিন্তু অদ্যাবধি তিনি বিদ্যালয়ে যোগদান করেননি।
বিদ্যালয়ে ১৪২ জন শিক্ষার্থীর জন্য শিক্ষক রয়েছেন মাত্র ৪ জন। এতে শিক্ষা কার্যক্রম ব্যাহত হচ্ছে বলে জানান ভারপ্রাপ্ত প্রধান শিক্ষিকা।
বিদ্যালয় পরিচালনা কমিটির সভাপতি আ. রউফ দর্জি জানান, শিক্ষক বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। এজন্য তাকে একাধিকবার নোটিশ করা হয়েছে। শিক্ষকদের বাড়ির দরজায় নোটিশ সাঁটিয়ে দেওয়া হয়েছে। তারপরও কোনো জবাব পাওয়া যায়নি।
শিক্ষিকার আমেরিকায় যাওয়ার বিষয়ে প্রশ্ন করা হলে তিনি জানান, এ বিষয়ে তিনি কিছুই জানেন না।
দুই শিক্ষিকার আমেরিকায় বসবাসের বিষয়টি স্কুল কর্তৃপক্ষ গোপন করলেও স্কুলের আশপাশে একাধিক মানুষের সঙ্গে আলাপ করে ঘটনা নিশ্চিত হওয়া গেছে। গ্রামের প্রায় সবারই জানা, তারা দীর্ঘদিন ধরে আমেরিকায় স্বপরিবারে বসবাস করছেন।
স্কুলের অদূরেই শিক্ষিকাদের বাড়ি। বাড়িতে গিয়ে দেখা যায়, ঘরে তালা ঝুলছে। ঘরের দরজার সামনে শিক্ষা অফিসের একটি নোটিশ সাঁটানো আছে।
নাম প্রকাশ না করার শর্তে স্থানীয় কয়েকজন জানান, নার্গিস ও নাছরিন দীর্ঘদিন ধরেই আমেরিকায় আছেন। কিন্তু তারা একটি প্রভাবশালী পরিবারের সন্তান হওয়ায় এলাকার কোনো মানুষ এ বিষয়ে মুখ খুলতে সাহস পান না। একই অবস্থা শিক্ষকদেরও। এতদিন তারা বিষয়টি গোপন রেখেছিলেন। পরে অনুপস্থিতির সময় দীর্ঘদিন হওয়ায় ঘটনা ফাঁস হয়ে যায়।
অনুপস্থিতির সময় দীর্ঘ হওয়ায় আর শিক্ষক সংকটে স্কুলে পাঠদানে সমস্যা দেখা দেওয়ার বিষয়টি সম্প্রতি আলোচনায় আসে। গত ৮ জুন জেলা শিক্ষা অফিসার (তৎকালীন) তাপস অধিকারী সরকারি কর্মচারী (শৃঙ্খল ও আপিল বিধিমালা) ২০১৮ মোতাবেক তাদের বিরুদ্ধে তদন্ত সাপেক্ষে বিভাগীয় মামলা দায়ের করেন।
ঘিওর উপজেলা শিক্ষা কর্মকর্তা হাসিনা আক্তার পারভীন জানান, ওই দুই শিক্ষিকা দীর্ঘদিন ধরে বিদ্যালয়ে অনুপস্থিত। তাদের কয়েক দফায় নোটিশ করা হয়। কিন্তু নোটিশের কোনো জবাব পাওয়া যায়নি। পরে বিষয়টি জেলা শিক্ষা কর্মকর্তাসহ ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তাদের জানানো হয়। অভিযুক্ত শিক্ষিকাদের বেতন-ভাতা বন্ধ আছে। তাদের বিরুদ্ধে বিভাগীয় মামলা রুজু হয়েছে। দ্রুতই মামলাটি নিষ্পত্তি হয়ে যাবে বলে জানান তিনি।