ব্রিটিশ গোয়েন্দা প্রতিবেদন: বিদ্রোহের পর অর্থ সংকটে ওয়াগনার গ্রুপ, পাবেনা ক্রেমলিনের সহায়তা
নিউজ পোস্ট বিডি নিউজ পোস্ট বিডি
নিউজ পোস্ট বিডি
আন্তর্জাতিক ডেস্ক:
রাশিয়ায় জুন মাসে সশস্ত্র বিদ্রোহের পর থেকে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে কুখ্যাত ওয়াগনার বাহিনী। বর্তমানে তীব্র অর্থ সংকটেও রয়েছে গ্রুপটি। ব্রিটেনের প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় রোববার এক গোয়েন্দা প্রতিবেদনে এ কথা জানিয়েছে। খবর নিউজ উইকের।
গোয়েন্দা রিপোর্টের উদ্বৃতি দিয়ে ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, বিদ্রোহের পর যে ক্রেমলিন ওয়াগনারকে আর আর্থিক সহায়তা করবে না তার একটি বাস্তবসম্মত সম্ভাবনা রয়েছে।
জুন মাসের ২৩ এবং ২৪ তারিখে সশস্ত্র বিদ্রোহের মাধ্যমে দক্ষিণ রাশিয়ার গুরুত্বপূর্ণ সামরিক স্থাপনা সমৃদ্ধ শহর রোস্তভ-অন-দন থেকে মস্কোর দিকে অগ্রসর হয়েছিল ওয়াগনার বাহিনী। ঘটনাকে বিশেষজ্ঞরা ক্রেমলিনের স্থিতিশীলতা এবং রাষ্ট্রপতি ভ্লাদিমির পুতিনের নেতৃত্বের জন্য হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছেন৷ বেলারুশের রাষ্ট্রপতি আলেকজান্ডার লুকাশেঙ্কো ওয়াগনার নেতা ইয়েভজেনি প্রিগোজিন এবং তার সৈন্যদের বেলারুশে পাঠানোর জন্য একটি চুক্তির মধ্যস্থতা করার পরে হঠাৎই বিদ্রোহ থেমে যায়।
ওয়াগনার যোদ্ধাদের পরে বেলারুশে নির্বাসিত করার খবরও পাওয়া যায়। কিন্তু ক্রমশ তথ্য পরিবর্তিত হতে থাকে। লিথুয়ানিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয়ের একজন মুখপাত্র জুলাইয়ের শেষের দিকে নিউজউইককে বলেছিলেন, তাদের ধারণা রাশিয়া এবং বেলারুশের মিডিয়ায় প্রকাশিত খবরে ওয়াগনার সদস্যদের সংখ্যা অতিরিক্ত দেখানো হয়েছে।
চলতি মাসের শুরুর দিকে বেলারুশের রাষ্ট্রীয় সংবাদ সংস্থা লুকাশেঙ্কোর বরাত দিয়ে জানিয়েছে, বেলারুশের যোদ্ধাদের প্রশিক্ষণ দেওয়ার জন্য মিনস্কের সশস্ত্র বাহিনীতে ওয়াগনার সেনাদের নিয়োগ করা হচ্ছে।
ব্রিটিশ প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বলেছে, কিন্তু যদি রাশিয়া আর আর্থিকভাবে ওয়াগনারকে সহায়তা না করে, তাহলে দ্বিতীয় রাস্তা হলো বেলারুশের সরকার। তবে বিশাল ওয়াগনার বাহিনীকে পৃষ্ঠপোষকতা করা বেলারুশের জন্য খুব একটা কার্যকর কিছু হবে না।
বেলারুশে ওয়াগনারের উপস্থিতি পূর্ব ইউরোপের বেশ কয়েকটি ন্যাটো দেশের মধ্যে নিরাপত্তার আশঙ্কা জাগিয়েছে। সবার নজর পড়ে আছে সুওয়াল্কি গ্যাপের দিকে। সুওয়াল্কি গ্যাপ মূলত পোল্যান্ড এবং লিথুয়ানিয়ার সীমানা বরাবর কৌশলগতভাবে গুরুত্বপূর্ণ ভূখণ্ড যা বেলারুশকে কালিনিনগ্রাদ থেকে আলাদা করেছে।
লুকাশেঙ্কো জুলাইয়ের শেষের দিকে বলেছিলেন যে পোলিশ সীমান্তের কাছাকাছি অবস্থিত ওয়াগনার সৈন্যরা ওয়ারশ অঞ্চলে পশ্চিম দিকে যাওয়ার জন্য জোর দিচ্ছে এবং পোল্যান্ড বেলারুশের সীমান্তের কাছাকাছি তার সামরিক উপস্থিতি বাড়িয়েছে। পোলিশ প্রতিরক্ষামন্ত্রী, মারিউস ব্লাসজ্যাক বৃহস্পতিবার বলেছেন, সশস্ত্র বাহিনী সীমান্তে অতিরিক্ত ১০ হাজার সৈন্য মোতায়েন করবে। ওয়ারশ ইতিমধ্যেই ঘোষণা করেছিল যে তারা সীমান্তকে শক্তিশালী করতে অতিরিক্ত সেনা পাঠাবে।
বেলারুশ সাম্প্রতিক দিনগুলোতে সুওয়াল্কি গ্যাপের কাছাকাছি সামরিক মহড়া পরিচালনা করছে। মিনস্ক বলেছে, যুদ্ধ যুদ্ধ খেলা ইউক্রেন-রাশিয়ার অভিজ্ঞতার ওপর আলোকপাত করছে। সামরিক মহড়ার কথা উল্লেখ করে লিথুয়ানিয়ান প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় বুধবার এক বিবৃতিতে নিউজউইককে বলেছে, তারা রাশিয়া এবং বেলারুশের সামরিক মহড়ার অবস্থান, স্কেল, অস্ত্র এবং উদ্দেশ্যসহ সার্বিক বিষয় ক্রমাগত পর্যবেক্ষণ করা হচ্ছে। বিশেষত যখন মহড়াটি হয় ন্যাটোর বিরুদ্ধে যৌথ সামরিক পদক্ষেপ।
কিন্তু যুক্তরাজ্যের মন্ত্রণালয় চলতি মাসের শুরুতে বলেছিল, ক্রেমলিন বিদ্রোহের পরিপ্রেক্ষিতে ওয়াগনারের প্রতিস্থাপন হিসেবে পুতিনের ব্যক্তিগত সেনাবাহিনীর দিকে তাকিয়ে ছিল। পুতিন একটি নতুন ব্যবস্থা প্রবর্তন করেছেন যার কারণে রাশিয়ার ন্যাশনাল গার্ডকে দেখা যেতে পারে। এটি রোজভার্ডিয়া নামেও পরিচিত। বাহিনীটির আর্টিলারি এবং আক্রমণকারী হেলিকপ্টার রয়েছে। ব্রিটিশ মন্ত্রণালয়ের দাবি, পুতিনের প্রাক্তন দেহরক্ষীর নেতৃত্বে ‘রোজভার্ডিয়া’ আনুষ্ঠানিকভাবে রাশিয়ার সামরিক বাহিনীর সঙ্গে যুক্ত নয়। তারা সরাসরি পুতিনের কাছে রিপোর্ট করে থাকে।