নিরাপদ সড়কের দাবিতে আবারও রাস্তায় শিক্ষার্থীরা

প্রকাশিত: ৮:১৪ অপরাহ্ণ, আগস্ট ২৪, ২০২৩

এসএম দেলোয়ার হোসেন:
আবারও নিরাপদ সড়কের দাবিতে রাস্তায় নেমেছে কোমলমতি শিক্ষার্থীরা। রাজধানীর হাজারীবাগের কোম্পানীঘাট বেড়িবাঁধে রাস্তা পারাপারের সময় ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইকের ধাক্কায় নবম শ্রেণির ছাত্রী নুশরাত জাহান মিম গুরুতর আহত হওয়ার প্রতিবাদে ৫ শতাধিক শিক্ষার্থী রাস্তায় নেমে বিক্ষোভ করেছে।

এসময় বিক্ষুব্ধ শিক্ষার্থীরা স্কুলের সামনে ফুটওভার ব্রিজ, স্পীডব্রেকার, জেব্রাক্রসিং, হর্ণ বাজানো নিষিদ্ধ, প্রধান সড়কে ইজিবাইক চলাচল বন্ধসহ বিভিন্ন দাবিতে সড়ক অবরোধ করে মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। তখন গুরুত্বপূর্ণ ব্যস্ততম এ সড়কে তীব্র যানজটের সৃষ্টি হলে চরম ভোগান্তিতে পড়েন যাত্রীরা। পরে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাসে এবং এইচএসসি পরীক্ষার্থীদের কেন্দ্রে যাতায়াতে দুর্ভোগের বিষয় বিবেচনায় নিয়ে একঘন্টা পর রাস্তা ছেড়ে ক্লাসে ফেরেন শিক্ষার্থীরা।


আন্দোলনরত শিক্ষার্থীরা জানায়, গত ২২ আগস্ট সকালে হাজারীবাগের কোম্পানীঘাট বেড়িবাঁধসংলগ্ন শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণির ছাত্রী নুশরাত জাহান মিম নিজ স্কুলের সামনে দিয়ে হেঁটে যাচ্ছিল। এসময় পেছন থেকে ধেয়ে আসা সেকশন টু মোহাম্মদপুর রুটে চলাচলকারী বেপরোয়া গতিতে ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক নুশরাতকে সজোরে ধাক্কা দেয়। এতে রাস্তায় ছিটকে পড়ে গুরুতর আহত হয় ওই স্কুলের ছাত্রী নুশরাত জাহান মিম। এরফলে তার হাত-পায়ে আঘাত লেগে হাঁড় ভেঙ্গে যায়। পরে সহপাঠীরা তাকে উদ্ধার করে হাসপাতালে নিয়ে যায়। বর্তমানে তার শারীরিক অবস্থা স্থিতিশীল রয়েছে। এ ঘটনার প্রতিবাদে নিরাপদ সড়কের দাবিতে আজ তারা প্রধান সড়কে নেমে শান্তি সমাবেশ ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছেন।


