তারেক-জোবায়দার বিরুদ্ধে রায় সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে দেওয়া হয়েছে: দুদকের আইনজীবী

প্রকাশিত: ৬:৫৫ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমান ও জোবায়দা রহমানের রায়ের বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) পাবলিক প্রসিকিউটর মোশাররফ হোসেন কাজল বলেছেন, সব সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে মামলার রায় দেওয়ায় হয়েছে। সন্তুষ্টি-অসন্তুষ্টির বিষয় নয়। আজ বুধবার (২ আগস্ট) রায় ঘোষণার পর ঢাকা মহানগর দায়রা জজ আদালতের সামনে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নের জবাবে তিনি এসব কথা বলেন।


মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলায় সব সাক্ষ্যপ্রমাণের ভিত্তিতে বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর এবং তাকে সহযোগিতা করায় তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে ৩ বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে। তিনি বলেন, দুদক তারেক রহমান, ডা. জোবায়দা রহমান ও তার সৈয়দা ইকবাল মান্দ বানুকে তাদের অবৈধ উপার্জন এবং সম্পদ উপার্জন সম্পর্কে জানতে নোটিশ দেয়। তারেক রহমান জেলখানায় থাকাকালীন অবস্থায় এ নোটিশ গ্রহণ করেন এবং সম্পদের বিবরণ দাখিল করেন। তিনি যে সম্পদের বিবরণ দাখিল করেছেন, সেখানে ২ কোটি ২৩ লাখ টাকার তথ্য গোপন এবং ৫৮ লাখ টাকা অবৈধ উপার্জনসহ মোট ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকার তথ্য পাওয়া গেছে।
মোশাররফ হোসেন কাজল বলেন, মামলাটি যদিও ৪ কোটি ৭৪ লাখ টাকা দিয়ে শুরু হয়েছিল। পরে তদন্ত কর্মকর্তা তদন্ত শেষে ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকায় সমাপ্ত করেছেন। তারেক রহমান ও তার স্ত্রী এবং শাশুড়িকে দুইটি অভিযোগে আদালতে হাজির হওয়ার নির্দেশ দেন আপিল বিভাগ। পরবর্তীতে তারা আদালতে উপস্থিত না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে সমন, ওয়ারেন্ট ও গ্রেফতারি পরোয়ানা দেওয়া হয়। এমনকি পত্রিকায় বিজ্ঞপ্তি ও সরকারি গেজেট প্রকাশ করা হয়। কিন্তু তারেক রহমান এবং জোবায়দা রহমান কেউই আদালতে উপস্থিত হননি। আমরা দুদকের পক্ষে তারেক রহমানের উপস্থিতির জন্য দীর্ঘদিন অপেক্ষা করি। ২০০৭ সালে এ মামলাটি শুরু হলেও এটি আজকে দীর্ঘ ১৬ বছর পর ২০২৩ সালে এসে সমাপ্তি হয়েছে।
তারেক রহমান ও ডা. জোবায়দা রহমানের অবহেলা ও অনুপস্থিতির কারণে আমরা এ মামলাটির ৫৬ জন সাক্ষীর মধ্যে ৪২ জনকে হাজির করতে পেরেছি। আজকে আদালত সাক্ষ্যপ্রমাণ পর্যবেক্ষণ ও প্রসিকিউশনের যুক্তিতর্কের আলোকে এ রায় ঘোষণা করেছেন।
দুদকের প্রসিকিউটর বলেন, ২৬ (২) ধারায় তারেক রহমানকে তিন বছরের সাজা ও ২৭ (১) ধারায় তাকে ছয় বছরের সাজাসহ মোট ৯ বছর সশ্রম কারাদণ্ডে দণ্ডিত করা হয়েছে। এ সাজা একত্রে চলবে। পাশাপাশি তাকে ৩ কোটি টাকা অর্থদণ্ড, অনাদায়ে তিন মাসের কারাদণ্ড দেন আদালত। এবং ২ কোটি ৭৪ লাখ টাকা যে সম্পদ পাওয়া গেছে, সেটি রাষ্ট্রের অনুক‚লে বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে।
তারেক রহমানকে অবৈধ সম্পদ অর্জনে সহযোগিতা করার অপরাধে দণ্ডবিধির ১০৯/২৭ (১) ধারায় ডা. জোবায়দা রহমানকে তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে এবং ৩৫ লাখ টাকা অর্থদণ্ড দেওয়া হয়েছে। অনাদায়ে তাকে আরও এক মাসের কারাদণ্ড দেওয়া হয়েছে।
বিএনপিপন্থি আইনজীবীদের এ রায়কে ফরমায়েশি রায় বলে অভিযোগ করার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, দীর্ঘ ১৬ বছর আমরা এ মামলার বিচারের কার্যক্রম পরিচালনা করছি। এ মামলা হওয়ার পর থেকে তারা (বিএনপিপন্থি আইনজীবী) একই ভাঙা ক্যাসেট বাজাচ্ছেন। এখানে ফরমায়েশির কোনো কিছু নেই। তাকে (তারেক রহমান) তো উপস্থিত হতে বলা হয়েছিল। তিনি উপস্থিত হননি কেন? তিনি উপস্থিত না হয়ে আদালতকে বৃদ্ধাঙ্গুলি দেখাবেন আর বলবেন ফরমায়েশি রায়।
আদালত রায়ের পর্যবেক্ষণে তারেকের উপস্থিত না হওয়াকে দুঃখজনক ব্যাপার বলে অবহিত করেছেন। আদালত বলেছেন, তাকে বারবার হাজির হওয়ার জন্য বলা হয়েছে। তিনি হাজির হলে তার পক্ষের বক্তব্যগুলো আমরা শুনতে পারতাম। তার পক্ষে বক্তব্য দেওয়ার জন্য তার আইনজীবী মাসুদ সাহেব হাজির হয়েছিলেন এবং আবেদন দিয়েছেন। কিন্তু আইন আমলে যেহেতু এটি গ্রহণ করা যায় না, তাই তাকে সুযোগ দেওয়া হয়নি।


প্রসঙ্গত, সম্পদের তথ্য গোপন ও জ্ঞাত আয়বহির্ভূত সম্পদ অর্জনের মামলায় বিএনপির ভারপ্রাপ্ত চেয়ারম্যান তারেক রহমানকে ৯ বছর ও তার স্ত্রী ডা. জোবায়দা রহমানকে তিন বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন আদালত।