দুর্গম পাহাড়ে জমি কিনে গড়ে তোলা হয় কথিত ‘ইমাম মাহমুদের কাফেলা’র আস্তানা: সিটিটিসি প্রধান

প্রকাশিত: ৬:৩৯ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৩, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
সিটিটিসির প্রধান মো. আসাদুজ্জামান বলেছেন, মৌলভীবাজারের কুলাউড়ায় ৫০ শতাংশ জমি কিনে গড়ে তোলা হয়েছিল জঙ্গি আস্তানা। সেই আস্তানা থেকে শনিবার (১২ আগস্ট) যে ১০ জনকে গ্রেফতার করা হয়েছে তাদের ‘ইমাম মাহমুদ এর কাফেলা’ নামে উদ্বুদ্ধ করে সেখানে নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। হিজরতের জন্য তাদের বলা হয়, পৃথিবীতে ইমাম মেহেদী আসার আগে যিনি আসবেন তিনি হলেন ইমাম মাহমুদ। এই বলে গ্রেফতার ব্যক্তিদের প্রশিক্ষণের জন্য সেই পাহাড়ের গুহায় নিয়ে যাওয়া হয়েছিল। আজ রোববার (১৩ আগস্ট) দুপুরে রাজধানীর মিন্টো রোডে ডিএমপির মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে তিনি এসব কথা বলেন।


সিটিটিসির প্রধান বলেন, দেশের বিভিন্ন অঞ্চল থেকে বিভিন্ন বয়সী মানুষ হিজরত করছিল। কোনো কোনো জায়গায় থানা পুলিশকে অভিভাবকরা রিপোর্ট করেছেন। তবে অধিকাংশ ক্ষেত্রে থানা পুলিশের কাছে অভিযোগ করা হয়নি বা অভিভাবকরা থানায় যাননি। এমন কয়েকটি অভিযোগ পাওয়ার পর আমরা সুনির্দিষ্টভাবে কাজ শুরু করি। তাদের মধ্যে ছিলেন সিরাজগঞ্জের এক ডাক্তার দম্পতি। যশোর জেলার অধিবাসী ঢাকার নটরডেম কলেজের এক ছাত্র ফাহিম। এছাড়া জামালপুরের এরশাদুজ্জামান শাহীন। এমন তিনজনের তথ্য আমরা প্রাথমিকভাবে পাই। এছাড়া আমাদের কাছে তথ্য ছিল যশোর, ঝিনাইদহ, মেহেরপুর, পাবনা, সিরাজগঞ্জ ও কুষ্টিয়া এলাকার কিছু পরিবার জঙ্গিবাদে উদ্বুদ্ধ হয়ে হিজরত করেছে বা হিজরত করার প্রস্তুতি নিচ্ছে। এই সংগঠনের মতাদর্শে তারা উদ্বুদ্ধ হয়েছে। এই সংগঠনের হয়ে তারা কাজ করছে এমন তথ্য আমাদের কাছে আগে থেকেই ছিল। গত ৭ আগস্ট তখন মিডিয়াকে জানানো হয়নি। সেদিন আমরা মিরপুর থেকে ১০ জঙ্গিকে গ্রেফতার করি। যাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন মহিলা। এছাড়া শিশুও ছিল।


মো. আসাদুজ্জামান বলেন, ঝিনাইদহ ও মেহেরপুর থেকে একযোগে ৭টি পরিবারের সবাই হিজরতের উদ্দেশ্যে ঢাকায় এসেছিল। তারা রিসিভারের (যিনি নিয়ে যাবেন) জন্য অপেক্ষা করছিল। তবে সেই ব্যক্তিকে আমরা গ্রেফতার করতে পারিনি। যারা এসেছিলেন তাদের গ্রেফতারের পর আমরা বেশ কিছু চাঞ্চল্যকর তথ্য পাই। গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) একইভাবে ফরহাদ নামে আমরা আরও একজনকে গ্রেফতার করি। এই ফরহাদ জঙ্গি আস্তানায় ছিল এবং সেখান থেকে ফিরে এসে তার পুরো পরিবারকে নিয়ে যাওয়ার জন্য এসেছিল। ফরহাদ তার বাবা-মা ও স্ত্রী-সন্তানকে নিয়ে তাদের সহায়-সম্পত্তি বিক্রি করে হিজরতের জন্য বের হয়েছিল।


