ব্যবসায়ী খুনের নেপথ্যে সুদের টাকা লেনদেন, গ্রেফতার ২

প্রকাশিত: ৬:৩৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ৪, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম: 

টাঙ্গাইলের সখিপুরের জামালের চালা এলাকায় ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার চাচা মজনু মিয়ার হত্যাকাণ্ডে জড়িত থাকার অভিযোগে মো. মোস্তফা মিয়া (২০) ও আলামিন নামে দুইজনকে (২৭) গ্রেফতার করেছে র‍্যাব। রাজধানীর মোহাম্মদপুর ও টাঙ্গাইলের সখিপুর এলাকা থেকে তাদের গ্রেফতার করা হয়। এসময় শাহজালালের ব্যবহৃত দুটি মোবাইল ফোনও উদ্ধার করে র‍্যাব। আজ শুক্রবার (৪ আগস্ট) এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান র‍্যাবের গণমাধ্যম শাখার প্রধান কমান্ডার খন্দকার আল মঈন। তিনি বলেন, গত ১৯ জুলাই রাতে টাঙ্গাইলের সখিপুরের জামালের চালা এলাকায় দুর্বৃত্তরা দেশি অস্ত্র দিয়ে ব্যবসায়ী শাহজালাল ও তার চাচা মজনু মিয়াকে এলোপাতাড়ি আঘাত করেন। এতে তাদের মৃত্যু হয়। এ ঘটনায় নিহত শাহজালালের পিতা বাদী হয়ে টাঙ্গাইলের সখিপুর থানায় অজ্ঞতনামা কয়েকজনকে আসামি করে হত্যা মামলা দায়ের করেন। বৃহস্পতিবার (৩ আগস্ট) রাতে র‍্যাব সদর দপ্তরের গোয়েন্দা শাখা ও র‍্যাব-১৪ এর একটি দল অভিযান চালায়। অভিযান চালিয়ে গ্রেফতার করা হয় হত্যার মূল পরিকল্পনাকারী মো. মোস্তফা মিয়া (২০) ও আলামিনকে (২৭)।

তিনি আরও জানান, শাহজালাল সখিপুরের হামিদপুর বাজারে দীর্ঘদিন যাবত মনিহারি ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের ব্যবসা করছিলেন। শাহজালালের চাচা মজনু মিয়া কৃষি কাজের পাশাপাশি তাকে ব্যবসার কাজে সহযোগিতা করতেন। ঘটনার দিন শাহজালাল শেষে রাতে লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের দুই লাখ টাকা নিয়ে বাড়িতে যাচ্ছিলেন। পথে তার চাচা মজনু মিয়াকে দেখে মোটরসাইকেলে উঠিয়ে নেন। পথেই নৃশংসভাবে হত্যাকাণ্ডের শিকার হন তারা।

প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদের তথ্য তুলে ধরে খন্দকার আল মঈন জানান, মোস্তফার পরিকল্পনায় এই হত্যাকাণ্ড সংঘটিত হয়। মোস্তফা এবং আলামিন স্থানীয় একটি সমিতির সদস্য। মোস্তফা সমিতি থেকে উচ্চ সুদে বেশকিছু লোন নেন। এমতাবস্থায়, লোনের টাকা পরিশোধ ও পারিবারিক খরচ মেটাতে তার অর্থের প্রয়োজন ছিল। শাহজালাল যেদিন বাড়িতে রাত্রিযাপন করতেন সে দিন ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ও মোবাইল ব্যাংকিংয়ের টাকা বাড়িতেই রাখতেন। এই বিষয়টি গ্রেফতার মোস্তফা ও আলামিন জানতেন। মোস্তফা শাহজালালের বাড়ি ফেরার পথে আক্রমণ করে তার কাছ থেকে ব্যবসায়িক লেনদেনের টাকা ছিনিয়ে নেওয়ার জন্য পরিকল্পনা করে আসছিল। মোস্তফা বিষয়টি প্রায় কয়েক দিন পূর্বে আলামিনকে জানায় এবং আলামিন এতে সম্মতি দেয়।

মোস্তফা পেশায় একজন রাজমিস্ত্রি। আলামিন গত ৩ মাস আগে তার সঙ্গে রাজমিস্ত্রির কাজে যোগ দেয়। আলামিন এর আগে মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশে ছিলেন এবং ২০২৩ সালের প্রথম দিকে দেশে ফেরত আসেন।

পরিকল্পনা অনুযায়ী, গত ১৯ জুলাই রাত ১০টার দিকে মোস্তফা ও আলামিন টাঙ্গাইলের সখিপুরের বাঘের বাড়ি এলাকায় জামালের চালায় নির্জন স্থানে ওৎ পেতে থাকে। শাহজালাল মোটরসাইকেলযোগে তার চাচা মজনু মিয়াকে সঙ্গে নিয়ে ঘটনাস্থলে পৌঁছালে পূর্ব পরিকল্পনা অনুযায়ী মোস্তফা শাহজালালের মোটরসাইকেলের গতিরোধ করে। মোস্তফা শাহজালালের মাথায় লোহার রড দিয়ে আঘাত করেন। শাহজালাল মাটিতে লুটিয়ে পড়লে মোস্তফা শরীরের বিভিন্ন স্থানে উপর্যুপরি আঘাত করতে থাকেন। শাহজালালের চাচা মজনু মিয়া চিৎকার করে ঘটনাস্থল থেকে পালিয়ে যাওয়ার চেষ্টা করলে আলামিন লোহার রড দিয়ে মজনু মিয়ার মাথা ও শরীরের বিভিন্ন স্থানে আঘাত করেন। পরে মোস্তফা ও আলামিন মাটিতে লুটিয়ে পড়লে লোহার রড দিয়ে পুনরায় এলোপাতাড়ি আঘাত করে তাদের মৃত্যু নিশ্চিত করা হয়। আলামিন মোটরসাইকেলটি পাশের একটি জমিতে ফেলে দেন এবং মোস্তফা শাহজালালের ২টি মোবাইল ফোন নিয়ে ১টি আলামিনকে দেন এবং অপরটি স্থানীয় একটি ডোবায় ফেলে দেন। গ্রেফতার আসামিদের বিরুদ্ধে আইনানুগ ব্যবস্থা প্রক্রিয়াধীন রয়েছে বলেও জানান র‍্যাবের এই কর্মকর্তা।