শিক্ষার্থীরা বলেন, ব্যস্ততম এ সড়কের পাশেই শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও তার অদুরেই রয়েছে বেগম ফজিলাতুন নেসা মুজিব মহাবিদ্যালয়। দুটি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে কোনো ফুটওভার ব্রিজ, স্পীডব্রেকার ও জেব্রাক্রসিং নেই। এরফলে বাস ট্রাকের সঙ্গে পাল্লা দিয়ে প্রতিনিয়তই চলাচল করছে উচ্চ আদালতের নিষিদ্ধ থাকা ব্যাটারিচালিত অবৈধ ইজিবাইক। সড়ক নিরাপত্তা ও যানবাহন চলাচলের নিয়ন্ত্রণ, এটা ট্রাফিক বিভাগের দায়িত্ব। আমরা আশা করবো দ্রুত সময়ের মধ্যে শিক্ষার্থীদের পথচলা নির্বিঘ্ন করতে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করবেন পুলিশের ট্রাফিক বিভাগসহ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। বেপরোয়া গতির যানবাহন চলাচলের কারণে আর যাতে কোনো শিক্ষার্থীকে হতাহতের মুখোমুখি হতে না হয়, সেজন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের সামনে ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, দুপাশে দুটি স্পীড ব্রেকার দেওয়া, জেব্রা ক্রসিং ও স্কুল শুরু এবং ছুটির সময় বিদ্যালয় প্রাঙ্গনে ট্রাফিক পুলিশ নিয়োজিত করার দাবি জানিয়েছেন শিক্ষার্থীরা।
এদিকে ওই সড়কে চলাচলকারী ইজিবাইক চালক সোহেল, মনির, রাসেল, আবুল, রুবেল ও রফিকসহ আরও কয়েকজন জানান, নবাবগঞ্জ সেকশন থেকে মোহাম্মদপুর বসিলার চৌরাস্তা মোড় পর্যন্ত প্রতিদিন অন্তত ২ শতাধিক ইজিবাইক চলাচল করে। প্রতিটি ইজিবাইক থেকে প্রতিদিন ২ হাজার টাকা করে চাঁদা তুলে নেয় ট্রাফিক পুলিশের নিয়োজিত রোজিনা বাবুসহ কয়েকজন লাইনম্যান। টাকা না দিলে এসব গাড়ি ব্যস্ততম এই বেড়িবাঁধের সড়কে চলতে দেয়না ট্রাফিক পুলিশ। তবে সাংবাদিক পরিচয় জানতে পেরে এ বিষয়ে সেকশন ট্রাফিক পুলিশ বক্সের দায়িত্বে থাকা ট্রাফিক পুলিশের কেউই কোনো মন্তব্য করতে রাজি হননি। তারা সাফ জানিয়ে দেন বিষয়টি উপর মহল ভালো বলতে পারবে। সেখানে যোগাযোগ করার পরামর্শ দেন তারা।


শিক্ষার্থীদের বিক্ষোভের বিষয়ে জানতে চাইলে শহীদ শেখ রাসেল সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সেলিনা আখতার বিষয়টি নিশ্চিত করে নিউজ পোস্টকে বলেন, গত ২২ আগস্ট আমাদের স্কুলের নবম শ্রেণির ছাত্রী নুশরাত জাহান মিম রাস্তা পারাপারের সময় ব্যাটারিচালিত ইজিবাইকের ধাক্কায় গুরুতর আহত হয়। এর প্রতিবাদেই আজ বৃহস্পতিবার সকালে আহতের সহপাঠিসহ অন্যান্য শিক্ষার্থীরা রাস্তায় নেমে শান্তিপূর্ণ মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেছে। শিক্ষার্থীরা ফুটওভার ব্রিজ নির্মাণ, স্পীডব্রেকার তৈরি ও জেব্রাক্রসিং তৈরির ৩টি দাবিতে সমাবেশ করে। শিক্ষার্থীদের দাবি পূরণের আশ্বাস দিলে তারা আবার ক্লাসে ফিরে আসে। তিনি আরও বলেন, শিক্ষার্থীরা যেসব দাবি জানিয়েছে, তা উল্লেখ করে শিক্ষার্থীদের স্কুলে আসা-যাওয়া নিশ্চিতে সড়ক দুর্ঘটনা এড়াতে আমি প্রতিষ্ঠানের প্রধান হিসেবে ডিএসসিসি, থানা শিক্ষা অফিসার, এবং অধিদপ্তরকে চিঠি দিয়েছি। অবৈধ ইজিবাইক চলাচল বন্ধের বিষয়ে জানতে চাইলে প্রধান শিক্ষিকা বলেন, এটা পুলিশ প্রশাসন ও আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর বিষয়। আমার মনে হয়, পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ চাইলে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করতে পারে।

এ ব্যাপারে জানতে চেয়ে হাজারীবাগ থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আহাদ আলীর মুঠোফোনে একাধিকবার যোগাযোগ করা হলেও তার ফোন বন্ধ পাওয়া যায়। ফলে এ বিষয়ে তার কোনো বক্তব্য মেলেনি। তবে থানার এক কর্মকর্তা বলেন, শিক্ষার্থীদের আন্দোলনের বিষয়টি আমি শুনেছি। আমাদের গ্রুপেও দেখেছি। তবে এ বিষয়ে থানার ঊর্ধ্বতন কর্মকর্তা এমনকি পুলিশের ট্রাফিক বিভাগ ভালো বলতে পারবেন বলে জানান পুলিশের ওই কর্মকর্তা।