এসএম দেলোয়ার হোসেন:
আট বছর আগে এ দিনে (৭ আগস্ট) রাজধানীর গোড়ানে নিজ বাসায় খুন হন ব্লগার নীলাদ্রী চট্টোপাধ্যায় ওরফে নিলয় নীল। দীর্ঘদিনেও আলোচিত এ হত্যা মামলার বিচারকাজ শেষ না হওয়ায় হতাশা ব্যক্ত করেছে নিলয়ের পরিবার। নিলয়ের স্ত্রী আশামণি বলছেন, হত্যাকারীদের বিচার হলে শান্তি পাবে আমাদের পরিবার। রাষ্ট্রপক্ষ জানিয়েছে, নিলয় হত্যা মামলার সাক্ষীদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
আদালত সূত্রে জানা যায়, ২০২২ সালের ১৮ জানুয়ারি ১৩ আসামির বিরুদ্ধে চার্জগঠন করে বিচার শুরুর আদেশ দেন ঢাকার প্রথম অতিরিক্ত মহানগর দায়রা জজ ফয়সল আতিক বিন কাদের। এরপর ৬ এপ্রিল সাক্ষ্যগ্রহণের তারিখ ধার্য করেন আদালত। কিন্তু ওই দিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত ২২ আগস্ট সাক্ষ্যগ্রহণের পরবর্তী তারিখ ধার্য করেন। সেদিন নিলয়ের স্ত্রী আশামণি সাক্ষ্য দেন। এরপর এক বছরে আর কোনো সাক্ষীকে আদালতে হাজির করা যায়নি। সবশেষ গত বুধবার (২ আগস্ট) মামলাটি সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য দিন ধার্য ছিল। কিন্তু ওইদিন কোনো সাক্ষী আদালতে হাজির হননি। এজন্য আদালত আগামী ১৩ সেপ্টেম্বর সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য নতুন দিন ধার্য করেন। এদিন আদালতে সাক্ষী উপস্থিত হবেন বলে আশা করছেন রাষ্ট্রপক্ষ।
মামলার বাদী নিলয়ের স্ত্রী আশামণি নিউজ পোস্টকে বলেন, নিলয় হত্যা মামলার আট বছর। মামলাটি আট বছরেও শেষ না হওয়ায় হতাশায় আমাদের পরিবার। যে চলে গেছে সে তো আর ফিরে আসবে না। তবে নিলয়কে যারা হত্যা করেছে তাদের বিচার হলে পরিবার শান্তি পাবে। আমার প্রত্যাশা নিলয়সহ যারা জঙ্গিদের হাতে খুন হয়েছেন সেই জঙ্গিদের বিচার দ্রুত সম্পন্ন হবে।
রাষ্ট্রপক্ষের আইনজীবী মো. আবদুস সাত্তার দুলাল নিউজ পোস্টকে বলেন, নিলয় হত্যা মামলায় একজনের (বাদীর) সাক্ষ্যগ্রহণ হয়েছে। অন্য সাক্ষীদের সাক্ষ্য দিতে আদালত থেকে সমন পাঠানো হয়। এরপরও সাক্ষীরা আদালতে হাজির না হওয়ায় তাদের বিরুদ্ধে জামিন অযোগ্য গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। সাক্ষীদের আদালতে হাজির করে মামলাটি দ্রুত নিষ্পত্তি করা হবে।
২০১৫ সালের ৭ আগস্ট রাজধানীর খিলগাঁওয়ের গোড়ানের ১৬৭ নম্বর বাড়ির পঞ্চমতলায় ভাড়া বাসায় খুন হন ব্লগার নিলয়। বাসা ভাড়া নেওয়ার কথা বলে চার যুবক নিলয়ের বাসায় ঢুকে তার স্ত্রী আশামণিকে অস্ত্রের মুখে জিম্মি করে নীলয়কে হত্যা করে। সেদিন রাত সাড়ে ১১টার দিকে নিলয়ের স্ত্রী অজ্ঞাত চারজনকে আসামি করে খিলগাঁও থানায় একটি হত্যা মামলা করেন। ওইদিনই হত্যার দায় স্বীকার করে বিবৃতি দেয় জঙ্গি সংগঠন আল-কায়েদার ভারতীয় উপমহাদেশ শাখা (একিউআইএস)।
২০২০ সালের ৪ অক্টোবর মামলাটি তদন্ত শেষে বহিষ্কৃত মেজর সৈয়দ মো. জিয়াউল হক জিয়াসহ ১৩ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে চার্জশিট দাখিল করেন তদন্ত কর্মকর্তা রমনা জোনাল টিমের পুলিশ পরিদর্শক শাহ মো. আক্তারুজ্জামান ইলিয়াস। চার্জশিটভুক্ত অন্য আসামিরা হলেন- মো. মাসুম রানা, সাদ আল নাহিয়ান, মো. কাওসার হোসেন খাঁন, মো. কামাল হোসেন সরদার, মাওলানা মুফতি আব্দুল গাফফার, মো. মর্তুজা ফয়সলে সাব্বির, মো. তারেকুল আলম ওরফে তারেক, খায়রুল ইসলাম ওরফে জামিল ওরফে রিফাত ওরফে ফাহিম ওরফে জিসান, আবু সিদ্দিক সোহেল ওরফে সাকিব ওরফে সাহাব, মোজাম্মেল হোসেন সায়মন, মো. আরাফাত রহমান ও মো. শেখ আব্দুল্লাহ ওরফে জুবায়ের।
আসামিদের মধ্যে মেজর জিয়া ও সাদ আল নাহিয়ান পলাতক। গত বছরের নভেম্বরে আবু সিদ্দিক সোহেল আদালত থেকে পালিয়েছেন। আব্দুল্লাহ আল জোবায়ের, খাইরুল ইসলাম, আরাফাত রহমান সিয়াম ও মোজাম্মেল হোসেন কারাগারে। অন্য আসামিরা আছেন জামিনে।