অভিযানের বিষয়ে সিটিটিসির এই কর্মকর্তা বলেন, গ্রেফতারদের মাধ্যমে আমরা জানতে পারি মৌলভীবাজারের কুলাউড়ার একটি পাহাড়ে তাদের আস্তানা আছে। গত শুক্রবার (১১ আগস্ট) আমরা ঢাকা থেকে সোয়াত টিমসহ রওনা হই এবং একটি সফল অভিযান পরিচালনা করি। তবে এই অভিযানে গত কয়েকদিন আগে সিরাজগঞ্জ থেকে যে ডাক্তার দম্পতি হিজরত করেছিল তার মধ্যে স্বামীকে আমরা পাইনি। তার স্ত্রীকে আমরা গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। এছাড়া আরও তিনজন ছিল।
সিটিটিসি প্রধান বলেন, নটরডেমের সেই ছাত্র এবং সিরাজগঞ্জের ডাক্তার ‘ইমাম মাহমুদ’ নামে এক ব্যক্তির কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে জঙ্গিবাদের জন্য হিজরত করেছে। তবে আমরা তাদের পাইনি। তাদের বোঝানো হয়েছিল যে জিহাদের প্রাথমিক ধাপ হচ্ছে হিজরত করা। জিহাদের জন্য একটি নির্দিষ্ট স্থানে গিয়ে প্রশিক্ষণ গ্রহণ করা এবং সেই কথিত ইমাম মাহমুদের কথায় উদ্বুদ্ধ হয়ে তারা জিহাদের জন্য ঘর ছেড়েছিল। তবে মিরপুর থেকে হিজরতে যাওয়ার আগে তাদের প্রস্তুতি আমরা নস্যাৎ করতে সক্ষম হয়েছি।
তিনি বলেন, আমরা পাহাড়ি এলাকায় একটি জঙ্গি আস্তানার সন্ধান পেয়েছিলাম। গতকাল শনিবার (১২ আগস্ট) সেখানে অপারেশন হিলসাইড নামে আমরা একটি অভিযান চালিয়েছি। সেখান থেকে আমরা ১০ জনকে গ্রেফতার করতে সক্ষম হয়েছি। তাদের মধ্যে চারজন পুরুষ ও ছয়জন মহিলা। তিনজন শিশুও ছিল। তাদের আমরা হেফাজতে নিয়েছি এবং জিজ্ঞাসাবাদ করছি। কোনো প্রকার রক্তপাত ছাড়াই আমরা অভিযানটি শেষ করেছি।
মো. আসাদুজ্জামান বলেন, অভিযান শেষ করার পর আমাদের ডিসপোজাল টিম সেখান থেকে বিপুল পরিমাণ বিস্ফোরক দ্রব্য উদ্ধার করেছে। নগদ ৩ লাখ ৬১ হাজার টাকা এবং কিছু স্বর্ণালঙ্কার, ধারালো ছুরি এবং তাদের প্রশিক্ষণের জন্য আনা কমব্যাট বুট, বক্সিং বক্স, বিপুল পরিমাণ বই উদ্ধার করেছি।


ইমাম মাহমুদের কাফেলা প্রধানের বিষয়ে জানতে চাইলে সিটিটিসির প্রধান বলেন, ইমাম মাহমুদ বলে পরিচয় দেওয়া ব্যক্তি আমাদের নজরদারিতে রয়েছেন। আমরা এখনই বলতে চাচ্ছি না তার বিষয়ে। তাকে গ্রেফতারের পর আমরা বিস্তারিত জানাতে পারবো। আস্তানার বিষয়ে জানতে চাইলে তিনি বলেন, প্রাথমিক জিজ্ঞাসাবাদে গ্রেফতারকৃতরা জানায়, দুই মাস আগে আস্তানাটি তৈরি করা হয়েছিল। কথিত ইমাম মাহমুদের এক অনুসারী জনৈক জামিল কুলাউড়ার কর্মধা ইউনিয়নের টাট্টিউলি গ্রামে পাহাড়ের গহীনে প্রশিক্ষণ ক্যাম্প স্থাপনের জন্য ৫০ শতক জমি ক্রয় করে। তবে কত টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে তা জানা যায়নি। সার্বিক বিষয়গুলোই খতিয়ে দেখা হচ্ছে। এছাড়া জঙ্গিবাদ দমনে সন্দেহভাজনদের ওপর গোয়েন্দা নজরদারি বৃদ্ধির পাশাপাশি আত্মগোপনে থাকা জঙ্গিদের গ্রেফতারের চেষ্টা চলছে। তবে তারা কেউ যাতে কোথাও নৈরাজ্য বা নাশকতা সৃষ্টি করতে না পারে, সে বিষয়টি মাথায় রেখে চলমান অভিযান আরও জোরদার করা হয়েছে। গ্রেফতারকৃতদের মিরপুর মডেল থানায় সন্ত্রাস বিরোধী আইনে দায়েরকৃত মামলায় গ্রেফতার দেখিয়ে আজ রোববার বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করা হয়েছে বলেও জানিয়েছেন সিটিটিসি প্রধান মো. আসাদুজ্জামান।