ভারতীয় নাগরিক তায়েবী হত্যায় টিটুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল

প্রকাশিত: ৯:০০ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১০, ২০২৩

নিজস্ব প্রতিবেদক:
চট্টগ্রামে ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবী হত্যা মামলার আসামি ইয়াছিন রহমান টিটুর যাবজ্জীবন দণ্ড বহাল রেখে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনা (রিভিউ) খারিজ করে দিয়েছেন আপিল বিভাগ। এর ফলে আসামির যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রয়েছে বলে জানিয়েছেন আইনজীবীরা। নিহত জিবরানের বাবা ছিলেন পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের মহাপরিচালক। চাকরির সুবাদে জিবরান তার স্ত্রী তিতলী নন্দিনীকে নিয়ে চট্টগ্রামে বসবাস করতেন। এ মামলার সাজাপ্রাপ্ত আসামি টিটু চট্টগ্রামের শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্র“প কেডিএস গ্র“পের চেয়ারম্যান ও চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বার সভাপতি খলিলুর রহমানের ছেলে। আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শেষে আজ বৃহস্পতিবার (১০ আগস্ট) প্রধান বিচারপতি হাসান ফয়েজ সিদ্দিকীর নেতৃত্বে সাত বিচারপতির নিয়মিত ও পূর্ণাঙ্গ আপিল বেঞ্চ এ রায় দেন। আদালতে আজ টিটুর পক্ষে শুনানি করেন অ্যাডভোকেট মনসুরুল হক চৌধুরী, ব্যারিস্টার তানিয়া আমীর। আদালতে রাষ্ট্রপক্ষে শুনানি করেন ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল সুজিত চ্যাটার্জি বাপ্পী ও ডেপুটি অ্যাটর্নি জেনারেল মো. সারওয়ার হোসেন বাপ্পী।
জানা গেছে, এর আগে আপিল বিভাগের রায় পুনর্বিবেচনার (রিভিউ) আবেদনের শুনানি শেষে করা আবেদনের ওপর ২০১৭ সালের ২ ফেব্র“য়ারি শুনানি শেষ হয়েছিল। ওইদিন (তৎকালীন) প্রধান বিচারপতি সুরেন্দ্র কুমার সিনহার নেতৃত্বাধীন ছয় সদস্যের আপিল বিভাগের বেঞ্চ শুনানি শেষে বিষয়টি রায়ের জন্য অপেক্ষমাণ রাখেন। কিন্তু ওই বেঞ্চের কোন বিচারপতি বর্তমানে সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ থেকে অবসরে চলে যাওয়াই রিভিউ আবেদনটি আবারো শুনানি হয়েছে বলে নিউজ পোস্টকে জানান আইনজীবীরা।
আদালতে ওইদিন রাষ্ট্রপক্ষের শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল মো. মোমতাজ উদ্দিন ফকির। সঙ্গে ছিলেন সহকারী অ্যাটর্নি জেনারেল এস এম কামরুল হাসান। রিভিউ আবেদনকারীর পক্ষে ছিলেন জ্যেষ্ঠ আইনজীবী খন্দকার মাহবুব হোসেন ও আইনজীবী রোকনউদ্দিন মাহমুদ।
ভারতীয় নাগরিক জিবরান তায়েবী ১৯৯৯ সালের ৯ জুন চট্টগ্রামের দেওয়ানহাট এলাকায় একটি চাইনিজ রেস্তোরাঁর সামনে খুন হন। একটি বেসরকারি শিপিং কোম্পানির ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা জিবরান। ঘটনার পরদিন ডাবলমুরিং থানায় জিবরানের সহকর্মী জেমস রায় একটি মামলা দায়ের করেন। ১৯৯৯ সালের ২২ নভেম্বর এ মামলার তদন্ত কর্মকর্তা আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দেন। এই আটজন হলেন- ইয়াছিন আলী টিটু, মো. ওসমান আলী, আলী আকবর ওরফে দিদারুল আলম, জিল্লুর রহমান, জাহিদ হোসেন ওরফে কিরণ, মো. সিদ্দিক, ওমর আলী ও আলমগীর।
চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালত ২০০২ সালের ১২ এপ্রিল এ মামলায় পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দিয়ে টিটু, ওমর আলী ও আলমগীরকে খালাস দেয়। কিন্তু রাষ্ট্রপক্ষ ওই রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করলে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ হাই কোর্ট পলাতক টিটুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয়। একই সঙ্গে নিম্ন আদালতে খালাস পাওয়া ওমর আলী ও আলমগীরকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেয় হাই কোর্ট। তবে নিম্ন আদালতে যাবজ্জীবন পাওয়া মো. সিদ্দিককে উচ্চ আদালতের রায়ে খালাস দেওয়া হয়।
