দুদকের কর্মকর্তা সেজে অর্থ আত্মসাৎ চক্রের ৪ সদস্য গ্রেফতার

প্রকাশিত: ৫:৫১ অপরাহ্ণ, আগস্ট ১৭, ২০২৩

সাইফুল ইসলাম:
দুদকের ওয়েবসাইট থেকে তথ্য নিয়ে দুদক কর্মকর্তা সেজে বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্ত¡শাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারির নামে দুর্নীতির অভিযোগ এনে চিঠি প্রেরণ করে অভিযোগ নিষ্পত্তির কথা বলে মোটা অঙ্কের টাকা হাতিয়ে নিচ্ছে একটি চক্র। এ রকম একটি চক্রের ৪ সদস্যকে গ্রেফতার করেছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশের (ডিএমপি) গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগ। গ্রেফতারকৃতরা হলো- মো. সেলিম ওরফে তানভীর ইসলাম ওরফে শফিকুর রহমান, মো. সোহাগ পাটোয়ারী, আব্দুল হাই সোহাগ ও মো. আজমীর হোসেন। এ সময় তাদের হেফাজত থেকে প্রতারণায় ব্যবহৃত ৭টি মোবাইল ফোন, ১০টি সিম কার্ড, বাংলা টিভি ৭১ -এর মাউথ পিস, পত্রিকা, মানবাধিকার কমিশন ও দুর্নীতি দমন কমিশনের ৭টি ভুয়া আইডি কার্ড, দুদক কর্তৃক বিভিন্ন ব্যক্তির বিরুদ্ধে ১২টি অভিযোগ অনুসন্ধানের প্রতিবেদন ও বিভিন্ন ব্যক্তির ফোন নম্বর সম্বলিত ৩টি নোটবুক উদ্ধার করা হয়। আজ বৃহস্পতিবার (১৭ আগস্ট) সকালে ডিএমপি মিডিয়া সেন্টারে আয়োজিত এক সংবাদ সম্মেলনে এসব তথ্য জানান যুগ্ম পুলিশ কমিশনার (সাইবার অ্যান্ড স্পেশাল ক্রাইম ও ডিবি-উত্তর) খোন্দকার নুরুন্নবী।

তিনি বলেন, দুদকের নামে ঘুষ গ্রহণ ও চাঁদাবাজির অভিযোগে দুদকের উপ-পরিচালক সৈয়দ নজরুল ইসলাম গত ১৩ আগস্ট রমনা থানায় ডিজিটাল নিরাপত্তা আইনে একটি মামলা করেন। এরপর গোয়েন্দা-লালবাগ বিভাগের সঙ্ঘবদ্ধ অপরাধ ও গাড়ি চুরি প্রতিরোধ টিম ১৪ আগস্ট রাজধানীর যাত্রাবাড়ী, মুগদা ও এয়ারপোর্ট এলাকায় ধারাবাহিক অভিযান চালিয়ে এই চার প্রতারককে গ্রেফতার করে।
গোয়েন্দা কর্মকর্তা খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, গ্রেফতারকৃতদের মধ্যে সেলিম এক সময় নির্মাণ শ্রমিক হিসেবে কাজ করতো। এরপর নির্মাণ কাজের ঠিকাদার ছিলো। আর সোহাগ পাটোয়ারী ডিজে পার্টিতে কাজ করতো। এই কাজ করতে গিয়ে দালালদের সাথে তাদের সখ্যতা গড়ে ওঠে।


যুগ্ম পুলিশ কমিশনার খোন্দকার নুরুন্নবী বলেন, সোহাগ দুদকের ওয়েবসাইট থেকে বিভিন্ন ব্যক্তির নামে গঠন করা অভিযোগ, অভিযোগ থেকে দায়মুক্তি সংক্রান্ত চিঠি ডাউনলোড করে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের নামে দুর্নীতির অভিযোগে চিঠি তৈরি করে সেলিমকে পাঠাতো। সেলিম তার অপর দুই সহযোগী আব্দুল হাই ও আজমির মাধ্যমে দুদকের প্রধান কার্যালয়সহ বিভিন্ন সমন্বিত জেলা কার্যালয়ের কর্মকর্তা, বিভিন্ন পৌরসভার মেয়র, ওয়ার্ড কাউন্সিলর, চেয়ারম্যান, বিভিন্ন সরকারি ও স্বায়ত্তশাসিত প্রতিষ্ঠানের কর্মকর্তা/কর্মচারি, হিসাব রক্ষক ও সার্ভেয়ারদের মোবাইল নাম্বার সংগ্রহ করাতো। পরবর্তীতে দুদকের কমিশনার, মহাপরিচালক, পরিচালক ও উপ-পরিচালকদের নামে হোয়াটসঅ্যাপে কল দিয়ে টাকা আদায় করতো।


তিনি বলেন, প্রাথমিক পর্যায়ের কাজ করতো বলে তারা ৮০ হাজার থেকে তিন লাখ টাকা করে নিতো। এক্ষেত্রে তারা দুদক কার্যালয়ের সামনে অথবা সেগুনবাগিচার শিল্পকলা একাডেমির নাট্য মঞ্চ এলাকার আশপাশে টার্গেটকৃত ব্যক্তিদের আসতে বলে নগদ অথবা মোবাইল ফাইন্যান্সিয়াল সার্ভিসের মাধ্যমে অর্থ হাতিয়ে নিতো। গতকাল বুধবার (১৭ আগস্ট) উক্ত মামলায় গ্রেফতারকৃতদেরকে বিজ্ঞ আদালতে প্রেরণ করলে তিন দিনের পুলিশ রিমান্ড মঞ্জুর করে। এ ধরনের প্রতারণা থেকে রক্ষা পেতে দুদকের অভিযোগ সম্বলিত কোন চিঠি পেলে তা দুদক কার্যালয়ে যাচাই করার পরামর্শ দেন গোয়েন্দা পুলিশের এই কর্মকর্তা।