হাইকোর্টের রায়ের পর ২০১৬ সালের ১০ অক্টোবর চট্টগ্রামের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টিটু। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর কারাগারে থেকেই তিনি আপিলের আবেদন করেন। আদালতে সরকার পক্ষে শুনানি করেন অতিরিক্ত অ্যাটর্নি জেনারেল এম কে রহমান। জিবরানের পারিবারিক আইনজীবী মহসীন রশিদ তাকে সহায়তা করেন। অন্যদিকে টিটুর পক্ষে শুনানিতে ছিলেন (বর্তমান আইন, বিচার ও সংসদ বিষয়ক মন্ত্রী) অ্যাডভোকেট আনিসুল হক ও (বর্তমান ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের মেয়র) ব্যারিস্টার ফজলে নূর তাপস শুনানি করেন।
হত্যা মামলায় সাজাপ্রাপ্ত ইয়াছিন রহমান টিটুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ডের আদেশ বহাল রেখেছিলেন সুপ্রিম কোর্টের আপিল বিভাগ। চাঞ্চল্যকর এই হত্যার ‘পরিকল্পনাকারী’ ইয়াসিন রহমান টিটুর আপিল আবেদনের শুনানি করে প্রধান বিচারপতি মো. মোজাম্মেল হোসেনের নেতৃত্বে ছয় সদস্যের বেঞ্চ এই রায় দেন।
জানা গেছে, ২০১২ সালের ১ আগস্ট জিবরান তায়েবী হত্যা মামলায় আপিল বিভাগ সংখ্যাগরিষ্ঠের মতে টিটুর যাবজ্জীবন কারাদণ্ড বহাল রাখেন। এ রায় পুনর্বিবেচনা চেয়ে টিটু রিভিউ আবেদনটি করেছিলেন।
চট্টগ্রাম সেন্ট্রাল মেরিটাইম (বিডি) লিমিটেডের প্রিন্সিপাল রিপ্রেজেনটেটিভ হিসেবে কর্মরত থাকাকালে ১৯৯৯ সালের ৯ জুন অফিস থেকে বাসায় ফেরার পথে জিবরান তায়েবীকে আগ্রাবাদের শেখ মুজিব রোডের চুংকিং রেস্টুরেন্টের সামনে গুলি করে হত্যা করা হয়। ওই ঘটনায় পরদিন ডবলমুরিং থানায় জিবরানের এক সহকর্মী জেমস রায় মামলা করেন। জিবরানের বাবা টি এ খান পশ্চিমবঙ্গ পুলিশের তৎকালীন শীর্ষ কর্মকর্তা ছিলেন। চাকরি সূত্রে ওই সময় জিবরান তার স্ত্রী তিতলী নন্দিনীকে নিয়ে চট্টগ্রামে অবস্থান করছিলেন। অন্যদিকে আসামি টিটু শীর্ষস্থানীয় ব্যবসায়ী গ্র“প কেডিএসের চেয়ারম্যান এবং চট্টগ্রাম মেট্রোপলিটন চেম্বারের সভাপতি খলিলুর রহমানের ছেলে।
আদালত সূত্র জানায়, ওই ঘটনায় করা মামলায় ১৯৯৯ সালের ২২ নভেম্বর আটজনের বিরুদ্ধে অভিযোগপত্র দাখিল করা হয়। আট আসামি হলেন ইয়াছিন রহমান টিটু, মো. ওসমান আলী, আলী আকবর ওরফে দিদারুল আলম, জিল¬ুর রহমান, জাহিদ হোসেন ওরফে কিরণ, মো. সিদ্দিক, ওমর আলী ওরফে জাহাঙ্গীর কসাই ও আলমগীর। এ মামলায় ২০০২ সালের ১২ এপ্রিল চট্টগ্রাম মহানগর দায়রা জজ আদালতের রায়ে পাঁচজনকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। অপর আসামি টিটু, ওমর আলী ও আলমগীর খালাস পান।
সূত্রমতে, ওই রায়ের বিরুদ্ধে রাষ্ট্রপক্ষ হাইকোর্টে আপিল করে। আসামিরাও রায়ের বিরুদ্ধে আপিল করেন। আপিলের শুনানি শেষে ২০০৭ সালের ২৮ মার্চ হাইকোর্ট পলাতক টিটুকে যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেন। একই সঙ্গে নিæ আদালতের রায়ে খালাসপ্রাপ্ত ওমর আলী ওরফে জাহাঙ্গীর কসাই ও আলমগীরকেও যাবজ্জীবন কারাদণ্ড দেওয়া হয়। এ ছাড়া নিæ আদালতের রায়ে যাবজ্জীবন কারাদণ্ডপ্রাপ্ত মো. সিদ্দিক খালাস পান। হাইকোর্টের রায়ের পর ২০১১ সালের ৯ অক্টোবর দেশে ফিরে এসে পরদিন চট্টগ্রামের আদালতে আত্মসমর্পণ করেন টিটু। পরে তাঁকে জেলহাজতে পাঠান আদালত। ওই বছরের ১৭ অক্টোবর কারাগারে থেকে তিনি আপিল বিভাগে আবেদন করেন। একই বছরের ২৪ অক্টোবর বিলম্ব মার্জনা করে আদালত আপিল শুনানির জন্য বিষয়টি তালিকাভুক্তির নির্দেশ দেন। আপিলের ওপর সাত কার্যদিবস শুনানি শেষে ২০১২ সালের ১ আগস্ট রায় দেন আদালত।